বাজারের উত্থান-পতনে কম-বেশি লোকসানের সামনে পড়তে হয় বেশির ভাগ লগ্নিকারীকে। অভিজ্ঞ মানুষেরাও অনেক সময়ে ভুল করেন বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আগাম অনুমান করতে।
অর্থাৎ বাজারজনিত ঝুঁকি আছে এমন লগ্নিপত্রে টাকা ঢাললে লোকসানের ঝুঁকি থাকছেই। এই লোকসান ছাড়া আর এক ধরনের ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হয় শুধুমাত্র নিজেদের গাফিলতির জন্য। যেমন আপনি হয়তো কয়েকটি শেয়ার ডি-ম্যাট না-করিয়ে কাগজ হিসেবে ধরে রেখেছেন। হঠাৎই দেখা গেল, এদের মধ্যে কোনও কোনও শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে উঠেছে। দাম উঠতে দেখে আপনি তড়িঘড়ি ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ারগুলি ডি-ম্যাট করার ব্যবস্থা নিলেন। কিন্তু শেয়ারের দাম আপনার জন্য একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না। কয়েক দিন পরে যখন শেয়ার ডি-ম্যাট হল, তখন হয়তো দেখা গেল, ওই সব শেয়ারের দাম আবার আগের জায়গায় চলে এসেছে। তখন আপনার হাত কামড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। |
শুধু শেয়ারের ক্ষেত্রেই নয়, অনেক ক্ষেত্রে লোকসান আমাদের মেনে নিতে হয় স্থির আয় প্রকল্পের ক্ষেত্রেও, সময় মতো পদক্ষেপ না-করার কারণে। এই ধরনের লোকসান এড়াতে ঠিক সময়ে যে-সব কাজ আমাদের করে রাখা প্রয়োজন, তা একনজরে দেখে নেব।
১) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কে ওয়াই সি সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া না-হয়ে থাকলে তা অবিলম্বে জমা দিন। স্বাক্ষর অতি পুরনো এবং পরিবর্তিত হয়ে থাকলে বর্তমান স্বাক্ষর ব্যাঙ্কে নথিবদ্ধ করুন।
২) সি টি এস চেক বই সংগ্রহ করা না-হয়ে থাকলে ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করুন এই নতুন ধরনের চেক বইয়ের জন্য। সি টি এস নয়, এমন চেক ইস্যু করা হলে তা বাতিল হওয়ার (বাউন্স) সম্ভাবনা থাকবে।
৩) সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা অলস ভাবে পড়ে থাকলে এবং তার আশু প্রয়োজন না-থাকলে, সেই টাকা মেয়াদি জমা প্রকল্পে রেখে বেশি সুদ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। স্টেট ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে সুদের হার বাড়িয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। অন্যরাও হয়তো তা করবে।
৪) মিউচুয়াল ফান্ডে কে ওয়াই সি কাগজপত্র নথিবদ্ধ করা না-হয়ে থাকলে অবিলম্বে তা করুন। এটা না-থাকলে সময় মতো ইউনিট কিনতে এবং বিক্রি করতে অসুবিধা হতে পারে।
৫) বাজারে নথিবদ্ধ শেয়ার যদি কাগজ হিসেবে ধরা থাকে, তবে তা অবিলম্বে ডি-ম্যাট করে নিন, যদি তা ভবিষ্যতে বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকে। একই সঙ্গে কোনও ব্রোকারের দফতরে খুলে ফেলুন একটি শেয়ার ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট।
৬) কোনও মেয়াদি জমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে তা হয় তুলে নিন, না-হয় রিনিউ করুন নতুন মেয়াদের জন্য। অন্যথায় সুদ বাবদ লোকসান হবে।
৭) এখন চলছে ডিভিডেন্ডের মরসুম। চলবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত। শেয়ারের বড় পোর্টফোলিও থাকলে মিলিয়ে নিন সব ডিভিডেন্ড এল কি না। না-এসে থাকলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি লিখুন বা ই-মেল পাঠান। ডিভিডেন্ড যদি সরাসরি ব্যাঙ্কে জমা পড়ে, তবে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করে দেখুন, সব ডিভিডেন্ড জমা পড়ল কি না। নজর রাখুন, সব ডিভিডেন্ড অ্যাডভাইস এসেছে কি না। এগুলির প্রয়োজন হবে আয়করের ব্যাপারে। আগের ৭ বছরের মধ্যে কোনও ডিভিডেন্ড না-পেয়ে থাকলে তা এখনই আনানোর ব্যবস্থা করুন। ৭ বছর অনাদায়ী থাকলে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা হয় এবং তা কখনওই ফেরত পাওয়া যায় না।
৮) একক নামে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলে তা যুগ্ম নামে করিয়ে নিন। সম্ভব না-হলে নমিনির নাম নথিভুক্ত করুন।
৯) জীবনবিমার প্রিমিয়াম বকেয়া থাকলে তা মিটিয়ে নিন। সময় থাকতে রিনিউ করুন স্বাস্থ্যবিমা।
১০) মনে উইল করার বাসনা থাকলে তা করে ফেলুন। ‘কাল করব’ বলে বসে থাকবেন না।
১১) সম্পত্তি-বাড়ি-জমি কিনে থাকলে তা রেজিস্ট্রি করে নিন। দেরি করলে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ বেড়ে যেতে পারে।
১২) পেনশন প্রাপকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ দাখিল করতে ভুলবেন না। অন্যথায় পেনশন সাময়িক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
১৩) যাঁরা ইউলিপ প্রকল্পের সদস্য, তাঁরা বাজারের দিকে নিয়মিত নজর রাখুন এবং সময় মতো ইক্যুইটি/ব্যালান্সড অথবা ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে তহবিল সরিয়ে নিন।
১৪) মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা নিয়মিত নজর রাখুন ন্যাভ-এর দিকে। অভীষ্ট উচ্চতায় ন্যাভ পৌঁছলে ইউনিট বিক্রি করে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতে পারেন।
১৫) ব্যাঙ্কের লকারের ভাড়া সময় মতো মিটিয়ে দিন।
১৬) আগাম কর জমা করুন সঠিক সময়ে।
১৭) উপযুক্ত ক্ষেত্রে সময় মতো জমা করুন ১৫জি অথবা ১৫এইচ ফর্ম।
১৮) গৃহঋণ পরিশোধ হয়ে থাকলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অথবা গৃহঋণ কোম্পানির কাছ থেকে দলিল ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করুন। |