একে অপরকে মুখোমুখি দেখেননি। টেলিফোনেও কথা হয়নি কারও। কিন্তু ‘অদেখা’ সেই সব বন্ধুদের চেষ্টাতেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন বছর চব্বিশের রুদ্র দে।
টুইটার-এ চেনা রুদ্রের চিকিৎসায় কুড়ি লক্ষ টাকা জোগাড় করলেন ওই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের বন্ধুরাই।
জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন জামশেদপুরের সি ডি রোডের ওই তরুণ। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, গুড়গাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালই তাঁকে সুস্থ করতে পারে। প্রয়োজন ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। টাকার চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রুদ্রর বাবা নীলোৎপলবাবু, মা গোপাদেবী।
এমনই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়ান রুদ্রের ‘টুইটার-বন্ধু’রা। তাঁদের চেষ্টায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জোগাড় হয় প্রয়োজনীয় টাকা। বুধবার জামশেদপুর থেকে ‘এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে’ গুড়গাঁওয়ের সেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রুদ্রকে। চিকিৎসায় সাড়া দেন তিনি।
কী ভাবে জোগাড় হল অত টাকা?
রুদ্রের জন্য টাকা জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেন লখনউয়ের অনিল তিওয়ারি। দু’জনের আলাপ হয়েছিল টুইটারেই। আইটি বিশেষজ্ঞ অনিল বলেন, “রুদ্র যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তা জানতাম না। কয়েক দিন ধরে ওকে টুইটারে দেখছিলাম না। পরে, টুইটারে দেখতে পাই রুদ্রর আরোগ্য কামনা করে টুইট রয়েছে।” জামশেদপুরে তাঁর এক বন্ধুকে ফোন করেন অনিল। তাঁকে হাসপাতালেও খোঁজ নিতে পাঠান। খোঁজখবর নিয়ে অনিলের সেই বন্ধু রুদ্রের অসুস্থতার খবর জানান। চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা দরকার তা-ও শোনেন অনিল। |
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে রুদ্রকে। বৃহস্পতিবার
জামশেদপুরের সোনারি বিমানবন্দরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী। |
জামশেদপুরে অনিলের সেই বন্ধু আনন্দ ত্রিবেদী ‘নরেন্দ্র মোদী ইউথ ব্রিগেড’-এর সদস্য। রুদ্রর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে মঙ্গলবার দুপুরে সংগঠনের ওয়েবসাইটে আর্জি জানানো হয়। দেওয়া হয় রুদ্রর বাবার অ্যাকাউন্ট নম্বর। ঘণ্টাতিনেকেই দেশের নানা প্রান্ত এমনকী বাহরিন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব-সহ অন্য দেশ থেকে সাহায্যের হাত এগিয়ে আসে।
এর পরই গুড়গাঁওয়ের বেসরকারি হাসপাতালে রুদ্রকে ভর্তি করানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তাঁর টুইটার-বন্ধুরা। প্রথমে ইন্টারনেটে হাসপাতালে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুড়গাঁওয়ের বাসিন্দা, রুদ্রের টুইটার-বন্ধু মীনাক্ষী সিংহ নিজেই যান হাসপাতালে। নীলোৎপলবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তত ক্ষণে দেশ-বিদেশ থেকে তাঁর ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা চলে এসেছে। প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে ভাড়া নেওয়া এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে জামশেদপুর থেকে গুড়গাঁও নিয়ে যাওয়া হয় রুদ্রকে।
জামশেদপুরের ওই সংগঠনের সদস্য সতীশ সিংহ বলেন, “সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকে অনেকে ভুল কাজে ব্যবহার করে। রুদ্রকে বাঁচাতে আমরা সেটার সাহায্য নিয়েছি। অন্য কোনও ভাবে টাকার জোগাড় করতে গেলে অনেক সময় লাগত। এটা বোঝা গেল, বন্ধুত্বের জন্য একে অন্যকে সব সময় মুখোমুখি চেনা জরুরি নয়। অন্তরের টানটাই আসল।”
গোপাদেবী বলছেন, “এ ভাবে যে ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে ভাবতে পারিনি। আজ দুপুরে রুদ্র কথাও বলেছে। আমার ছেলেকে না-চিনেও যাঁরা সাহায্যের হাত এগিয়েছেন তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।” |