উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সব কটি স্থায়ী সমিতি দখলে নিল বামেরা। জেলা পরিষদের ১০টি স্থায়ী সমিতির মধ্যে সোমবার ৯টি স্থায়ী সমিতির চারজন করে সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হয়। প্রতিটি স্থায়ী সমিতিতেই বামফ্রন্টের সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন। তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতি বাদে বাকি কৃষি-সেচ এবং সমবায়, শিক্ষা-সংস্কৃতি-তথ্য-ক্রীড়া, শিশু-নারী-জনকল্যাণ-ত্রাণ উন্নয়ন, বন ও বনভূমি সংস্কার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ, খাদ্য ও সরবরাহ, ক্ষুদ্র শিল্প বিদ্যুত ও অচিরাচরিত স্থায়ী সমিতিতে বামফ্রন্টের সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। পদাধিকার বলে অর্থ-স্বাস্থ্য-উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতিটি সভধিপতি ও সহকারি সভাধিপতি তাঁদের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠন করবেন।
এদিন কংগ্রেসের সদস্যরা স্থায়ী সমিতি নির্বাচনে হাজিরা দিলেও তাঁরা ভোটাভুটিতে অংশ না নিয়ে চলে যান। তৃণমূলের তরফে অবশ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতিতে প্রার্থী দেওয়া হয়। তবে তৃণমূল প্রার্থীরা বামেদের কাছে ২৩-৭ ভোটে পরাজিত হন। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, স্থায়ী সমিতির সদস্য নির্বাচনে জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা ছাড়াও জেলার সবকটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সাংসদ ও বিধায়কদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে কোনও সাংসদ বা বিধায়ক মন্ত্রী হলে ভোটাধিকার থাকে না।
সেই হিসেবে এদিন বামফ্রন্টের ১৩ জন জেলা পরিষদ সদস্য, একজন সাংসদ, পঞ্চায়েত সমিতির ছয় জন সভাপতি ও তিন জন বিধায়ক মিলিয়ে মোট ২৩ জন এ দিন ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিলেন। কংগ্রেসের জেলা পরিষদের আটজন সদস্য, তিনজন বিধায়ক ও পঞ্চায়েত সমিতির দুজন সভাপতি মিলিয়ে ১৩টি ভোট। তবে কংগ্রেস ভোটে অংশ নেয়নি। তৃণমূলের পাঁচজন জেলা পরিষদ সদস্য, দুজন বিধায়ক ও একজন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিলিয়ে আটটি ভোট। এ দিন তাঁদের মধ্যে একজন অনুপস্থিত থাকায় সাত জন ভোটাভুটিতে অংশ নেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক তুষারকান্তি বিশ্বাস এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “প্রতিটি স্থায়ী সমিতিতেই বামফ্রন্টের সদস্যরা জয়ী হয়েছেন। সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতির উপস্থিতিতে আগামী ১ অক্টোবর নির্বাচিত সদস্যরা তাঁদের মধ্যে থেকে প্রতিটি স্থায়ী সমিতিতে এক জন করে কর্মাধ্যক্ষ মনোনীত করবেন।”
জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ১৩টি, কংগ্রেস ও তৃণমূল যথাক্রমে আটটি ও পাঁচটি করে আসন দখল করেছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট করে সভাধিপতির আসনে প্রার্থী দিলেও লটারিতে সেই প্রার্থীকে হারিয়ে সভাধিপতি নির্বাচিত হন সিপিএমের লাডলিচৌধুরী। এর পর কংগ্রেস ও তৃণমূল ওয়াক আউট করলে পরে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সহকারী সভাধিপতি মনোনীত হন আরএসপির প্রফুল্লকুমার দেবসিংহ। এ দিন ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের অভিযোগ, “কংগ্রেস এই জেলায় বামফ্রন্টকে সুবিধা করে দিতেই স্থায়ী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু, আমরা তৃণমূল কংগ্রেস গণতান্ত্রিক রীতিতে বিশ্বাসী। সে জন্য ভোটে লড়েছি।”
জেলা পরিষদের কংগ্রেসের দলনেতা পূর্ণেন্দু দে বলেন, “আমাদের মোট ভোটের সংখ্যার নিরিখে একটিও স্থায়ী সমিতিও জেতা সম্ভব না। তাই ভোটাভুটিতে অংশ নিইনি। আসলে আমাদের ঘাড়ে পা রেখে তৃণমূলের জেলা পরিষদ দখলের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিপিএম নেত্রী লাডলিদেবী দাবি করেন, তাঁরা নিজেদের ক্ষমতায় জেলা পরিষদ ও স্থায়ী সমিতি দখল করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “কেউ ভোটাভুটিতে অংশ না নিলে আমাদের কিছু করার নেই।” |