|
|
|
|
খাকুড়দা |
উদ্বোধনে সেতুর থেকে বিপ্লবীর নাম উধাও, হতাশা
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
শিলান্যাসের সময় সেতুর নামকরণ করা হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের বীরযোদ্ধা হেমচন্দ্র কানুনগোর নামে। অথচ উদ্বোধনের সময় শিলার ফলকে হারিয়ে গেল হেম কানুনগোর নাম। শুধু রইল ‘খাকুড়দা সেতু’। বুধবার ঝাড়গ্রামের শিলদার সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সেতুর উদ্বোধন করেন। সেই উপলক্ষে দাঁতন-২ ব্লকের ধনেশ্বরপুরে বিডিও অফিসের কাছেও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু কোথাওই বাগুই খালের উপর ওই সেতুর নামে হেম কানুনগোর নাম উচ্চারিত হয়নি। তাতেই হতাশ এলাকার বাসিন্দারা।
প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, হতাশার কোনও কারণ নেই। সেতুর নাম হেম কানুনগোর নামেই রয়েছে। কোনও কারণে উদ্বোধনে তার উল্লেখ করা হয়নি। পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র শ্যামল দাস বলেন, “খাকুড়দা বলে এলাকাটি পরিচিত বলেই ওই নাম উদ্বোধনের ফলকে ছিল। তবে আগামী দিনে ‘হেমচন্দ্র কানুনগো সেতু’ নামটিই থাকবে।” পূর্ত দফতরের খড়্গপুরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র তপন সাহার যুক্তি, “খুব কম সময়ে ব্যবস্থা করায় হয়তো ভুল করে খাকুড়দা সেতু নামটি থেকে গিয়েছে।”
নারায়ণগড় ব্লকের খাকুড়দা ও দাঁতন-২ ব্লকের ধনেশ্বরপুরের মাঝে বাগুই খালের উপর একটি সেতু ছিলই। খড়্গপুর থেকে দিঘা যাওয়ার ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর ওই সেতুটি জীর্ণ হয়ে পড়ায় ঠিক হয় পাশেই নতুন করে একটি সেতু নির্মাণ হবে। সেই মতো ২০১০ সালের শেষ দিকে ‘ওয়ার্ক ওর্ডার’ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী ও জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে সেতুর শিলান্যাস হয়। তখনই সেতুর নাম এলাকার বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর নামে করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেগের কথা মাথায় রেখে সেতু থেকে ৫০মিটার দূরে হেম কানুনগোর একটি মূর্তিও বসানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুর কাজও শেষ হয়েছে। বুধবার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলদার সভা থেকে সেতুর উদ্বোধন করেন। আর এলাকায় দাঁড়িয়ে ফিতে কেটে সেতুর উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সদস্য তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শৈবাল গিরি। উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগড়ের বিডিও লীনা মণ্ডল ও দাঁতন-২ ব্লকের বিডিও রুনু রায়। কিন্তু কোথাও এক বারের জন্যও হেমচন্দ্র কানুনগোর নাম উচ্চারিত না হওয়ায় এলাকার মানুষ আহত। খাকুড়দার বাসিন্দা ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক গৌরহরি মণ্ডলের কথায়, “হেমচন্দ্র কানুনগো নামটা এখানকার মানুষের কাছে একটা আলাদা অনুভূতির সঞ্চার করে। এলাকার বহু প্রতিষ্ঠানের নামও এই বিপ্লবীর নামেই রয়েছে। তাই শিলান্যাসের সময়ে যে নামটি ছিল সেটি উদ্বোধনেও রাখা উচিত ছিল। আশা করব আগামী দিনে ওই নামটিই থাকবে।”
এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। দাঁতনের সিপিআই বিধায়ক অরুণ মহাপাত্রের কটাক্ষ, “বাম আমলে ওই বিপ্লবীর নামে সেতুর শিলান্যাস হয়েছিল। সেই নাম বদলে দেওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়। আমাকেও তো বিধায়ক হিসেবে অনুষ্ঠানে ডাকেনি।” সিপিআইয়ের ধনেশ্বরপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল পট্টনায়েক বলেন, “পর্যালোচনা না করে মানুষের আবেগকে গুরুত্ব না দেওয়ায় এ সব হচ্ছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শৈবাল গিরির অবশ্য বক্তব্য, “এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে এটাই বড় কথা। এখন পান থেকে চুন খসলে যদি সমালোচনা হয় তবে কিছু বলার নেই।” |
|
|
|
|
|