সমস্যা সারমেয়, বনবিতানে বিপাকে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা
রোজকার হাঁটাচলার নিশ্চিন্ত জায়গাটাই আতঙ্কের হয়ে উঠবে, এমনটা কোনও দিনও ভাবেননি লেকটাউনের গৌরব অধিকারী। সকালবেলা সল্টলেকের বনবিতানে প্যাগোডা বরাবর রাস্তায় হাঁটছিলেন। আচমকাই একদল কুকুর ঘিরে ধরল। তার মধ্যে একটি কুকুর তাঁর প্যান্ট ধরে টানছিল। ভয়ে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। সতীর্থদের জন্যই সে যাত্রায় রক্ষা পান। গৌরববাবু বলেন, “কুকুর না তাড়ালে যাব না। প্রাণে বেঁচেছি।”
সল্টলেকের রিমা রায়ের অভিজ্ঞতাও অনেকটা একই রকম। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পরে বনবিতানের শিশু উদ্যানের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলেন। ব্যস, ঘিরে ধরল কুকুরের দল। একটা-দুটো গায়ে ওঠার উপক্রম। পালাতেও পারছিলেন না রিমাদেবী। নিরাপত্তাকর্মীদের দেখা মেলেনি। কোনও মতে নিজেকে ছাড়িয়ে বনবিতান থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
গৌরববাবু কিংবা রিমাদেবীই নন, ইদানীং কুকুরের উৎপাতে সল্টলেকের বনবিতানে হাঁটাচলাই দায় হয়ে উঠছে প্রার্তভ্রমণকারীদের। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, ভোর থেকে বনবিতানের দু’প্রান্তের গেট খোলা পেয়ে অনায়াসেই ঢুকে পড়ছে অসংখ্য কুকুর। কখনও কাউকে ঘিরে ধরছে, কিংবা তেড়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া ওই সময়টায় আর কেউ থাকেন না বনবিতানে। অভিযোগ, প্রশাসনকে বলে লাভ হয়নি কিছুই। বন দফতর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রাতর্ভ্রমণকারীদের পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে কুকুরের দল। সোমবার, সল্টলেকের বনবিতানে। ছবি: শৌভিক দে।
সেন্ট্রাল পার্কের ৭৩ একর জায়গা নিয়ে বনবিতান। তার মধ্যে রয়েছে ১৫ একরের জলাশয়, শিশু উদ্যান-সহ সবুজের সমারোহ। আগে ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত প্রাতর্ভ্রমণকারীদের জন্য বনবিতান খুলে দেওয়া হত। বর্তমানে সেই সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। তবে অনেকে দশটা পর্যন্ত বনবিতানে হাঁটেন। বন দফতরের হিসেব, গড়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার প্রাতর্ভ্রমণকারী বনবিতানে আসেন।
খোলা গেট দিয়ে কুকুর ঢোকার অভিযোগের পাল্টা দাবিতে সল্টলেক রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার গৌতম ঘোষ বলেন, “প্রাতর্ভ্রমণকারীদের দাবি মেনেই গেট খুলে রাখা হয়। তাঁরাই এমন অভিযোগ করলে ভাবতে হবে। তবে কুকুর তাড়াতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” বনকর্মীদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, অনেকেই বনবিতানে কুকুরদের খাবার খাওয়ান। সেই লোভেও কুকুর ঢোকে। সেচ ভবনের উল্টো দিক বরাবর বনবিতানে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে একটা দলকে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করতে দেখাও যায়। তবে কুকুরই বনবিতানে রাতের বড় ভরসা বলে জানাতে ভোলেননি বনকর্মীরা।
প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অপর এক অংশের অভিযোগ, নজরদারি কিংবা নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নেই বলেই সমস্যা বাড়ছে। অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, দিন-রাত মিলিয়ে মোট ১৪ জন কর্মী নিরাপত্তা ও নজরদারির জন্য নিযুক্ত। অর্থাৎ প্রতি শিফ্টে অত বড় এলাকায় মাত্র দু’-চার জন কর্মী থাকেন। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ, বনসৃজনের কাজে মাত্র ২২ জন কর্মী রয়েছেন। ৭৩ একর এলাকার বনবিতান সামলাতে এই সংখ্যাটা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষের একাংশ। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের আরও অভিযোগ, বনবিতানে রাস্তার বেহাল দশা। বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। মাথার উপরে নেই কোনও আচ্ছাদন। জলাশয়ও পরিষ্কার হয় না। এই সব অভিযোগের অনেকটাই মেনে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কেন.এই অবস্থা? কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, যা আয় হয়, ব্যয় হয় তার দ্বিগুণ। ফলে অনেক কাজই টাকার অভাবে আটকে রয়েছে। সূত্রের খবর, সকাল দশটার পরে বড়দের জন্য মাথাপিছু পঁচিশ টাকা আর শিশুদের জন্য দশ টাকা প্রবেশমূল্য। বছরে এ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা আয় হয়। কিন্তু খরচ তাঁর দ্বিগুণ। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশই প্রশ্ন তুলেছেন, দিনের অন্য সময়ে যদি প্রবেশমূল্য লাগে, তা হলে কেন তাঁদের কাছ থেকে তা নেওয়া হবে না? কারণ, তাঁরাও বনবিতান ব্যবহার করছেন। ওউ উদ্যানের উন্নতিতে সে ক্ষেত্রে তাঁদের থেকেও টাকা নেওয়া উচিত। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো শহরেও এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কোনও পরিষেবা পেতে গেলে কিছু অর্থও ব্যয় করা উচিত বলেই প্রাতর্ভ্রমণকারীদের দাবি।
বন দফতরের অফিসারেরা জানান, আগে এক বার প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রতীকী প্রবেশমূল্য চালু করা হয়েছিল। কিন্তু প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশের আপত্তিতে তা টিকিয়ে রাখা যায়নি। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশের দাবি মতো প্রবেশমূল্য চালু করলে তা উন্নয়নের কাজেই লাগবে বলে জানান ওই অফিসারেরা।
প্রাতর্ভ্রমণকারীদের আর একটি অংশ অবশ্য প্রবেশমূল্য চালু করার বিরোধিতা করেছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.