চেনা ছবিটার এ বার বদল হতে চলেছে।
দীর্ঘ দিন ধরে যেখানে কালো নোংরা জলে আবর্জনা জমে থাকত, সেখানেই এখন উল্টো চিত্র। টলটলে পরিষ্কার জল। সাদা-নীল রঙের রেলিং, বাগান ও বাহারি আলোয় সেজে উঠেছে দুই পাড়। পরিবর্তনের এই ছবি টালি নালা তথা আদিগঙ্গার।
দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে মজে যেতে বসেছিল আদিগঙ্গা। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেই আদিগঙ্গার ভোলবদলে উদ্যোগী হয় সরকার। সেই মতো গত বছর থেকে এটির সংস্কার শুরু করে রাজ্য সেচ দফতর। খিদিরপুর থেকে গড়িয়া, এই সাড়ে ১৫ কিলোমিটার এলাকার পলি, আবর্জনা তুলে আদিগঙ্গার সংস্কার করা হয়েছে। সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, “আগে আবর্জনা জমে মজে গিয়ে আদিগঙ্গা নালার আকার নিয়েছিল। পুনরায় ড্রেজিং করে, পলি তুলে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” চলতি বছরেই সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে।
|
এ ভাবেই সেজেছে আদিগঙ্গার পাড়ের কিছু অংশ। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
তবে শুধু মজে যাওয়া খাল, নদী সংস্কারই নয়, তার সৌন্দর্যায়নেও নজর দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী-আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু খাল, নদীর নাব্যতা বাড়ালেই হবে না। সেগুলি স্থানীয় ও বাইরের মানুষদের কাছে যাতে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তার দিকেও নজর দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।” সেচ দফতর সূত্রের খবর, খিদিরপুর থেকে টালিগঞ্জ প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে আদিগঙ্গার দুই পাড়ের সৌন্দর্যায়ন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তারই সূচনাপর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিক পিছনেই আদিগঙ্গার এক কিলোমিটার অংশের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। ওই অংশের দু’দিকে ব্লক পাথর দিয়ে পাড় বাঁধানো হয়েছে। সাদা-নীল রঙের রেলিং দিয়ে ঘেরা হয়েছে। তৈরি হয়েছে বাহারি ফুলের বাগান। লাগানো হচ্ছে বাহারি আলোও।
সেচমন্ত্রী জানান, ওই অংশের সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে দু’টি পর্বে। বর্ষার জন্য মাঝে কাজ বন্ধ ছিল। তবে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে। খরচ ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরকে জলপথে এক সুতোয় বেঁধে দেওয়া হোক। রাজীববাবু বলেন, “আদিগঙ্গার সৌন্দর্যায়ন শেষ হওয়ার পরেই আমাদের পরিকল্পনা আছে কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর ছোট ফেরি পরিষেবা চালু করার।” সেচ দফতর সূত্রের খবর, শহরের বেশ কয়েকটি অংশের নিকাশি নালা এই আদিগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত । ফলে এই আবর্জনা সরাসরি নিকাশি নালার মাধ্যমে এসে পড়ে আদিগঙ্গায়। ইতিমধ্যেই কেএমডিএ এবং কলকাতা পুরসভার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের বৈঠক হয়েছে। তাতে দফতরের আধিকারিকেরা প্রস্তাব দিয়েছেন, যে চার-পাঁচটি নিকাশি নালা দিয়ে নোংরা জল ও আবর্জনা আদিগঙ্গায় পড়ছে, সেগুলির মুখ ঘুরিয়ে কালীঘাটের বড় নিকাশি নালার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হোক। সে কাজও দ্রুত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। |