ক্ষমতা ধরে রাখাই নয়, আসনও বাড়াল তৃণমূল
ম্মানের লড়াইয়ে জিতে গেলেন জ্যোতিপ্রিয়।
নিজে হাবরা পুর এলাকার ভোটার না হওয়ায় ভোটের দিন এলাকায় ঢুকতে পারেননি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবু নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র হাবরার ভোট ঘিরে সর্বক্ষণই তাঁর অস্তিত্ব টের পেয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ভোটের আগে দলের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রী সভা করে গিয়েছেন হাবরায়। এমনকী জেলা রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেত্রী বলে পরিচিত বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারও ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন হাবরায়। দলের ঐক্যের ছবিটা তুলে ধরতে মরিয়া ছিল তৃণমূল শিবির। যদিও প্রার্থী পদ নিয়ে ক্ষোভ ছিল কিছু ওয়ার্ডের। কোথাও গোঁজ প্রার্থী ছিল। কোথাও আবার দলের কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়ানো প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গা ঘামাননি বলে অভিযোগ। তবু সব মিলিয়ে শেষ হাসিটা হাসল তৃণমূলই। হাবরা পুরসভায় আরও এক বার ক্ষমতায় এসেছে তারা।
হাবরায় গত বার ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ১১টিতে। সিপিএম পেয়েছিল ১০টি আসন। কংগ্রেস এবং নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিল ১টি করে ওয়ার্ডে। এ বার আসন বেড়ে হয়েছে ২৪। তৃণমূল পেয়েছে ১৫টি আসন। সিপিএমের দৌড় শেষ হয়েছে ৮টিতে। কংগ্রেসকে গতবারের মতোই একটি আসন পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
গণনাকেন্দ্রের সামনে সকাল থেকেই ছিল উৎকণ্ঠা।
অবশেষে এল পুরসভা জয়ের কাঙ্খিত খবর।
হাবরার পুরভোটে এ বার ইন্দ্রপতন বলতে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সীতাংশু দাস ওরফে ঝন্টু এবং তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা কাঞ্চন ঘোষ। দু’জনেই পরাজিত হয়েছেন। হাবরায় কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরীর খুনের পরে তাঁর স্ত্রী কাকলি দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। কাকলিদেবীর দৌড় থেমেছে মাত্র ১১০টি ভোট পেয়ে। ওই ওয়ার্ডে (১৩ নম্বর) ১৭৭১টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন সিপিএমের শ্যামলকুমার দাস। বিগত বোর্ডের পুরপ্রধান তৃণমূলের তপতী দত্ত এ বারও জয়ী হয়েছেন। জিতেছেন গত বারের পুরসভায় বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাসও।
ভোটের দিন দফায় দফায় গোলমালে উত্তপ্ত হয়েছে হাবরার বিভিন্ন এলাকা। যার জেরে ৪টি বুথে ফের ভোট নেওয়া হয়। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৫৫ নম্বর বুথে ঢুকে সরকারি অফিসারদের কানে বন্দুক ঠেকিয়ে ছাপ্পা ভোট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের গৌতম বিশ্বাস। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে সশস্ত্র শ’খানেক দুষ্কৃতী এসে হামলা চালায়। ওয়ার্ডটিতে জয়ী হয়েছেন সিপিএমের সদারঞ্জন বসু। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ইতনা কলোনিতে সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে গুলি-বোমা নিয়ে লড়াই বাধে। আক্রান্ত হন পুলিশ কর্মীরাও। এই ওয়ার্ডে ভোটগণনার পরে দেখা গেল, জয়ী হয়েছেন সিপিএমের ঋজিনন্দনবাবু।
ভোটের কিছু দিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন নীলিমেশ দাস ও নারায়ণ সাহা। দু’জনকেই ভোটে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। যা নিয়ে দলেরই অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। ওই দু’জন অবশ্য জিতে গিয়েছেন (নারায়ণবাবু জিতেছেন মাত্র ২ ভোটে)। তৃণমূলের রুমা চট্টোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়ান শিখা দত্ত সরকার। তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতা তথা গত বোর্ডের কাউন্সিলর অর্ণব চক্রবর্তী দলবল নিয়ে শিখাদেবীর সমর্থনে প্রচারে নামেন। যদিও ৮১ ভোটে জয়ী হয়েছেন রুমাদেবী।

উল্লাসে মাতলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।
সব মিলিয়ে ভোটের ফলে তৃপ্ত তৃণমূল শিবির। সকালের দিকে জ্যোতিপ্রিয়বাবু উগ্বিগ্ন ভাবে ফোনেই খোঁজ-খবর করেছেন। বেলা গড়ানোর পরে তিনি পা রাখেন হাবরায়। ফল ঘোষণার পরে তৃপ্ত জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। যে সব ওয়ার্ডে ভাল ফল হয়নি, সেখানে আরও বেশি করে উন্নয়নের কাজ করা হবে।” তপতীদেবী বলেন, “যে সব কাজ আমরা করে উঠতে পারিনি, কাল থেকেই তা শুরু করে দেব।”
ফলাফলে অখুশি নয় সিপিএমও। দলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, “ভোটে পেশিশক্তি ব্যবহার করেছে তৃণমূল। টাকাও ছড়িয়েছে দেদার। তার উপরে দলের সব নেতা-নেত্রীকে প্রচারে নামিয়েছে। তারপরেও আমাদের যে ফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।” যার পাল্টা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সিপিএমের সন্ত্রাস সত্ত্বেও মানুষ আমাদের উপরেই আস্থা রেখেছেন।” অন্য দিকে, একটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট কংগ্রেস। দলের জেলা নেতা বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, “আমাদের ভোটের সংখ্যা বেড়েছে।”

মঙ্গলবার হাবরায় শান্তনু হালদারের তোলা ছবি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.