|
|
|
|
সমস্যা কবে ঘুঁচবে, উঠছে প্রশ্ন |
মহেন্দ্র জেনা • শান্তিনিকেতন |
বাংলায় রুপোলি ছোট পর্দার দৃশ্য থেকে বক্স অফিসে হিট করা বড় সিনেমার বাঘা বাঘা দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছে সোনাঝুরিতে। পর্যটকদের মতো ছাত্রছাত্রী, কবি, সাহিত্যিক নিজের কাছে টানার পাশাপাশি শিল্পীদের রং তুলির স্পর্শে বারে বারে উঠে এসেছে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির নাম। এখানে বাউল, ফকিরদের আনাগোনা লেগেই থাকে। আর দিনটা যদি শনিবার হয়, তা হলে তো কথাই নেই। ভিড় উপচে পড়ে সেচ দফতরের শ্যামবাটি ক্যানাল বরাবর। গন্তব্য আমারকুটীর, মহর্ষি নিবাস, আমাদের হাট, প্রকৃতি সংগ্রহশালা এবং খোয়াই বনের হাট।
এ ছাড়াও শতাধিক আদিবাসী বাসিন্দাদের বাস। এই রাস্তার ধারে শাল, শেগুন, সোনাঝুরি জঙ্গলের মাঝে বনেরপুকুরডাঙা, সোনাঝুরি, বল্লভপুরডাঙা-সহ একাধিক আদিবাসী জনপদ গড়ে উঠেছে। সকলের পারাপারের জন্য একমাত্র পথ এই ক্যানাল বরাবর লাল মোরামের রাস্তা। কিন্তু খানাখন্দে ভর্তি এই লাল মোরামের রাস্তায় নাভিশ্বাস ওঠে সকলের। পথচারী, সাইকেল আরোহী থেকে রিকশা, অটো, দু’চাকা, চার চাকার গাড়িতে করে প্রাণ হাতে নিয়ে নিত্য চলা ফেরা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে কাছের ও দূরের পর্যটক সকলেই। তাঁরা অবিলম্বে সোনাঝুরি রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা সোমাই হেমব্রম, বিপ্লব মাঝি, সঞ্জিত সাহানিদের অভিযোগ, “রাস্তা সংস্কারের জন্য বারে বারে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আর্জি রাখা হয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছেও। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে ওই রাস্তা সারানো হচ্ছে না।” |
|
কর্দমাক্ত সোনাঝুরির পথ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
বল্লভপুর অভয়ারণ্যের গা ঘেঁষে যাওয়া এই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল শতাধিক হস্তশিল্পী। শনিবারের এক বেলার খোয়াই বনের অন্যহাটে বেশ ভাল রকমের হস্তশিল্পের সামগ্রী বেচাকেনা হয়। অন্যহাটের সম্পাদক জিতেন দাস বলেন, “চলাফেরা করার একমাত্র পথ যদি বেহাল হয়, তবে পর্যটকেরা আসবে কেমন করে! শুধু তাই নয়, আশপাশের আদিবাসী জনপদে যাওয়ার জন্য তো এই রাস্তা ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। সকলের সমস্যার কথা ভেবে প্রশাসন উদ্যোগী হলে, তবে অনেকটা সুরাহা হবে।”
বল্লভপুর অভয়ারণ্য লাগোয়া সেচ দফতরের ওই রাস্তা যে চলাফেরার অযোগ্য, তা স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের অনেকেই। বন দফতরের বোলপুরের রেঞ্জার অনিল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। সেচ দফতরের ওই রাস্তায় বন দফতরের কিছু করার নেই।” তাঁর যুক্তি, “ভৌগলিক দিক থেকে দেখতে গেলে সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী ক্যানাল (দক্ষিণ ডিভিশন)-এর পরিদর্শনের রাস্তা। আবার শ্রীনিনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের এলাকার আওতাভুক্তও বটে।”
কার দায়িত্বে ওই রাস্তা? এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র (ময়ূরাক্ষী দক্ষিণ ক্যানাল) সঞ্জয়কুমার সিংহ বলেন, “আমার এক্তিয়ারভুক্ত ওই রাস্তা। কিন্তু সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার, সেই টাকা নেই। সরকারি বরাদ্দের অপেক্ষায় আছি। অনুদান পেলে অবিলম্বে কাজ শুরু হবে।” তবে তাঁর দাবি, অন্য কোনও সরকারি দফতর বা সংস্থা যদি ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে চায়, নির্দিষ্ট আবেদন জানালে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ দিকে, ওই রাস্তার শোচনীয় অবস্থার নিয়ে ওয়াকিবহল শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ। পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক মৃদুল হালদার বলেন, “আপাতত ওই এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কর্মসূচি এই মুহূর্তে পর্ষদের কাছে নেই। আশপাশের এলাকার রাস্তায় বিদ্যুদয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এলে কাজ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, ওই রাস্তায় ব্যাপক হারে ভারী যান চলাচলের ফলে এমন দশা হয়েছে। বড় ও ভারী গাড়ি যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য লোহার বিশেষ ব্যরিকেড করা হয়েছিল। কিন্তু তা চুরি হয়ে যাওয়ায় ফের ব্যাপক মালবাহী গাড়ি চলাচল করছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন মৃদুলবাবু।
কিন্তু সমস্যা কবে মিটবে, তার আশ্বাস মিলল না কারও কাছ থেকেই। |
|
|
|
|
|