শরৎ এসেছে। দেবী আসছেন। ঘনিয়ে এসেছে ফসল পাকার সময়ও। কয়েক মাসের মধ্যেই শস্যে গোলা ভরে উঠবে। দুর্গাকে তাই শস্যের দেবী শাকম্ভরী রূপেও পুজো করা হয়। যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লি দেবীকে এ বার এই রূপেই আরাধনা করবে। তাঁদের ভাবনা, ‘অক্ষয়কলসে অন্নদার আবাহন’। কলসের আকারে মণ্ডপ। মণ্ডপে এবং দেবীর অলঙ্কারে থাকছে নানা শস্যের প্রতীক। দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই। তার বদলে থাকছে নানা শাক। ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোর ব্যবহার।
ভারতের জাতীয় পতাকাই প্রতাপাদিত্য রোডের চতুষ্কোণ পার্কের শারদীয়া সম্মিলনীর ভাবনা। লোহার পাইপ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। বাইরে যে কোন দিক থেকে মণ্ডপ দেখলেই জাতীয় পতাকার তিনটি রং দেখা যাবে। বাইরে থাকছে অনেক আয়নাও। মণ্ডপের ভিতরে ঢুকলে মনে হবে পিরামিডের মতো। দেখা যাবে জাতীয় পতাকার উপরে আলোর খেলা। প্রতিমাও লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
আর পাঁচটা শিশুর মতো অটিজমে আক্রান্ত শিশুদেরও রয়েছে কল্পনার জগত। পুঁটিয়ারী সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বারের ভাবনায় উঠে আসছে তাঁদের সেই কল্পনার জগত। হুইলচেয়ার মতো দেখতে প্রবেশ পথ পেরিয়ে ঢুকতে হবে ষষ্ঠকোণ এই মণ্ডপে। সারা মণ্ডপ জুড়ে প্রজাপতি, পক্ষীরাজ আর পাখি। দেখা যাবে ছোটরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। কেউ বা দোলনায় দুলছে। রয়েছে অ্যাকোয়ারিয়ামও। এই সব ভাস্কর্যই ল্যাটেরাট পাথরের তৈরি। সবই থাকবে ঝুলন্ত অবস্থায়। উদ্যোক্তাদের দাবি, এর জন্য প্রায় ২০ লক্ষ পাথরের টুকরো ব্যবহার করা হয়েছে। সাবেক প্রতিমা।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই বিষয়কেই এ বার বেছে নিয়েছে শিবতলার গোলাঘাটা সম্মিলনী। বারকোসে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তেরো পার্বণের কথা। স্বস্তিক চিহ্নের আকৃতির মণ্ডপ। মণ্ডপ সেজে উঠছে কাঠের নানা নকশায়। মাটির মূর্তিকেও মনে হবে কাঠের তৈরি।
প্রথম ফসল ওঠার উৎসব নবান্ন। সেই ফসলের কিছু অংশ দেবীকে নিবেদন করে বছরভর সুখ, সমৃদ্ধির প্রার্থনা করা হয়। ‘নবান্ন’ই এ বার বেলঘরিয়ার ওল্ড নিমতা রোডের রানিপার্ক সর্বজনীনের ভাবনা। গোলার আকারে মণ্ডপ। চার পাশে আরও চারটি ছোট গোলা। থাকবে দু’টি নবান্নের মঞ্চ, ঢেঁকি, গরুর গাড়ির চাকা, কাকতাড়ুয়ার মতো গ্রামজীবনের চেনা অনুষঙ্গ। একচালা প্রতিমা। চালচিত্রে আঁকা থাকবে চাষিদের জীবনযাত্রা, কুলো, ঝাঁপি। আলপনা দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হবে। আলো ও শব্দে ফুটিয়ে তোলা হবে গ্রামের আবহ।
কুমোরপাড়া থেকে মণ্ডপ দুর্গাপুজোর এই পর্বটিই তুলে ধরা হচ্ছে লেকটাউনের প্রগতি পল্লি অধিবাসীবৃন্দের পুজোয়। কুমোররা প্রতিমা তৈরি করছেন, উদ্যোক্তারা তা মণ্ডপে নিয়ে আসছেন, পাড়ার মহিলারা মাকে বরণ করছেন এমন নানা খণ্ডদৃশ্যে সেজে উঠছে বাড়ির আকারে মণ্ডপ। লরির ভিতরে প্রতিমা আছে। এলইডি আলোয় সাজছে মণ্ডপ।
শব্দ বিকট হতে পার। হতে পারে শ্রুতিমধুরও। শব্দদূষণে আক্রান্ত এ সময়ে শ্রুতিমধুর শব্দের খোঁজে মেতেছে কাঁকুড়গাছির মিতালি সঙঘ। তাই বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছে ঘণ্টাকে। তাঁদের ভাবনা ‘শব্দতরঙ্গ’। ৪০ ফুট উঁচু ঘণ্টার আকারে মূল মণ্ডপ। ঘণ্টার আকারের নাটমন্দির পেরিয়ে এখানে ঢুকতে হবে। ভিতরে ঝোলানো থাকবে নানা দেশের নানা রকম ঘণ্টা। মাটি, শোলা, ফাইবার, থার্মোকল দিয়ে এ সব ঘণ্টা তৈরি হয়েছে। মূল মণ্ডপে ঢুকে যাবে লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিক ঘণ্টার উপরেই দাঁড়িয়ে আছেন। দেবী দাঁড়িয়ে আছেন একাধিক সিংহ ও মহিষের উপরে। দেবী মূর্তির তলায়ও রয়েছে একটি ঘণ্টা। আবহে নানা ঘণ্টার ধ্বনি শোনা যাবে। |