বালুরঘাট ছাড়া সাফল্য নেই তৃণমূলের
ঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ‘বিজয় রথ’ থমকে গিয়েছিল জলপাইগুড়িতে। সে কথা মাথায় রেখে পুরভোটে উত্তরবঙ্গের ৫টি পুরসভার মধ্যে জলপাইগুড়ির আলিপুরদুয়ারের দিকে ‘বিশেষ নজর’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটি। মঙ্গলবার পুরভোটের রায় বার হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, সেই আলিপুরদুয়ারে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরেই। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে ‘চোখ ধাঁধানো ফল’ হয়েছে তবে বাকি তিনটি পুরসভার ক্ষেত্রে তৃণমূল খুব একটা ‘পরিবর্তন’ আনতে পারেনি। এই পরিস্থিতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির অনেকেই মনে হয়েছে, নেতৃত্বের সঙ্কটই প্রধান কারণ। কোর কমিটির উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ফল যথেষ্ট ভাল হয়েছে। ডালখোলা, হলদিবাড়ি, আলিপুরদুয়ারে আসন বেড়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের মতো কেন ফল হল না, তা ভেবে পদক্ষেপ করতে হবে।”
আলিপুরদুয়ার পুরসভায় কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলেও বোর্ড দখলের মতো আসন জিততে পারেনি তৃণমূল। ৪টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা ৬, ১০, ২৮, ৩৯ ভোটে হেরেছেন। প্রাথমিক ভাবে ফল বিশ্লেষণের পরে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির অনেক প্রবীণ সদস্যই মনে করছেন, সামান্য হিসেব কষে পদক্ষেপ করলেই আলিপুরদুয়ারের ওই চারটি ওয়ার্ড তাঁদের হাতেই আসত। তাঁদের মতে, এটাই ঠিকঠাক নেতৃত্বের অভাব। এই ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্যই আলিপুরদুয়ার সহ বাকি ৪টি পুরসভা দখল করা যায়নি।
মেখলিগঞ্জে পুরভোটে জেতার পর ফব সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
তাঁদের যুক্তি, বালুরঘাটে পুরসভায়ও গত বার তৃণমূল একটিও আসন পায়নি। এ বার কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই পুরসভা দখল করেছে তারা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ১৩-১১ আসনে তৃণমূল এখানে পিছনে ফেলে দিয়েছে বামেদের। এখানে মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ও জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের চেষ্টায় বিধানসভা থেকে জেলা পরিষদ, ক্রমশ প্রভাব বাড়াচ্ছে তৃণমূল। তেমনই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের প্রভাব নেই বলেই মেখলিগঞ্জে প্রাক্তন মন্ত্রী ফরওয়ার্ড ব্লকের পরেশ অধিকারীর প্রভাবকে কার্যত কোনও চ্যালেঞ্জেই ফেলতে পারেনি শাসক দল। একটি আসনও তারা পায়নি এখানে। যেমন কোচবিহারেরই হলদিবাড়িতে চার বারের পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌরাঙ্গ নাগের ভাবমূর্তি ও প্রভাবের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মাত্র দু’টি আসন বাড়াতে পেরেছে তারা।
তা হলে কি নেতৃত্বের একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে তৃণমূলে? গৌতমবাবু বলেন, “সব প্রশ্নের চটজলদি উত্তর দেওয়া যায় না। ভোটের ফল নিয়ে পর্যালোচনা হবে। দলের প্রদেশ নেতৃত্বকে সব জানানো হবে। দলনেত্রীকে অবহিত করা হবে। আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা শুধরে নেওয়ার জন্য দলনেত্রী যে পরামর্শ দেবেন, তা মেনে চলা হবে।”
কিন্তু নেতাদের মধ্যে দলাদলি, সমন্বয়হীনতার পরিণতি কী হতে পারে, তা যেন খানিকটা আলিপুরদুয়ারে বোঝা গিয়েছে বলে তৃণমূলের কোর কমিটির নেতারাই মনে করছেন। প্রদেশ নেতৃত্ব এখানে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রদেশ কার্যকরী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি ‘ক্যাম্প’ করে বসেছিলেন। এ ছাড়া, জহর মজুমদারের মতো প্রবীণ নেতারাও ছিলেন। ছিলেন আলিপুরদুয়ারের সাংগঠনিক সভাপতি তথা ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী। কিন্তু নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে মনে করছেন কয়েক জন তৃণমূল নেতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী বাছাই করেছেন এক জন। প্রচারের কর্মসূচি ঠিক করেছেন কয়েক জন মিলে। নানা জনের নানা মত, নানা নির্দেশ মানতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন কর্মীদের অনেকেই।
মঙ্গলবার ভোটের ফল ঘোষণার পরে আলিপুরদুয়ারে ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।
সৌরভবাবুর দাবি, তাঁরা ২০০৮ সালে যেখানে মাত্র ২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে এবার ১৩ হাজার ভোট পেয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “শেষ মুহূর্তে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিরোধীদের বোঝাপড়া হয়েছে।” পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ারের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁদের প্রার্থী মাত্র ৬ ভোটে হারের পরে সেখানে ফের ভোটগ্রহণের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন সৌরভবাবুরা। তবে কোনও ‘বোঝাপড়া’র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, “আমরা সারা বছর মানুষের পাশি থাকি। তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া করি। স্রেফ ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনীতি করি না।” জলপাইগুড়ির সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা ফের দখলে রেখে সেখানে যে তাদের শক্তপোক্ত সংগঠন রয়েছে তা বুঝিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সির খাসতালুক বলে পরিচিত উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ও ইটাহারে তৃণমূল পাল্লা দেওয়ার মতো সংগঠন গড়েছে। কিন্তু ডালখোলা, কালিয়াগঞ্জের মতো বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও কংগ্রেসই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “এর আগে ডালখোলায় কোনও তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন না। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। আগামী দিনে ওই এলাকায় সংগঠন নিশ্চয়ই শক্তিশালী হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.