এ যেন বোধনের আগেই বিসর্জন। গণনার আগেই ফল প্রকাশ।
চাকদহ পুরসভায় ভোট চলাকালীন সিপিএম নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোয় গণনা নিয়ে সাধারণ মানুষের আর কোনও উত্সাহ নেই।
ভোটের ঢাকে কাঠি পড়া ইস্তক চাকদহের পাবনা কলোনি, খাসবোস মহল্লা, পালপাড়া, কাঠালপুরি, রবীন্দ্রনগর, সুভাষনগর, যশড়া প্রভৃতি এলাকা কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের আনাগোনায় মুখর হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলির টাঙানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছয়লাপ ছিল এলাকাগুলো। ভোটের আগের দিন এলাকায় পুলিশের টহলদারি, ভোটারদের ছোট ছোট জটলা।
রবিবার সে সবের কোনও বালাই নেই। মাইকের শব্দ নেই। ভোট নিয়ে আলোচনাও নেই। সুনসান রাস্তাঘাট। এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী স্বপন দাস বলেন, “গণনাকেন্দ্রে গিয়ে খবর শোনার মজাটাই আলাদা। যা টিভির সামনে বসে পাওয়া যায় না। কিন্তু এ বার তো সিপিএম লড়াইয়েই নেই। সে সব এ বার আর হবে না।” শহরের আর এক বাসিন্দা মাধব মজুমদার বলেন, “এ বার গণনার উত্তেজনাটাই আর নেই।”
সদ্য সমাপ্ত চাকদহ পুরসভার ২১ ওয়ার্ডের ভোট গণনা হবে চাকদহ কলেজে। এখানেই স্ট্রং রুমে নিরাপত্তারক্ষীদের হেফাজতে বন্দি ৮৩.৭৫ শতাংশ ভোটারের মতামত। আর ৫৭ জন প্রার্থীর ভোট ভাগ্য।
শনিবার ভোট চলাকালীন দুপুর একটা নাগাদ শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যামের অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার কথা জানায় সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমল হালদার বলেন, “পরিশ্রমটা পুরোপুরি বিফলে গেল না। মানুষ সন্ত্রাসের এক নতুন রূপ প্রত্যক্ষ করল। নির্বাচনের পর আর কোনও কাজ রইল না আমাদের। গণনাকেন্দ্রেও যাব না।” সিপিএমের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে চাকদহের বিধায়ক নরেশচন্দ্র চাকী বলেন, “এ বার মানুষ অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন। আগে যা সম্ভব ছিল না। তাই সিপিএম ভয় পেয়েছে। ভোটের গতি দেখে হার নিশ্চিত জেনে সরে গেছে সিপিএম। সরে না গেলেও ওরা হারত।”
নরেশবাবু যাই বলুন না কেন সিপিএম-কংগ্রেসের প্রার্থীরা কিন্তু লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ করেই চলেছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী প্রশান্ত রায় বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই বাড়িতে ভাঙচুর হয়। তবু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের ময়দানে ছিলাম। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। এজেন্টদের পাশাপাশি আমাকেও মারধর করে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।” একই সুর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর গোস্বামীর গলাতেও। তিনি বলেন, “অনেক চোখ রাঙানিতেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে পারেনি। কিন্তু ভোটের দিন যা হল তা তো এখন সকলেরই জানা।”
ভোট-সন্ত্রাস নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একযোগে তোপ দেগেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভোটের ময়দান থেকে প্রধান বিরোধী দলের সরে দাঁড়ানোর আবহে ভোট পরবর্তী চাকদহ যেন এখন অনেকটাই নিস্তরঙ্গ। |