সম্পাদকীয় ১...
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
জীবননদে নীর যে চিরস্থির নহে, তাহা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা মোক্ষম টের পাইয়াছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর পুরভোটেও সবুজের অভিযান অব্যাহত। বর্ধমান, পানিহাটি, চাকদহের ন্যায় ‘লাল দুর্গ’ বামফ্রন্টের হাতছাড়া। দল নির্বাচন বয়কট করুক আর না-ই করুক, ফল পৃথক হয় নাই। পায়ের তলার মাটি যে সরিয়াছে, নির্বাচনের ফলাফল তার একটি প্রমাণমাত্র। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর প্রায় আড়াই বৎসর কাটিয়া গেল, সি পি আই এম এখনও বিরোধী দল হিসাবে একটি আঁচড়ও কাটিতে পারে নাই। স্বাভাবিক দলে এই অবস্থায় নেতৃত্ব লইয়া প্রশ্ন উঠিত। কিন্তু, এই দলটির নাম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)। অস্ত্র যাহাকে ছেদ করিতে পারে না, অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, জল যাহাকে ভিজাইতে পারে না, বায়ু যাহাকে শোষণ করিতে পারে না, এবং নির্বাচনী ভরাডুবিসহ সার্বিক ব্যর্থতা যাহাকে ছুঁইতে পারে না, তাহারই নাম কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব। দৃশ্যতই, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্র হইতে লোপ পাইবার আশঙ্কাও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অন্দরমহলে পরিবর্তনের সুবাতাস বহাইতে পারে নাই। শঙ্কা হয়, ‘পরিবর্তন’ কথাটিকেই তাঁহারা রাজনৈতিক শত্রু ভাবিয়া বসেন নাই তো? কথাটি কিন্তু হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সম্পত্তি নহে। পরিবর্তনে সি পি আই এম-এরও বিলক্ষণ অধিকার আছে।
তবে, অনুমান করা চলে, প্রশ্নটি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও উঠিয়াছে। আরও অনুমান, কোনও সন্তোষজনক উত্তর এখনও পাওয়া যায় নাই। অনুমানটির উৎস সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ক্ষিপ্র এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া। সোমনাথবাবু সতর্ক করিয়া দিয়াছেন, তাঁহার মুখে যেন কথা না বসানো হয়। নাতিপ্রচ্ছন্ন রূপক ব্যবহার করিয়া সি পি আই এম-এর নেতৃত্বে বদল ঘটাইবার যে প্রস্তাব তিনি করিয়াছেন, তাহা যথেষ্ট, তাহার উপর আর ‘কথা বসানো’র প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালের সি পি আই এম সম্ভবত সোমনাথবাবুর এই মন্তব্য সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিত। ইহা ২০১৩। ইতিমধ্যে মন্বন্তর ঘটিয়া গিয়াছে। অতএব ত্রস্ত সি পি আই এম তড়িঘড়ি জানাইয়াছে, বাজারে নেতা মেলে না যে ভাড়া করিয়া আনিয়া দলের শীর্ষে বসাইয়া দেওয়া যাইবে! বাজারের এই ঘাটতি শ্যামলবাবু ঠিকই ধরিয়াছেন। প্রশ্ন হইতেছে, নেতা খুঁজিতে পার্টিকে বাজারে যাইতে হইবে কেন? সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থাকিয়াও যদি নেতৃত্বের তরুণ প্রজন্ম তৈরি না হয়, তবে সেই দলের ভবিষ্যৎ কী? না কি, স্থিতাবস্থায় হাত পড়িলে গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে দলটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাতীত হইবে বলিয়াই তাঁহাদের আশঙ্কা?
প্রশ্নটি কোনও এক বা একাধিক নেতাকে লইয়া নহে। বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা সূর্যকান্ত মিশ্র নামমাত্র— তাঁহাদের পরিবর্তে অন্য নেতারা থাকিলেও যে পরিস্থিতি ভিন্ন হইত, এমন দাবি করিতে সাহস হয় না। এক বার ক্ষমতা পাইলে আমৃত্যু তাহা আঁকড়াইয়া থাকিবার অভ্যাস এক দিকে কমিউনিস্টসুলভ, অন্য দিকে ভারতীয়। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এই দুই ধারার মোহনার সৃষ্টি হইয়াছে। নেতা সফল হইলেও একটি সময়ের পর তাঁহার সরিয়া যাওয়াই বিধেয়। চিনের কমিউনিস্ট পার্টিতেও এখন দশ বৎসর অন্তর ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তিনি যতই সফল হউন না কেন, আট বৎসরের বেশি ক্ষমতায় থাকিতে পারেন না। আর, পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই এম নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত রকম ব্যর্থ। তাহার সাম্প্রতিকতম প্রমাণ বর্ধমান ও পানিহাটি পুর নির্বাচন ‘বয়কট’। পরাজয় নিশ্চিত জানিয়া ময়দান ছাড়িয়া পলাইবার সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক হইয়া থাকিবে। ইহার পরেও কীসের অপেক্ষা? আরও ভুলের? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল যে ভাল হয় না, এই রাজ্য তাহা হাড়েমজ্জায় জানে। শিখিবার জন্য আলিমুদ্দিনকে কি নিদেনপক্ষে পঁচিশ বার ঠেকিতে হইবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.