ছটফটে মুখগুলো কথা বলছিল সমানে। ম্যাজিক শো শুরু হতেই এক্কেবারে চুপ। দুষ্টুমি-ভরা চোখগুলোতেই তখন পলক পড়ে না। কিন্তু রোজকার ক্লাস, একঘেয়ে রুটিনে ঘেরা ওদের জীবনে আচমকা যে দিনটা ঢুকে পড়ল, সেটাই বা ম্যাজিকের চেয়ে কম কীসে?
ছোট্টবেলার স্বপ্নগুলো আকাশ ছুঁতে চায়। সেটাই তো বরাবরের নিয়ম। সেই ছোট্ট জীবনগুলোতেই যদি ভরপুর ভরে দেওয়া যায় আকাশপাড়ি দেওয়ার সাহস? এক ধাপ এগিয়ে দেওয়া যায় ‘টেক অফ’-এর দিকে? ঠিক সেইটাই করে ফেলল ‘আনন্দমেলা মিল্ক বিকিস ফিউচার মাইন্ডস’। উড়ান শুরুর আগে স্বপ্নের আইকনদের সঙ্গে গোটা একটা দিন কাটানোর সুযোগ করে দিল একঝাঁক কচিকাঁচার। যাঁদের পরামর্শে ওদের কেরিয়ার, ওদের স্বপ্নগুলো ডানা মেলতে পারে আরও উঁচুতে ওঠার লক্ষ্যে। তার সঙ্গেই স্বপ্নের দৌড়ে বাকিদের পিছনে ফেলা সাত খুদেকে জুগিয়ে দিল এগিয়ে চলার পাথেয়। যার সাক্ষী রইল শনিবার সন্ধ্যার সাউথ সিটি স্কুল অডিটোরিয়াম। |
মাস দুয়েক আগে একটা প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছিল কলকাতা ও আশপাশের ১০০টি স্কুলে। পড়ুয়াদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বড় হয়ে তারা কী হওয়ার স্বপ্ন দেখে, কেন তা হতে চায় এবং সেই স্বপ্ন সফল হলে কতটা পাল্টে দেবে তাদের ও আশপাশের জীবন? উত্তর এসেছিল অসংখ্য। তার থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ এবং অভিনেতা সাতটি কেরিয়ারে বাছাই করা হয়েছিল ১০৫ জনকে।
আর তার পর? প্রতিটি বিভাগে ১৫ জন ছেলেমেয়ের দল একটা গোটা দিন কাটাল তাদের আইকনদের সঙ্গে। ঘষেমেজে নিল ভাবনার ভুলত্রুটিগুলো, নতুন করে গড়েপিটে নিল স্বপ্নগুলোকে। বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র, চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, দুই সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত এবং জয় সরকার, ক্রীড়াবিদ সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং সহ-উদ্যোক্তা ব্রিটানিয়ার এক দল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কাটানো দিনটার কথা ফের লিখতে বলা হয়েছিল ১০৫ জন খুদেকে। তার ভিত্তিতেই বেছে নেওয়া হয় প্রতিটি বিভাগের সেরাদের।
হিন্দু স্কুলের ক্লাস থ্রি-র ছোট্ট শাশ্বত দত্ত আবিষ্কার করতে চায় মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানো অজানা কণাদের। বিদ্যা ভারতী মোমিনপুরের ক্লাস ফোরের অনুষ্কা নন্দন গান আর তবলা দুটোই চালিয়ে যাচ্ছে সমান পারদর্শিতায়। দাবার চালে মাত করতে চায় গরফা ডিএনএম হাইস্কুল ফর বয়েজের ক্লাস সিক্সের ঋজু ঘোষাল। নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাসের ক্লাস সিক্স, সঞ্জীবকুমার দাস স্বপ্ন দেখে অত্যাধুনিক কম্পিউটার বানিয়ে ফেলার। ওই স্কুলেরই ক্লাস সেভেনের শুভদীপ দে গরিবদের চিকিৎসায় গড়ে তুলতে চায় হাসপাতাল। শুঁড়াকন্যা বিদ্যালয়ের ক্লাস সিক্সের প্রতিভা সাহা ছবি এঁকে দেওয়াল ভরিয়ে ফেলত ছোট্টবেলা থেকেই। আর ডি নবিলি স্কুল, মাইথনের শ্রেয়সী চৌধুরী অভিনয়ে তাক লাগাতে চায়।
ওদের প্রত্যেকের হাতে শনিবার সন্ধ্যায় তুলে দেওয়া হল এক লক্ষ টাকার স্কলারশিপ। বাদ যায়নি বাকিরাও। তাদের জন্যও ছিল নির্দিষ্ট অঙ্কের চেক। সিধু-র সঞ্চালনায় স্বপ্ন দেখার এই সন্ধ্যায় বাড়তি পাওনা ছিল বিভবেন্দুর গান এবং অবশ্যই রোশনী শীল ও সুস্মিতের ম্যাজিক শো।
ছোট্ট মুখগুলোয় তখনও সেই একটা দিনের ‘ম্যাজিক’-এর ঘোর! |