বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জঙ্গলমহলে ভেষজ উদ্ভিদের
সন্ধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায়

বেলপাহাড়ির বাবুই ঘাসের মধ্যেও রয়েছে ভেষজ গুণ! রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ঘাসের জুড়ি নেই। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তরফে সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য পাওয়ার দাবি করেছেন গবেষকেরা। শুধু তাই নয়, বাবুই ঘাসের শিকড় মাটির অনেক গভীরে থাকে বলে তা ভূমিক্ষয় আটকাতেও সাহায্য করে। অথচ এই বাবুই ঘাস পাকিয়ে দড়ি বানিয়েই দিন গুজরান করেন আদিবাসীরা। উৎপাদিত দড়ি মাত্র চোদ্দ-পনেরো টাকা কিলো দরে কিনে নেয় ফড়েরা।
ইউজিসি’র আর্থিক সহায়তায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসার অমলকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে দক্ষিণবঙ্গের আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গল এলাকায় যে সমস্ত লুপ্তপ্রায় ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে, সে সম্পর্কে ক্ষেত্র-সমীক্ষা ও সংরক্ষণের কাজ চলছে। প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর হলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রোফেসর নগেন্দ্রকুমার বর্মা এবং ডেপুটি কো-অর্ডিনেটার হলেন অমলবাবু। এ ছাড়াও রয়েছেন দু’জন গবেষক (প্রজেক্ট ফেলো) সায়ন্তন ত্রিপাঠী ও সৌরদূত রায়। বেলপাহাড়ি-সহ জঙ্গলমহলের আনাচে কানাচে ঘুরে সমীক্ষক দলটি খুঁজে পেয়েছেন সর্পগন্ধা, সূর্যশিশির, নীল লতা, নীল অতসী ও একবীরের মতো বিলুপ্ত প্রায় বেশ কিছু ভেষজ উদ্ভিদ।
বাবুই ঘাস আর তা দিয়ে বানানো দড়ি নিয়ে হাটের পথে।— নিজস্ব চিত্র।
অমলবাবুর কথায়, যুগ যুগ ধরে জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা ভেষজ উদ্ভিদগুলি ব্যবহার করে সুফল পেয়ে আসছেন। এর মধ্যে বাবুই ঘাসের (ইউলালিওপসিস বাইন্যাটা) মতো বেশ কিছু ভেষজ উদ্ভিদের প্রাকৃতিক ব্যবহার আমাদের জানা নেই। ওই সব ভেষজের সঠিক গুণাগুণ ও ব্যবহার বিধি জানা গেলে আখেরে ‘এথনোবোটানি’ বা লোক-উদ্ভিদবিদ্যার উন্নতি হবে।” অমলবাবু জানান, জঙ্গলমহলে যে সব বিলুপ্ত প্রায় ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে, সেগুলির চারা অথবা বীজ সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা ভেষজ উদ্যানে সংরক্ষণ করার কাজ চলছে। বাবুই ঘাস-সহ ওই সব ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস থেকে ‘বায়ো মলিউকুল’ বা জৈব অনুর শনাক্তকরণ ও চিহ্নিতকরণের কাজও চলছে।
চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর ২০১৩) বেলপাহাড়িতে সমীক্ষা চালানোর সময় বাবুই ঘাসের গুণাগুণটি অমলবাবুদের নজরে আসে। সমীক্ষাপত্রে গবেষকেরা জানিয়েছেন, ঘাস জাতীয় এই উদ্ভিদ খুব কম জলে চাষ করা যায়। এ জন্য কোনও খরচও হয় না। বেলপাহাড়ির পাহাড়ি যে সমস্ত এলাকায় এই ঘাসের চাষ হয়, সেখানে ভূমিক্ষয়ের হার অনেক কম। বাবুই ঘাসের ফাইবার উচ্চ গুণ সম্পন্ন হওয়ায় কাগজ শিল্পেও এই ঘাস ব্যবহৃত হয়। বাবুই ঘাসকে অর্থকরী বিকল্প চাষ হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হলে এলাকার আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে সমীক্ষক দলটি। অমলবাবুদের বক্তব্য, সরকারি উদ্যোগে স্থানীয় আদিবাসীদের দিয়ে বাবুই চাষ করানোর পক্ষেই আমরা সমীক্ষাপত্রে সুপারিশ করেছি। এই কুটির শিল্পের আধুনিকীকরণ দরকার। আদিবাসীরা যাতে যোগ্য দাম পান সেটাও সরকারকে দেখতে হবে।” বেলপাহাড়ির আমলাশোল ও সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের জঙ্গলে পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সূর্যশিশিরের (ড্রসেরা বারমানি) সন্ধান পেয়েছেন অমলবাবুরা। বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে সর্পগন্ধার সন্ধান পেয়েছে সমীক্ষক দলটি। একবীর (হেলমিনথো স্ট্যাটিস জাইলানিকা) জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ের জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে। গুল্মজাতীয় এই দুর্লভ ভেষজ উদ্ভিদটি আর দেখা যায় না। গড়পঞ্চকোট, অযোধ্যাপাহাড় এবং বাগমুণ্ডি জঙ্গলেও বেশ কিছু দুর্লভ ভেষজের সন্ধান পেয়েছেন অমলবাবুরা। বেলপাহাড়ির বালিচুয়া গ্রাম থেকে বোরাজিনেসী গোত্রের বৃক্ষজাতীয় একটি গাছের সন্ধান পেয়েছে গবেষক দলটি। এই গাছের শিকড়টি খাবারে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অমলবাবুদের প্রস্তাব, অবিলম্বে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় জঙ্গলমহলের ওই সব এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হোক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.