দলে ধারালো হচ্ছে লক্ষ্মণ বধের যুক্তি-শেল
কিছুতেই আত্মসমর্পণ নয়। এই নীতির উপরে দাঁড়িয়ে যাদের লড়াই করার কথা, তারাই তৃণমূলের কাছে মাথানত করে বসায় প্রবল বিতর্ক বেধেছে সিপিএমের অন্দরে! বস্তুত, আগামী লোকসভা ভোটের আগে সিপিএমের পুরনো ক্ষত ফের উস্কে দিয়েছে হলদিয়া-কাণ্ড।
হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তমালিকা পণ্ডা শেঠের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন দুই সিপিএম কাউন্সিলর। অনুপস্থিত থেকেছেন আরও এক জন। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। হলদিয়ার পুরবোর্ড হাতছাড়া হয়ে গেলেও তিন কাউন্সিলরকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় হাত দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দীর্ঘ দিন ফেলে রাখা সাংগঠনিক কাজ এ বার সেরে ফেলতে চাইছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশ।
গত রাজ্য সম্মেলনেই দলের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন তমালিকাদেবীর স্বামী তথা তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। মূলত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৎপরতায় বাদ পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের নিয়ন্ত্রণ রয়ে গিয়েছিল তাঁর হাতেই। এর পরে গত বছর হলদিয়ার পুরভোটে প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সিপিএম বোর্ড ধরে রাখতে সফল হওয়ায় দলে শেঠ-দম্পতির কদর বেড়েছিল। তমালিকাকে রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসার ভাবনাচিন্তাও গতি পেয়েছিল। আর জামিনের শর্ত মানতে পূর্ব মেদিনীপুরে যেতে না-পারলেও কলকাতায় বসেই জেলা সিপিএমে প্রভাব বজায় রাখছিলেন লক্ষ্মণবাবু। জেলার নেতারা কলকাতায় এসে তাঁর পরামর্শ নিয়ে দল চালাচ্ছিলেন। এ বার হলদিয়া পুরসভা এবং সুপ্রিম কোর্টের ঘটনা লক্ষ্মণবাবুদের নিয়ে দলে ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক কানু সাহুর অসুস্থতার জন্য এখন তাঁর জায়গায় কাজ চালাচ্ছেন প্রশান্ত প্রধান। লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ বলেই কানুবাবুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে দোলাচলে ভুগছিল আলিমুদ্দিন। জোড়া ঘটনার পরে জেলা নেতৃত্বে বদলের প্রক্রিয়ায় নতুন উদ্যমে নেমেছেন বুদ্ধবাবুরা।
নেতৃত্বে রদবদলের আগে অবশ্য হলদিয়ায় অস্বস্তি সামাল দিতে হচ্ছে। দলের এক রাজ্য নেতার ক্ষোভ, “হলদিয়ায় তৃণমূল যা করেছে, নিন্দার ভাষা নেই! কিন্তু আমরা কী করলাম? বহু জায়গাতেই আমাদের নেতা-কর্মীরা এবং তাঁদের পরিবার আক্রান্ত। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে, হাতে না-পারলে ভাতে মারা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো আত্মসমর্পণ করব না বলে লড়ছি। আর হলদিয়ায় কাউন্সিলরেরা তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়ে দিলেন?” প্রসঙ্গত, কাউন্সিলরেরা লক্ষ্মণ-শিবিরের লোক বলেই দলে পরিচিত। পরিস্থিতি আঁচ করেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয়েছে আলিমুদ্দিন। তাতে বোর্ড ফেরানো যাবে না জেনেও।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “ভয়েই করুন বা প্রলোভনে, কাজটা দল-বিরোধী। প্রক্রিয়া চলছে। ওঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হবে।” রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, কোন পরিস্থিতিতে তাঁরা আর লড়তে পারছেন না, তা দলকে জানিয়ে ওই কাউন্সিলরেরা পদ থেকে অব্যাহতি চাইতে পারতেন। তাতে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হত। সরাসরি অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় দলের ভাবমূর্তিতে কালি লেগে গেল।
হলদিয়ায় যে দিন বাম কাউন্সিলরেরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, সে দিনই নন্দীগ্রাম-মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিন বহাল রাখার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে লক্ষ্মণবাবুর আইনজীবী বলেছেন, সামনের লোকসভা ভোটেও তিনি ফের তমলুক থেকে প্রার্থী হবেন!
জেলায় ঢুকতে না দেওয়া হলে তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন কী করে? এই ঘটনাতেও দলের অন্দরে বিস্তর প্রশ্ন ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের প্রশ্ন, “লোকসভায় বাকি ৪১টা কেন্দ্রের প্রার্থী ঠিক হল না, আর এক জন নিজেই আগাম বলে দিলেন, আমি প্রার্থী হব! কমিউনিস্ট পার্টিতে এ জিনিস ভাবা যায়?”
লক্ষ্মণবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টে যা হয়েছে, সেটা সম্ভাবনার কথা জানিয়ে নিছকই আইনি সওয়াল। রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। যার প্রেক্ষিতে এক রাজ্য নেতার পাল্টা সওয়াল, “এ আবার হয় নাকি? বলতে পারতেন, ওঁর বাড়ি-পরিবার যেখানে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। হঠাৎ লোকসভার দায়িত্ব নিতে গেলেন কেন!”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.