|
|
|
|
|
দু’মাসে মৃত্যু ৪৪ জন শ্রমিকের |
কাতার বিশ্বকাপে কলঙ্কিত
মানবাধিকার, উদ্বেগে ফিফা
সংবাদসংস্থা • দোহা |
|
এ যেন প্রদীপের তলায় অন্ধকার। আট বছর পরে দেশের মাটিতে বসবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। কিন্তু তার আগে বিশ্বকাপ সংগঠন নিয়ে একের পর এক বিতর্কে জেরবার মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।
এ বার অভিযোগ, শ্রমিক নির্যাতনের। মানবাধিকার হরণের। যা স্বীকার করে নিয়েছেন কাতারে বিশ্বকাপ সংগঠনের সুপ্রিম কমিটি। ফিফাও পুরো ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নেপাল থেকে কাজ করতে যাওয়া অর্থনৈতিক ভাবে দরিদ্র শ্রমিকেরা। বিশ্বকাপ আয়োজনের স্টিম রোলারে পিষ্ট তাঁদের জীবন এবং ভবিষ্যৎ।
মারধর, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, কাজ করিয়ে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ তুলে দূতাবাসের শরণাপন্ন হয়েছেন কাতারে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের এই বৃহত্তর গোষ্ঠী। এখানেই শেষ নয় অভিযোগের। পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অসহ্য গরমে টানা ৪৮ ঘণ্টা কাজ করানো, পানীয় জল খেতে না দেওয়া। দিলেও চড়া দামে তা নেপালি শ্রমিকদের কাছে বিক্রি-সহ নানা অভিযোগ সামনে এসেছে।
নেপালি দূতাবাস সূত্রে খবর, বিশ্বকাপ উপলক্ষে নয়টি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম-সহ, বিমানবন্দর, রাস্তাঘাট, হোটেল, রেলপথ নির্মাণে এই মুহূর্তে কাতারে নিযুক্ত রয়েছে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া প্রায় ১৫ লক্ষ শ্রমিক। তার চল্লিশ শতাংশই নেপালি। যাঁরা দেশে ধারদেনা করে মোটা টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়ে এ দেশে কাজ করতে এসেছেন।
অভিযোগের তির মূল ঠিকাদার সংস্থা থেকে দায়িত্ব পাওয়া ছোট ছোট ঠিকাদার সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। কাতারে এই ‘আধুনিক দাসপ্রথা’ বন্ধের জন্য সে দেশের শ্রমকল্যাণ বিভাগ এবং ফিফার হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছে তারা। একই সঙ্গে তাদের দাবি, ইউরোপের যে সব সংস্থা কাতারে নির্মাণ কার্যে জড়িত তারা এই অমানবিক কাজকর্মে নেই।
জুনের চার তারিখ থেকে অগস্টের আট তারিখ এই দু’মাসে কাতারে এই সব ঠিকাদার সংস্থার হয়ে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের। চলতি মাসে প্রত্যেক দিনই মরু শহরের কোথাও না কোথাও আকস্মিক হৃদ্রোগ, দুর্ঘটনায় নেপালি শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর নথিবদ্ধ হয়েছে দোহার নেপাল দূতাবাসে।
২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা কাতারের লুসাইল শহরে। ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে এখান সেখানে চলছে নগরায়ণের কাজ। তার মধ্যে রয়েছে নব্বই হাজার আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম নির্মাণ। সেখানে কর্মরত নেপালের নাগরিক হরি বলছেন, “এখানে আসাটাই ভুল। আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। কিন্তু নির্মাণ সংস্থা যেতে দিচ্ছে না। ওরা আমাদের প্রায় পশুর মতো ব্যবহার করছে।”
নেপাল থেকে কাতারে কাজ করতে আসা আর এক শ্রমিক রামকুমার মাহারা বলছেন, “খালি পেটে টানা দু’দিন কখনও কখনও কাজ করায়। প্রতিবাদ করায় প্রথমে পেটে লাথি মারে সংস্থার ম্যানেজার। তার পরেই বেতন বন্ধ করে দেয়। শেষে বন্ধুদের কাছ থেকে খাবার ভিক্ষা করে দিন কেটেছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক জনের অভিজ্ঞতা আরও মর্মস্পর্শী। “কোম্পানি দু’মাস বেতন না দিয়ে বাধ্য করছে যাতে কাজ ছেড়ে দেই। কিন্তু যাব কোথায়? ওরা তো পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে আই কার্ডটাও দেয়নি। এখন পুলিশ ধরলে গোটা জীবনটা এখানকার জেলে পচতে হবে।”
কাতারের নেপালি রাষ্ট্রদূত মায়া কুমারী শর্মা গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এটা ‘ওপেন জেল’ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
অভিযোগ পাওয়ার পরেই দিন কয়েক আগে আসরে নেমেছে কাতারের শ্রম দফতর। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, কাতারেরই একটা বড় অংশের দাবি, পশ্চিমী দুনিয়া শুরুর দিন থেকেই চায় না, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করুক। তাই এ বার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আসরে নেমেছে তারা। |
|
|
|
|
|