গত পাঁচ মাস ধরে উত্তর দিনাজপুর জেলার রূপাহার থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল। আন্দোলন করেও মেরামতির কাজ শুরু না হওয়ায় এবারে রায়গঞ্জ-ডালখোলা রুটে বেসরকারি বাস বন্ধ করে দিলেন বাস মালিকেরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ওই রুটে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই রুট দিয়েই রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটের বাস যাতায়াত করে। বেসরকারি বাস ৫০ কিমি দূরের ডালখোলার পূর্ণিয়া মোড় থেকে চালাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ির বাসের অভাবে দুর্ভোগে যাত্রী। মালদহ, বালুরঘাট, দক্ষিণবঙ্গের জেলা থেকে রায়গঞ্জ-শিলিগুড়িগামী ৮টি সরকারি এবং বেসরকারি বাস চলায় সেগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। |
বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ বলেন, “গত তিন মাসে পাঁচ বার জাতীয় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, পরিবহণ ধর্মঘট-সহ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি জমা দিলেও সড়ক মেরামতির হয়নি। বেহাল রাস্তায় বাস চালিয়ে আমরা চরম লোকসানে পড়ছি। ওই জাতীয় সড়ক মেরামতি না হওয়া পর্যন্ত রায়গঞ্জ-ডালখোলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান শিলিগুড়ি রুটে বাসগুলি পূর্ণিয়া মোড় হয়ে চলছে। রায়গঞ্জ-ডালখোলা রুট হয়ে প্রতিদিন শিলিগুড়ি রুটে ৩৩টি বেসরকারি বাস চলে। যাত্রী অনুরোধে রায়গঞ্জ থেকে আপাতত তিনটি বাস চালানো হচ্ছে।
বাস মালিকদের অভিযোগ, গত এপ্রিল মাস থেকে ওই জাতীয় সড়ক বেহাল। অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই যানজট ও দুর্ঘটনার জেরে নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন। বাস বিকল এবং যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ বিভাগ প্রকল্প অধিকর্তা মহম্মদ সইফুল্লা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ সমস্যা থাকায় জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু করা যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।” বাস মালিকদের বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জেলার নানা ব্যবসায়ী সংগঠন। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুন্ডু ও রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী জানান, জাতীয় সড়ক বেহাল থাকায় ৫ মাস ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো পণ্য আনা নেওয়া করতে পারেননি। প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষদের জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। তাই বাস মালিকরা যা করেছেন ঠিকই করেছেন।
জাতীয় সড়ক মেরামতির দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সিপিএম, তৃণমূল। সিপিএম জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য সুবীর বিশ্বাস বলেন, “আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জেলাশাসক ও জেলা পরিষদ সভাধিপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। এর পরে অক্টোবরে জেলা জুড়ে অনির্দিষ্টকাল জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে।” তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরেই জাতীয় সড়ক মেরামতি হচ্ছে না।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়ে জাতীয় সড়ক মেরামতি করাতে ব্যর্থ। পুজোর পর আন্দোলনে নামব।”
এই বিষয়ে সাংসদ দীপাদেবী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সড়ক মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করেছে। আসলে রাজ্য সরকার চারলেন রাস্তা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সড়ক মেরামতির কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তৃণমূল আর সিপিএম অপপ্রচার করছে।” |