এক দিন গাড়ি বর্জনের প্রস্তাব, রাজ্য বলছে হাস্যকর

• পেট্রোপণ্য মহার্ঘ। সপ্তাহে এক দিন নিজের গাড়ি ছাড়ুন। বাসে-ট্রামে চলাফেরা করুন। তাতে জ্বালানির খরচ কমবে। বাঁচবে পেট্রোল-ডিজেল। কমবে দূষণ।

• রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার কমান। খরচ কমবে। গ্যাস বাঁচবে।


পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমাতে এই সব পরামর্শ কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলির। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছেন তিনি। মইলির বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হলে সারা রাজ্যে পেট্রোপণ্যের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়বে। পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমবে। আর কমবে দূষণ। এই নিয়ে অক্টোবরে দিল্লিতে কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে। সব রাজ্যের প্রতিনিধি পাঠাতে বলেছে কেন্দ্র।
রাজ্য সরকার অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই হাস্যকর ও অবাস্তব আখ্যা দিয়েছে। তাই ওই কর্মশালায় এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিকে পাঠানো হবে না বলে সিদ্ধান্তও নিয়েছে।
কী আছে মইলির পরামর্শপত্রে?
মহাকরণ সূত্রের খবর, ৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ পরামর্শ-সহ একটি চিঠি লিখেছেন মইলি। মমতা দিন তিনেক আগে সেটি পেয়েছেন। তাতেই পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এবং তার ব্যবহারে রাশ টানতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের আশা, এই সব পরামর্শ মানলে পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে দূষণের মাত্রাও কমতে থাকবে।
মইলির ব্যবস্থাপত্রের প্রথমটিই হল ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানো। কেন্দ্রের পরামর্শ, দেশের সব শহরেই সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিনকে ‘বাস ডে’ ঘোষণা করা হোক। ওই দিন শহরবাসী ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে বাসে-ট্রামে বা ট্রেনে চড়বেন। গাড়ি কম বেরোনোয় পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবহার অনেক কম হবে। কমবে দূষণের মাত্রাও।
জ্বালানির ব্যবহার কমাতে অফিসটাইম ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে কেন্দ্র। তারা চায়, দিনের বিভিন্ন সময়ে অফিসের কাজকর্ম চালানোর ব্যবস্থা হোক। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের যুক্তি, অফিসটাইম একসঙ্গে হলে ওই সময়ে প্রচুর যানবাহনকে রাস্তায় বেরোতে হয়। অফিসটাইম ছড়িয়ে গেলে গাড়ির সংখ্যাও কমবে। ব্যবহার কমবে পেট্রোল-ডিজেলেরও।
সরকারি বাসের চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে পটু করে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। দক্ষ চালকের হাতে জ্বালানির খরচ কম হয়। তা ছাড়া ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হলে জ্বালানি খরচ কমবে। ডিজেলের খরচ কমাতে চাষে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং পাম্পসেটের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের উপরেও জোর দিয়েছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক।
রান্নার গ্যাস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মইলির চিঠিতে। বলা হয়েছে, বাসিন্দারা যাতে যথাসম্ভব কম গ্যাস ব্যবহার করে রান্নাবান্না করেন, সব রাজ্য সরকারেরই সেই পরামর্শ দেওয়া উচিত।
রাজ্য সরকার অবশ্য কেন্দ্রের এই সব পরামর্শ হাস্যকর ও অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। মহাকরণের অনেক কর্তাই বলছেন, শহরবাসীকে কোনও মতেই সপ্তাহে এক দিন বাসে বা ট্রামে চাপতে বাধ্য করানো যায় না। একই ভাবে কার বাড়িকে কী রান্না হবে, রাজ্য সরকার কোনও অবস্থাতেই তা ঠিক করে দিতে পারে না। অফিসটাইম ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধে অনেক। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “অফিসের সময় পরিবর্তন করা বাস্তবসম্মত নয়। সরকারের এই ধরনের নির্দেশ অনেক বেসরকারি সংস্থা না-ও মানতে পারে।”
মইলির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে একহাত নিতেও ছাড়েনি রাজ্য সরকার। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র পেট্রোপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা এই সব অবান্তর পরামর্শ দিচ্ছে। জ্বালানির ব্যবহারে রাশ টানার ব্যাপারে রাজ্য যে পিছিয়ে নেই, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বাংলার সরকারি কর্তার। তাঁরা জানাচ্ছেন, পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমানোর জন্য সরকার অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে সচিবেরা নিজেদের গাড়ির বদলে একসঙ্গে ভলভো বাসে যান। এতে পেট্রোলের খরচ অনেকটাই কম হয়।
পরামর্শ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, অক্টোবরে বিষয়টি নিয়ে সব রাজ্যের পরিবহণ দফতরের সচিব ও কর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। ওই কর্মশালায় যোগ দেওয়ার জন্য সব রাজ্যকেই অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। রাজ্যের বক্তব্য, পুরো বিষয়টিই তো অবাস্তব। তাই ওই কর্মশালায় রাজ্যের কাউকে পাঠানোর কারণ নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.