|
|
|
|
বরাদ্দ নেই, মিড-ডে মিল বন্ধ কোলাঘাটের বহু স্কুলে
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এক মাসেরও বেশি মেলেনি রান্নার চাল। আর প্রায় পাঁচ মাসের বেশি হল মেলেনি শাক-সব্জি, মশলাপাতি কেনার খরচ। ফলে মিড-ডে মিলের রান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, ভারতীয় খাদ্য নিগম থেকে চাল সরবরাহে সমস্যা হয়েছিল। শীঘ্রই স্কুলগুলিতে চাল পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু জেলার মধ্যে একমাত্র এই ব্লকে চাল নিয়ে কী সমস্যা হল, জানা যায়নি। আর বাকি রান্নার জন্য বরাদ্দ টাকাও বা কেন আসেনি, উত্তর মেলেনি। এ দিকে, স্কুলগুলি এই অবস্থার জন্য ব্লক প্রশাসনের একাংশের অদক্ষতাকেই দায়ী করছে। প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ, ব্লক প্রশাসনের যে কর্মীরা মিড-ডে মিলের কাজের দেখভাল করেন, তাঁদের গড়িমসিতেই এই অবস্থা।
বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল। তিনি বলেন, “কোলাঘাটের বেশ কিছু স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কী কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি। জেলার অন্যত্র চাল বা টাকার অভাবে মিড-ডে বন্ধ হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ নেই।”
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাট চক্রে ৭৩টি ও কোলাঘাট-১ চক্রে ৮০টি মিলিয়ে এই ব্লকে মোট ১৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার পড়ুয়া রয়েছে। অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। বাড়িতে গরম ভাত খেয়ে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থাকে না অনেকেরই। দু’টো খেতে পাবে এই ভরসাতে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠান বহু অভিভাবক। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল পরিবেশন না হওয়ায় স্বভাবতই তাঁরা ক্ষুব্ধ।
কোলাঘাটের সাগরবাড় এলাকার পদুমপুর প্রাথি মক বিদ্যালয়ে ১২৯ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। অগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ। প্রধান শিক্ষক মেঘনাদ খামরুই বলেন, “গত জুলাই মাসের ১২ তারিখে শেষ বার মিড-ডে মিলের জন্য চাল পেয়েছিলাম। সেই চাল দিয়ে অগস্ট মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মিড-ডে মিল হয়েছে। তারপর আর চালানো যায়নি। এ দিকে, গত এপ্রিল মাস থেকে রান্না করার জন্য শাক-সব্জি, মশলাপাতি কেনার টাকা মেলেনি। আমরাও আর কতটা টানব।” কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জগন্নাথপুর প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক সুবল সামন্তও জানান, শেষ জুলাই মাসের জন্য চাল বরাদ্দ হয়েছিল। সেই চাল দিয়ে অগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত টানা হলেও আর চালানো যায়নি। কোলাঘাটের ভোগপুর মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি আনন্দ হাণ্ডা বলেন, “প্রথমে ব্লক প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। সুরাহা না হওয়ায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
এই অবস্থা কেন?
কোলাঘাটের বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদারের বক্তব্য, “গত অগস্ট মাসে চালের সরবরাহ নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। ভারতীয় খাদ্য নিগম থেকে চাল পাওয়া যাচ্ছিল না। গত তিন-চার দিন হল চাল সরবরাহ হয়েছে। স্কুলগুলিতে চাল পাঠানো হচ্ছে। তবে, তার জন্য মিড- ডে মিল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয় না। কিছু স্কুলে হয়তো অতিবর্ষণের জন্য রান্না বন্ধ ছিল।”
আর তেল, মশলা, শাক-সব্জির খরচ আসছে না কেন?
ব্লক প্রশাসনের এক কর্মী জানান, এমনিতেই এই বাবদ টাকা তিন চার মাস অন্তর আসে। ব্লক প্রশাসন থেকে গ্রাম শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে লেনদেন হয়। এ বার পঞ্চায়েত ভোট দেরি হওয়ায় অধিকাংশ জায়গায় এখনও গ্রাম শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়নি। ফলে টাকা তুলতে অসুবিধা হচ্ছে।
কিন্তু তা হলে তো পুরো জেলাতেই এই সমস্যা হওয়ার কথা। শুধু কোলাঘাটে কেন?
জনে-জনে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর মেলেনি। |
|
|
|
|
|