পুর নির্বাচন
শাসক দলের ‘অতি উৎসাহে’ সন্ত্রাস দেখছে চাকদহ
পাক্কা সাতাশ বছর পরে ‘কী হয়, কী হয়’ গুঞ্জনটা টের পাওয়া যাচ্ছে।
পুরনো শহর। আড়ে বহরে ছড়িয়ে এখন পাবনা কলোনি কিংবা পাল পাড়ার মতো নিভু নিভু আলোর গাঁ-গঞ্জও পুর এলাকায় ঠাঁই করে নিয়েছে।
রেল স্টেশন ছাড়িয়ে দু-পা হাঁটলেই বিশ বছর আগের ঘুমিয়ে পড়া চাকদহ এখন বেশ সরগরম জবসত।
এই আড়াই দশকের ক্রমান্বয়ে বাড়-বৃদ্ধির ‘শক্তিতে’ ভর করেই সাতাশটা বছর রাজত্ব করে যাওয়া বামফ্রন্ট এ বার প্রথম ওই অনিশ্চিত ‘কী হয়’-এর মুখোমুখি।
লক্ষ্মী সিনেমার পাশে সিপিএমের সেই দূর্গের মতো পার্টি অফিসে বসে দলের জেলা কমিটির এক সদস্য ম্লান গলায় আক্ষেপ করে বসলেন, “বাস্তবিকই অনিশ্চয়তায় আছি মশাই। প্রার্থী করাই তো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। ঘরে ঘরে গিয়ে শাসিয়ে গিয়েছে শাসক দলের গুণ্ডারা, প্রার্থী হলে পা-কেটে রেখে দেব!”
নিছক রাজনৈতিক অভিযোগ বলে অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, শহরের আনাচে কানাচে কান পাতলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ‘শাসানিতে’ ছড়িয়ে পড়া এই চাপা সন্ত্রাস মালুম হচ্ছে। শহরের সুভাষ অ্যাভিনিউ থেকে রবীন্দ্রনগর, রথতলা থেকে জসরা সর্বত্রই ছায়া ফেলেছে তৃণমূলের এই ‘বাড়াবাড়ি’। দলের এক তাবড় জেলা নেতাও কবুল করে ফেলছেন, “আসলে কী জানেন, রাজ্য জুড়ে এমন ঢালাও পরিবর্তনের পরেও চাকদহ বামেদের হাতছাড়া হয়নি। আর তা দেখেই দলীয় কর্মীদের একাংশ এই নির্বাচনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বসেছে।” তাঁর সবিনয় ব্যাখ্যায় মিলছে, সেই সব কর্মীদের অতি উৎসাহে কিঞ্চিৎ ‘সন্ত্রাসের’ ইশারা।
শাসক দলের পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে গোটা শহর। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
পরোক্ষে যা শাসক দলের প্রতি কিছুটা বিরক্তি তৈরি করেছে সাধারনের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দা অলক বিশ্বাস কিংবা সন্তোষ হালদারেরা স্পষ্টই বলছেন, “চাকদহ শহরটার প্রসার ছাড়া সিপিএম তেমন কিছুই করেনি। কিন্তু ক্ষমতায় না এসেই তৃণূলের যা চেহারা দেখছি তাতেও ভয় ছাড়া ভক্তি জাগছে না!” শাসক দলের অতি উৎসাহীদের জন্য দলকে যাতে খেসারত দিতে না হয় সে জন্য ইতিমধ্যেই চাকদহে বার বার রাজ্য নেতৃত্বের পা পড়ছে।
তবে দলের জেলা নেতারা তা মানতে চাইছেন না। এক জেলা নেতার কথায়, “রাজ্য নেতারা চাকদহে প্রচারে আসছেন ঠিকই। তবে, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এমন কোনও সন্ত্রাস ছড়াননি যা প্রশমনের জন্য ওঁদের আসতে হচ্ছে। ওটা বামেদের অপপ্রচার।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নরেশচন্দ্র চাকীও বলছেন, “কংগ্রেস এখানে প্রার্থী খুঁজে পায়নি। দু’চার জনকে প্রলোভন দেখিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। লাভ হবে না বুঝে সরে গিয়েছে। আর, মিথ্যা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে সিপিএম। এর বেশি আর কী বলব!”
তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় থেকে বিরোধীদের ভয় দেখানো যে অব্যাহত সে অভিযোগ বামেদের পাশাপাশি তুলেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য দুলাল পাত্র বলেন, “সিপিএমের চেয়েও বেশি সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। ওদের ভয়ে কেউ প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছে না। গত পুরসভা নির্বাচনে আমরা ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলাম। এ বার মাত্র ৮ টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছি।”
রাজ্যের বিরোধী দল নেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতে পারেনি। ভয় দেখিয়ে তা প্রত্যাহারও করাতে পারেনি ওরা। আমরা মানুষকেও অভয় দিচ্ছি, এগিয়ে আসুন ভোট দিন।”
সন্ত্রাস আড়াল করতে নির্বাচনী সভায় তৃণমূলের সর্বভাতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বিরোধীদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “রাজ্যে হরানো গণতন্ত্র গত দু’ বছরে ফিরিয়ে এনেছেন মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়। আপনারা নিশ্চিন্তে ভোট দিন।”
সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য শহর চাকদহের বাইরে ভালই ফল করেছে তৃণমূল। চাকদহ পুরসভাকে ঘিরে চান্দুরিয়া ১ ও ২, রাউতাড়ি, তাতলা ২, এবং পায়রাডাঙা সব ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই দখল করেছে তৃণমূল।
সাতাশ বছর ক্ষমতায় থেকে বামেদের ‘কর্মকাণ্ডও’ হাতিয়ার হতে পারত শাসক দলের। কারণ, শহরটার প্রসার করা ছাড়া আর কিছুই করেনি বামেরা। এমনই অভিযোগ শহরের অধিকাংশ বাসিন্দার। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা। আজও জঞ্জাল সাফাইয়ের পরিষেবা দিতে পারেনি বামফ্রন্টের শাসনে থাকা পুরসভা। নিকাশি ব্যবস্থার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। তবুও একটা ‘কিন্তু’ থেকে যাচ্ছে। সেটা কি?
চাকদহে কিন্তু তৃণমূল ‘ক্যাডার বাহিনী’র দাপট কমছে না। এই অতি উৎসাহই না কাল হয় শাসক দলের!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.