ক্রেডিট কার্ড মারফত ভোগ্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ নিষিদ্ধ করল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার যুক্তি, শূন্য শতাংশে কোনও ঋণ প্রকল্পের অস্তিত্বই থাকতে পারে না বাজারে। ঘুরপথে, প্রসেসিং ফি-র ‘ছদ্মবেশে’ ওই সুদ আদায় করে নেয় ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতা সংস্থা। শূন্য শতাংশ সুদ শুধু ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করার জন্য পাতা ফাঁদ। পাশাপাশি, শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ডেবিট কার্ডে ক্রেতা দাম মেটালে কোনও বাড়তি ফি নেওয়া যাবে না।
ক্রেতাস্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আরবিআই সূত্রের খবর। এই ধরনের ঋণে সুদের হার, প্রসেসিং ফি এবং মাসিক কিস্তিতে যাতে ব্যাঙ্কগুলি কোনও বৈষম্য না-করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে উৎসবের মরসুম শুরুর মুখে আরবিআইয়ের এই সিদ্ধান্তে ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির মাথায় হাত পড়েছে। ক্রেতা টানায় তাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এই শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ। ফলে মাসিক ঋণ পরিশোধের কিস্তি বা ইএমআইয়ের সঙ্গে সুদের হার যোগ হলে ক্রেতাদের আগ্রহে ভাটা পড়বে বলে মনে করছে ভোগ্যপণ্য শিল্পমহল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য অবশ্য এর ঠিক বিপরীত। তারা জানিয়েছে, শূন্য শতাংশ সুদের প্রস্তাব দিয়ে আসলে প্রকৃত সুদের হারকে আড়াল করা হয়। তার পর তা ক্রেতার ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়া হয় ‘প্রসেসিং ফি’-র ‘ছদ্মবেশে’। অথচ ক্রেতা মনে করেন, ক্রেডিট কার্ডে পণ্য কিনে মাসিক কিস্তিতে ঋণের টাকা মেটানো এবং শূন্য শতাংশ সুদ এই দুই সুবিধা একলপ্তে পেয়ে লাভ হচ্ছে তাঁরই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, শূন্য শতাংশ সুদ আসলে অবাস্তব। বরং এক একটি পণ্যের ক্ষেত্রে সমান মেয়াদের ঋণে প্রসেসিং ফি ও সুদের হার হওয়া উচিত অভিন্ন। আর, সেটা নিশ্চিত করতেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ। আরবিাইয়ের মতে, শুধু একটি কারণেই একই পণ্যের জন্য একই মেয়াদের ঋণে সুদের হার আলাদা হতে পারে। সেই কারণটি হল, গ্রাহকের ঝুঁকির মূল্যায়ন। ওই ঝুঁকি বেশি থাকলে বাড়তি সুদ ধার্য করা যেতে পারে। তবে একই সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানাতে ভোলেনি, ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। এ ক্ষেত্রে তাই সব ক্রেতার জন্যই একই পণ্যে একই মেয়াদে অভিন্ন সুদ নেওয়া উচিত।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে অন্য যে-সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলি হল:
• পণ্যের দামে ভোগ্যপণ্য সংস্থা ছাড় দিলে ওই ছাড়ের অঙ্ক দাম থেকে বাদ দিয়ে তবে ঋণ মঞ্জুর করতে হবে। সুদ কমিয়ে দামে ছাড় দেওয়া চলবে না।
• ঋণ পরিশোধ শুরুর জন্য যদি বাড়তি সময় দেওয়া হয়, তা হলে কবে থেকে তা চালু হবে, সুদ কবে থেকে দিতে হবে, তা জানিয়ে দিতে হবে গ্রাহককে। এই সুবিধাও সুদে ছাড় মারফত দেওয়া যাবে না।
• যদি সংস্থা বা বিক্রেতা ওই সব ছাড় দেয়, তা হলে ব্যাঙ্কের তরফে তা গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
• ডেবিট কার্ডের লেনদেনে বাড়তি ফি নেওয়া অযৌক্তিক। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতেই বলা আছে, ব্যাঙ্ক এ ধরনের ফি নিলে তাকে বাতিল করা হবে।
ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য ঋণদানের পুরো ব্যবস্থাই শূন্য শতাংশ ঋণ এবং অন্যান্য প্রলোভনের জেরে অনৈতিক হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নয়া নির্দেশ তাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে আশা করছে তারা। গ্রাহকের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের প্রলুব্ধ করার বাজারি কৌশল তারা বরদাস্ত করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। |