অনুমোদনের পরে চার বছর কেটে গেলেও চালু হল না মিড-ডে মিল। এমনই অবস্থা হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের নরেন্দ্রপুর নিউ সেট আপ আপার প্রাইমারি স্কুলে। প্রায় ৩২০ জনের ছাত্রছাত্রী পড়ে স্কুলটিতে। এর মধ্যে ১৩৯ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে প্রাথমিকে। বাকিরা আপার প্রাইমারিতে। একই চত্বরে চলছে দু’টি স্কুলের কাজকর্ম। প্রাথমিকের জন্য মিড ডে মিল চলে। কিন্তু আপার প্রাইমারিতে তা চালু হয়নি। সমস্ত পড়ুয়াদের মধ্যে সামান্য খাবার ভাগ করে দিতে গিয়ে বিব্রত হতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
স্কুলটি শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। প্রথমে নাম ছিল নরেন্দ্রপুর তফসিলি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাস হত নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। পরে ২০০৮ সালে স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে স্কুলটি নিউ সেট আপ আপার প্রাইমারি হওয়ার অনুমতি পায়। সেই মতো ২০০৯ সালে স্কুলের একটি ভবনের তিনটি ঘরে এবং আর একটি ভবনের তিনটি ঘরে শুরু হয় পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণির ক্লাস। কিন্তু তারপর চার বছর কেটে গেলেও পরিকাঠামো বেহাল। বিভিন্ন দফতরে বারবার জানিয়েও মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু করা যায়নি বলে আক্ষেপ প্রধান শিক্ষকের। |
মূলত গরিব ঘরের সংখ্যালঘু, তফসিলি এবং আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরাই পড়ে এখানে। জগৎবল্লভপুর ব্লকের শঙ্করহাটি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৮ শতক জমির উপরে অবস্থিত স্কুলটি। দু’টি দোতলা ভবন এবং একটি একতলা ভবন রয়েছে। স্কুলের নিজস্ব জমি না থাকায় রয়েছে নতুন ভবন তৈরিতে সমস্যা। স্কুলের পাশেই পুকুর এবং সেখানে গার্ডওয়াল না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পুকুরে পড়ে বিপদের আশঙ্কাও আছে। প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র ৭ জন। ২০০৪ সাল থেকেই প্রাথমিক স্তরে মিড-ডে-মিল চালু হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে ৯ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে নিউ সেট আপ স্কুল চালু হলেও সেখানে এখনও মিড-ডে মিল চালু হয়নি।
নিউ সেট আপ প্রাইমারির টিচার-ইনচার্জ সুতপা সুর বলেন, “আমরা কোনও ভাবে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লাস সামাল দিই। আরও শিক্ষক থাকলে সুবিধা হত।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপীকান্ত মেথুর বলেন, “গরিব ছেলেপুলেরাই পড়তে আসে এখানে। একই স্কুলে শিশুদের মিড-ডে-মিল দেওয়ার সময়ে উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের সম পরিমাণে খেতে দেওয়া যায় না। খাবার ভাগ করে দিলে পেট ভরে না কারও। স্কুলভবন না থাকায় ছাত্র ভর্তি করতে বা ক্লাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে।” ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই স্কুলভবন বা পুকুরের পাশে গার্ডওয়াল করার জন্যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
জগৎবল্লভপুর ব্লকের মিড-ডে মিল আধিকারিক শুভঙ্কর দাস বলেন, “আপার প্রাইমারিতে মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু করার জন্য স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা না জানানোয় মিড-ডে মিল চালু করা যায়নি।” সরকারি নিয়মানুযায়ী, ব্লকের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা পরিদর্শকই ব্লকের নিউ সেট আপ স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির দায়িত্বে থাকেন।
জগৎবল্লভপুর (দক্ষিণ) কেন্দ্রের প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা পরিদর্শক তথা স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুদীপ্ত পুততুণ্ডু বলেন, “নতুন নিয়মে স্কুলগুলি চালু করে প্রথমে শিক্ষক না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল। এ বার স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” মিড-ডে মিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিভিন্ন অসুবিধার কারণে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত রাঁধুনিও নিয়োগ করা যায়নি। এ বার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে রাঁধুনি নিয়োগ করে দ্রুত মিড-ডে মিল চালু করা হবে।” |