গ্রামীণ ক্রেতার অপেক্ষায় পুজোর বাজার
ভিড়ে ঠাসা বাজার। কিন্তু সাবধানে পা ফেলছেন ক্রেতা, বিক্রেতা দু’তরফই।
পুজোর মুখে রবিবার শহরের বাজার দেখে বোঝা গেল না, ভিতরে কিন্তু একটা আশঙ্কার চোরা স্রোত রয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, গ্রামের ক্রেতারা কেন এখনও পুজোর বাজার করতে আসছেন না? ক্রেতাদের সমস্যা হল, জিনিসপত্রের দাম এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। দু’তরফই তাই অপেক্ষা করছে, মহালয়ার। তারপরে পুজোর ঠিক মুখে গ্রামের ক্রেতা যেমন আসতে পারেন বাজারে, তেমনই সেই সময়েই বসবে অনেক ছোট দোকান। সেখান থেকে ক্ষমতার মধ্যে কাপড়জামা পাবেন, এই আশা করছেন কিছু ক্রেতা।
তবে এ বার বন্যার আশঙ্কা নেই, বৃষ্টির পরিমাণও প্রায় যথাযথ। পাট ছাড়ানো কিংবা আমন বোনার কাজও শেষ হয়েছে সময় মতো। তাই গ্রামের ক্রেতার হাতে নগদ টাকা রয়েছে। তাঁরা সেই টাকা বাজারে বিনিয়োগ করবেন এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল।
সন্ধ্যে হতেই ভিড় বাজারে। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
বাধ সেধেছে কী?
ব্যবসায়ীদের ধারণা, সারদা কাণ্ডের মতো বড় চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির ফলে গ্রামের মানুষ এখনই নগদ টাকা খরচ করতে আগ্রহী নন। তাঁরা আরও একটু অপেক্ষা করতে চান। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নবদ্বীপকে কেন্দ্র করে যে বিরাট গ্রামীণ সমাজ, তাঁরা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের উপরেই নির্ভর করছেন। অনেক ছোট ব্যবসায়ী যেমন এখনও বাজারে পসরা নিয়ে আসেনইনি। এক ছোট দোকানের বিক্রেতা বাবুলাল সাহা বলেন, “আমাদের কেনাবেচা মহালয়া থেকে শুরু হয়। চলে ষষ্ঠী বা সপ্তমী পর্যন্ত। তবে জিনিসের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে কিন্তু একটা চোরা আশঙ্কা কাজ করছে। বাজারের গতি প্রকৃতি বোঝা যাবে আরও কয়েক দিন পর। তবে বাজার যেমনই হোক, আমরা তৈরি থাকছি।”
কিন্তু শহুরে ক্রেতার ভিড় উপচে পড়ছে বাজারে। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। এ দিনটা বাদ দিলে পুজোর আগে আর মাত্র দু’টো রবিবার হাতে পাওয়া যাবে। তাই এ দিন বেলা বাড়তেই ভিড় জমেছে নবদ্বীপ, নানা মফস্‌সল বা জেলা সদর কৃষ্ণনগরের ছোট বড় সব দোকানেই। চাকরিজীবীরা অনেকেই সপরিবারে বেরিয়ে পড়েছিলেন বাজারে। দিনভর কেনাকাটা করে তারপর বাড়ি ফেরা। কেউ কেউ রাতের খাবার কোনও রেস্তোঁরা থেকে কিনে বাড়ি ফিরছেন। নবদ্বীপের এক রেস্তোরাঁ মালিক শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “এই ভিড়ের জন্য আমরাও তৈরি থাকি। এটা আমাদেরও একটা বড় মরসুম।”
দুই রবিবার দূরে পুজো
• শহরের ক্রেতারা বাজার ভরিয়ে রেখেছেন, গ্রামের ক্রেতা কম।
• গ্রামের ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে মহালয়ার পর, আশায় ব্যবসায়ীরা।
• গ্রামীণ দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।
• চিটফান্ড কাণ্ডের জেরে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। গ্রামের মানুষ টাকা খরচে তেমন আগ্রহী নন।
• ছোট ব্যবসায়ীরা মাল না তুলে হাতে রাখছেন নগদ টাকা।
• আগামী কয়েক দিনের উপরে নজর রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু কলকাতায় যাচ্ছেন না কেন?
বেসরকারি সংস্থার কর্মী অরিজিত্‌ সমাদ্দার বলেন, “কলকাতায় সকলে মিলে গিয়ে সারা দিন ধরে পুজোর বাজার করে ফেরাটা খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই বরং নিজের শহরের বাজারেই কেনাকেটা করা ভাল। এখানে সব পাওয়াও তো যায়। শুধু বিশেষ কিছু কিনতে হলে সেটা কলকাতা থেকে কিনে আনি।” নিত্যযাত্রী সম্বরণ মিত্রের কথায়, “রোজই তো কলকাতায় যাচ্ছি। এই দিনটা সেই ধকল নিতে ভাল লাগে না। বরং সবাই মিলে পুজোর বাজার করতে যাওয়াটা এক ধরনের পারিবারিক বিনোদনও বলতে পারেন।”
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলছেন, “নবদ্বীপে দু’ধরনের পুজোর বাজার হয়। একটা, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজস্ব কেনাকেটা। তাতে ভালই লাভ হচ্ছে। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে, নবদ্বীপের চার পাশের নদিয়া ও বর্ধমানের গ্রামগুলোর মূলত পাইকারি ও খুচরো বাজার। সেটা কিন্তু এখনও তেমন ভাবে জমে ওঠেনি।”
নবদ্বীপ রাধাবাজার বা কৃষ্ণনগরের ডি এল রায় মার্কেটের ছোট দোকানদাররা কেউ কলকাতার মঙ্গলাহাট আবার কেউ স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে মাল তুলে নিজের দোকান বা অস্থায়ী পসরা সাজিয়ে ফেলেছেন। তেমনই একজন ধ্রুব বিশ্বাস বলেন, “শহরের ক্রেতারাই ভরসা এখনও। এখনও কিন্তু গ্রামের লোকজন তেমন ভাবে বাজারে ঢোকেনি। আসলে গ্রামে যেমন বেশ কিছু নতুন দোকান হয়েছে তেমনি কিছু বিক্রেতা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাল বিক্রি করছেন। গ্রামের লোকজন তাদের কাছে ধারেও জিনিস কিনতে পারছেন। এর ফলে আমাদের বাজারের কিছু ক্রেতা কিন্তু কমেছে। পাশাপাশি গতবারের তুলনায় জিনিসের দামও এবার অনেকটা বেড়েছে।” ধ্রুববাবু বলছেন, “গত বারের ২০০ টাকার ফ্রক এবার ২৬০ টাকা হয়ে গিয়েছে। তাই অল্প জিনিস তুলেছি। নগদ টাকা হাতে রাখছি। তেমন জরুরি দরকার পড়লে কিনে আনব।”
খুচরো বিক্রেতাদের পাইকারি মাল সরবরাহ করেন প্রাণতোষ রায়। তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটু চাপের মধ্যেই আছি। গ্রামের ছোট দোকানদারেরা এখনও পর্যন্ত পঞ্চাশ শতাংশ মাল তুলেছেন। বাজারের অবস্থা বুঝে ওরা পরে আবার জিনিসপত্র কিনবেন। এটা ভুলে গেলে চলবে না, চিটফান্ডের জের কিন্তু গ্রামে এখনও রয়েছে। ফলে ‘বাজার না লাগা’ পর্যন্ত ছোট দোকানদাররা এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে গত বারের তুলনায় জামা কাপড়ের দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তবে মহালয়ার পরেই বাজারে ভিড় করেন গ্রামের মানুষ। তাই আমাদের আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.