উৎসবের শহরে হাজির
‘পরিযায়ী’ কেপমারেরা
ড়দিনের উৎসবে তারা থাকে গোয়ায়। মুম্বইয়ে গণেশপুজো এবং কেরলে ওনাম উৎসব সেরে দুর্গাপুজোর আগে তারা হাজির হয়েছে কলকাতায়। তাদের নিয়েই এখন ব্যতিব্যস্ত শহরের পুলিশকর্তারা। কারণ, কেনাকাটা করতে বেরিয়ে এই সব কেপমারদের খপ্পরে পড়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন অনেকেই।
কী ভাবে টের পাওয়া গেল শহরে কেপমারদের উপস্থিতি?
নিউ মার্কেট থানার এক অফিসার জানিয়েছেন, দিন সাতেক আগে লিন্ডসে স্ট্রিটে শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল একটি গাড়ি। গাড়ির চালককে রেখে পেশায় ব্যবসায়ী গুজরাতি মহিলা শপিং মলে ঢোকেন। গাড়িতে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন চালক। তাঁর পিছনের আসনে একটি ব্যাগে ছিল নগদ ৮০ হাজার টাকা ও দামি একটি মোবাইল ফোন। হঠাৎ এক যুবক গাড়ির সামনে এসে চালককে দেখালেন, রাস্তায় কয়েকটি দশ টাকার নোট পড়ে রয়েছে। চালক সেই নোটগুলি তুলে এনে ফের গাড়িতে উঠলেন। আর তখনই দেখলেন, পিছনের আসনে রাখা সেই ব্যাগটি নেই! একই ভাবে জামার পিছনে আলকাতরা লেগে রয়েছে বলে উত্তর কলকাতার এক বৃদ্ধকে বুঝিয়েছিল এক যুবক। বৃদ্ধ তখন ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফিরছেন। যুবকের কথা শুনে হাতের ব্যাগটি পাশের বাড়ির রকে রেখে আলকাতরার দাগ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। আর তার মধ্যেই টাকার ব্যাগ উধাও!
ছকটা সহজ। কখনও টাকা, কখনও আলকাতরা, কখনও চুলকানি পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করে লোককে অন্যমনস্ক করা হচ্ছে প্রথমে। আর সেই সুযোগেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে টাকা, ফোন ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র। সম্প্রতি নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, লিন্ডসে স্ট্রিট, বড়বাজার থেকে এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ আসতে শুরু করায় গোয়েন্দারা বুঝতে পেরেছেন, এসে পড়েছে কেপমারেরা।
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক
গোয়েন্দারা জানান, কেপমারেরা ডাকাতদের মতো দুষ্কৃতী নয়। আবার ছিঁচকে চোরও নয়। রিভলভার, ছুরি, ভোজালি, সিঁদকাঠি এ সব কিছুই থাকে না তাদের। স্রেফ মগজাস্ত্র খাটিয়ে কৌশলে তারা মানুষকে বোকা বানায়। তার পরে হাতিয়ে নেয় ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনো অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধের পেনশনের টাকা, উচ্চবিত্ত মহিলার বেশ কয়েক হাজার টাকার শাড়ি, এটিএম কাউন্টার-ফেরত যুবকের মানিব্যাগ।
মাস আড়াই আগে বৌবাজার থানা এলাকা থেকে শেক্সপিয়র সরণির এক বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর আড়াই কিলো সোনার বাটও হাতিয়েছে কেপমারের দল। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ওই কেপমারদের ধরতে দক্ষিণ ভারতের একটি শহরে অন্তত তিন বার হানা দেওয়া হয়েছিল। কাউকেই ধরা যায়নি।” তদন্তকারীরা জানান, ওই দলটি তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডের দশ-বারোটি দল কলকাতায় কেপমারি শুরু করেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার কয়েক জন দুষ্কৃতীকে কেপমারিতে জড়িত সন্দেহে পাকড়াও করেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু সেই দুষ্কৃতীরা আসল কেপমারদের বিষয়ে কোনও হদিস দিতে পারেনি।
লালবাজারের নজরদারি (ওয়াচ) শাখার এক গোয়েন্দা জানান, দেশের কোথায় কোন সময়ে কী উৎসব হয়, কেপমারদের তা মুখস্থ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উৎসবের মুখে বর্ধমান, সিউড়ি, রামপুরহাট, চুঁচুড়া, লিলুয়ায় ডেরা বাঁধে কেপমারেরা। তিন, পাঁচ বা সাত জন দলে কেপমারেরা ‘শিকার’ খোঁজা, শিকারের সঙ্গীর উপরে নজর রাখা, শিকারকে অন্যমনস্ক করা, এলাকার উপরে নজর রাখা, মাল পাচার করা ইত্যাদি দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তা জানাচ্ছেন, এই কেপমারেরা কলকাতার রাস্তাঘাট হাতের তালুর মতো চেনে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে স্থানীয় ‘চিনতি চোর’-দের (পরিচিত চোর)। তারাই কেপমারদের চেনায় ‘পাতলি গলি’ (পালানোর রাস্তা)। কোন কোন এলাকায় মোটা টাকার লেনদেন হয়, কোথায় কোথায় বড় শপিং মল রয়েছে সব তাদের একেবারে নখদর্পণে।
কলকাতার ক্ষেত্রে বড়বাজার, নিউ মার্কেট, বৌবাজার, শেক্সপিয়র সরণি, গড়িয়াহাট, হেয়ার স্ট্রিটের মতো এলাকায় কেপমারদের দৌরাত্ম্য বেশি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, পার্কিং লট, শপিং মল, ব্যাঙ্ক, দূরপাল্লার ট্রেনের রিজার্ভেশন কাউন্টার এক কথায় যেখানেই মোটা টাকার লেনদেন, সেখানেই তৎপর কেপমারেরা। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা এই কেপমারদের ধরতে অন্য শহরের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁদের থেকে বেশ কয়েক জন কেপমারের ছবি ও মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের সন্দেহ, কেপমারদের কাছে কমপক্ষে সাত-আটটি সিম কার্ড থাকে। দুষ্কর্মের পরে কোন সিম কার্ড তারা ব্যবহার করছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই জানা যাচ্ছে না। এমনও দেখা যাচ্ছে, বছরে মাত্র এক বার কোনও একটি সিম কার্ড শুধু কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্যবহার করেছে কেপমারেরা। তাই সিম কার্ডের সূত্র ধরে তাদের হদিস পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য বলে ওই কর্তা মনে করেন। মগজাস্ত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে তাই শুধুমাত্র মগজাস্ত্রই ভরসা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.