নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্যামপুর |
বাদাবনের গাছের চারা বসল হাওড়ার নদীপাড়ে। ভাঙন রুখতে ম্যানগ্রোভ চারা রোপণে উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া পুলিশ। এই কাজে তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামবাসীরা।
হাওড়ার শ্যামপুরের বেলাড়িতে দ্রুত ভাঙছে হুগলি নদীর পাড়। সংলগ্ন জমির অনেকটাই বেলাড়ি শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম পরিচালিত বেলাড়ি বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের স্কুলের মালিকানাধীন। ভাঙন আটকাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ বহু বছর ধরে বনসৃজন করছেন নদীর পাড়ে। কিন্তু তাতেও ভাঙন রোখা যায়নি। ম্যানগ্রোভ চারা পুঁতলে ভাঙন কিছুটা রোধ করা যাবে, এই আশায় পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে হাত মিলিয়েছেন স্কুল ও আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে চারা রোপণের কাজ। নদীর পাড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার এলাকায় বেড়া দিয়ে চলছে চারা রোপণের কাজ। ম্যানগ্রোভ এমন এক ধরনের গাছ, যা জলে পচে না। উল্টে জলের দিকেই এগিয়ে যায় তার শিকড়-বাকড়। শাখা-প্রশাখা দিয়ে আঁকড়ে ধরে মাটি। পলি জমাট বাঁধে। ভাঙন আটকায়। সুন্দরবনে এ ভাবেই নদীপাড়ের ভাঙন রুখেছে ম্যানগ্রোভ। সেই অভিজ্ঞতাই এখানে কাজে লাগানো হয়েছে বলে জানান উলুবেড়িয়ার এসডিপিও শ্যামলকুমার সামন্ত। |
মাথা তুলছে কচি পাতা। —নিজস্ব চিত্র। |
বছরখানেক আগে হাওড়া জেলা পুলিশ (গ্রামীণ)-এর পক্ষ থেকেই এই উদ্যোগ করা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের সামাজিক সম্পর্ক বাড়াতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাতে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পটি।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে দিয়েছে জমি। অন্য দিকে, এলাকার মাটি এবং জলের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। জোয়ার-ভাটা খেলে ও নদীর জল সামান্য লবণাক্ত, এমন পরিবেশই ম্যানগ্রোভের জন্য উপযুক্ত। এখানে দু’টি শর্তই পূরণ হচ্ছে। পুলিশ কর্তারা জানান, অন্যত্র প্রকল্প করতে গেলে জমির সমস্যা হত। স্কুল কর্তৃপক্ষ জমি ব্যবহার করতে দেওয়ায় তাঁদের সুবিধা হয়েছে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি আধিকারিক হিসাবে কাজ করেছেন এমন অভিজ্ঞদের সাহ্যয্য নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে। এমনই একজন শ্যামপুরেরই কৃষ্ণেন্দু হাইত বলেন, “আমি কুলতলিতে কাজ করেছি। সেখান থেকেই ম্যানগ্রোভের চারা আনার ব্যবস্থা করি আমি। পুলিশের হাতে তুলে দিই।” শ্যামলবাবু নিজেও কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, “আপাতত ১৩টি প্রজাতির ম্যানগ্রোভ চারা এবং বীজ আনা হয়েছে। যেগুলি এই পরিবেশে মানিয়ে নেবে, পরে সেগুলিই বেশি করে রোপণ করা হবে।” আশ্রমের তরফে স্বামী সেবানন্দ বলেন, “আমরা সব সময়ে নজর রাখব, যাতে ম্যানগ্রোভ চারাগুলি কেউ নষ্ট না করে।”
জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ভরতলাল মীনা জানান, এমন উদ্যোগ আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, “শুধু ভাঙন রোখা নয়, পরিবেশ দূষণও কমবে এতে। সব দিক খোঁজ নিয়েই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি। প্রকল্পের সাফল্য দেখে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে পরিকল্পনা করা হবে।”
|