চরম দারিদ্র ওঁদের দমাতে পারেনি। অনটনকে নিত্য সহচর করেই দাঁতে দাঁত চেপে ওরা ফুটবল খেলে। খেলাধুলোর উন্নত মানের সরঞ্জামও ওদের কাছে অধরা। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হরিহরপাড়ার প্রত্যন্ত চোঁয়া এলাকার ১২ জন মেয়ে এ বছর বনগাঁয় অনুষ্ঠিত সুব্রত কাপ স্কুল প্রতিযোগিতায় খেলে এল।
সারা দেশ জুড়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগীতায় গত বারই মেয়েরা খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর মেয়েদের এই দল চোঁয়া উচ্চবিদ্যালয়ের হয়ে রাজ্য পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। সেখানে পুরুলিয়া জেলার একটি স্কুলের কাছে তারা পরাজিত হয়। জিতলে দিল্লিতে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ মিলত। রাজ্য স্তরে খেলার আগে জেলা স্তরে তারা ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতেছে। তারা সারা বছর ফুটবল খেলে এবং কখনও স্কুলে, কখনও জেলায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচে। |
জোর কদমে চলছে অনুশীলন। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। |
দলের অধিনায়ক রোজা খাতুনের বাবা সামান্য একটি দোকান চালান। স্ট্রাইকার জবা মালকে নিজের পেট চালাতে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে হয়। স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুনের বাবার দিনমজুরের কাজ করেন। দলের অন্য সদস্যারাও একই রকম অভাবী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাদেরও নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু বহরমপুর-হরিহরপাড়া রাজ্য সড়কের বাঁ দিকে থানা-লাগোয়া বড় মাঠে ভাদ্রের প্রখর রোদে প্র্যাকটিসে কামাই নেই। সাবিনা ইয়াসমিনের কথায়, ‘‘চা-মুড়ি খেয়ে স্কুলে আসি। স্কুলে মিড ডে মিল খেয়েই মাঠে নামি। সন্ধে পর্যন্ত চলে অনুশীলন।’’ স্ট্রাইকার জবা মাল বলেন, ‘‘খেলাতেই আনন্দ পাই।’’ অভাবের সংসারে ফুটবল খেলে কী হবে? মনোয়ারা খাতুনের স্পষ্ট জবাব, ‘‘চেষ্টা করব, রাজ্য বা দেশের হয়ে খেলার জন্য। তা যদি না-হয়, পুলিশ, সেনা, মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর সরকারি চাকরি পেলে আর সংসারে অভাব থাকবে না।’’ চোঁয়া উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার শিক্ষক অভিজিত্ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রত্যেকে দরিদ্র। আধপেটা খেয়েও ওরা নিয়মিত শারীর চর্চা করে।’’ ওদের কোচ চন্দন রাম বলেন, ‘‘আমি কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই ওই ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিই। প্রতিদিনই ওরা নতুন কিছু শেখার জন্য মুখিয়ে থাকে। ওদের উত্সাহ দেখে নিজেরই ভাল লাগে।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘স্কুলের ১২ জন মেয়ে জেলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এটা একটা গর্বের ব্যাপার। খেলায় হার-জিত আছে। আশা করি এ বছরের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে ওরা আরও ভাল ফল করবে।’’ এই খুদে খেলোয়াড়দের ভবিষ্যত্ কী? আইএফএ সচিব উত্পল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের দলগুলিকে আমরা উত্সাহিত করি। এ ছাড়া এই দলগুলি যদি খেলতে চায়, তবে তারা আবেদন করলে পরের বছর দ্বিতীয় গভর্নিং বডির মিটিংয়ে আমরা আলোচনা করে অনুমোদন দিই। এই অনুমোদন পেলে ওরা খেলার বিষয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা পেতে পারে।’’ |