জঙ্গি হানায় রক্তাক্ত রবিবারও: কেনিয়া
মল-তাণ্ডবে ২ ভারতীয়-সহ হত ৫৯
শুরুটা হয়েছিল শনিবারেই। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির ঝাঁ চকচকে ওয়েস্টগেট শপিং মল জুড়ে রবিবারও ছিল গুলির শব্দ, রক্ত, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ আর আতঙ্ক। রণক্ষেত্রের চেহারা নেওয়া এই মলে প্রাণ হারালেন ৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই ভারতীয়। আছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টার কয়েক জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও। এই হামলার পিছনে আল কায়দার মদতে বেড়ে ওঠা আল সাহবাব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। দু’দিন ধরে তাদের জঙ্গিদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে কেনিয়ার সেনাকে। শেষ পর্যন্ত তারা তাই ইজরায়েলি কম্যান্ডোদের সাহায্য নিয়েছে বলে কেনিয়া সরকার সূত্রে খবর। তাতেও রবিবার রাত পর্যন্ত বিশেষ লাভ হয়নি।
গত কাল ওয়েস্টগেট মলে যখন হামলা হয়, সেখানে তখন গমগম করছে ভিড়। স্থানীয় লোকেরা ছাড়াও বিদেশি থেকে কূটনীতিক অভিজাত এলাকার এই মলে কে নেই তখন! এই ভিড়টাকেই নিশানা করেছে জঙ্গিরা।
কেনিয়ার রাজধানীতে এই জঙ্গি হানায় নিহত দুই ভারতীয়-সহ (৪০ বছরের শ্রীধর নটরাজন, ৮ বছরের
পরমাংশু জৈন) ৫৯। উদ্ধার হওয়ার পরেও আতঙ্ক কতটা ঘিরে ছিল, দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ছবি: রয়টার্স।
হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৪০ বছরের শ্রীধর নটরাজন ও আট বছরের পরমাংশু জৈন। আহত ৩০০ জনের মধ্যে রয়েছেন শ্রীধরের স্ত্রী, পরমাংশুর মা। আছেন দুই ভারতীয় কূটনীতিকও। ঘটনার নিন্দা করে কেনিয়া সরকারকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীও। ওয়েস্টগেটের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ঘানার কবি ও প্রাক্তন কূটনীতিক কোফি আওনুর। হতাহতদের মধ্যে আছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ইজরায়েলের নাগরিকরাও। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কেনিয়াট্টাকে ফোন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জানান, নাইরোবির পাশেই আছে ওয়াশিংটন।
কূটনীতিকদের একাংশ এই হামলাকে ভারতে ২৬/১১-র সঙ্গেও তুলনা করেছে। তাঁদের বক্তব্য, যে ভাবে তাজ হোটেল, ট্রাইডেন্ট হোটেল বা নরিম্যান হাউসের দখল নিয়েছিল আজমল কসাবরা, দীর্ঘ ক্ষণ লড়াই চালিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে, ওয়েস্টগেটের হামলার সঙ্গে যেন তার যথেষ্টই মিল। এখানেও লড়াই গড়িয়েছে দিন থেকে রাতে, তার পর রাত ভোর হয়ে পরের দিনে।
দু’দিনের লড়াইয়ে এখনও কোনও জঙ্গির প্রাণহানির খবর মেলেনি। আপাতত সেনা-কম্যান্ডো অভিযানের একটাই সাফল্য, হাজার খানেক মানুষকে মল থেকে বের করে আনতে পেরেছে তারা। কেনিয়া প্রশাসনের একটি অংশ মনে করছে, সম্ভবত এটি আত্মঘাতী হামলা। তাই জঙ্গিরা শেষ পর্যন্ত লড়াই দিয়ে যাচ্ছে। তারা সংখ্যায় ঠিক ক’জন, তাও স্পষ্ট নয়।
তখনও চলছে তাণ্ডব। জঙ্গিদের হাত থেকে বাঁচতে মহিলা ও দুই শিশু আশ্রয়
নিয়েছে নাইরোবির শপিং মলের পানশালার মেঝেতে। ছবি: এএফপি।
সোমালিয়ায় মৌলবাদীদের মোকাবিলায় আমেরিকা, ফ্রান্স, ইথিওপিয়ার পাশাপাশি সেনা পাঠিয়েছে কেনিয়াও। তার পর থেকেই কেনিয়ায় ছোট-বড় হামলা চালিয়েছে আল-সাহবাব জঙ্গিরা। গত কাল টুইটারে ওয়েস্টগেট হামলার দায় স্বীকার করে আল-সাহবাব। তার পরে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, ফের একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছে আল-সাহবাব। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই জঙ্গি গোষ্ঠীর পিছনে শুধু আল কায়দার মদত রয়েছে, তা-ই নয়, বেশ কয়েক জন পাকিস্তানিও তাদের সাহায্য করছে। যেমন, এখন আল-সাহবাবের নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে আছে এক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তার নাম আবু মুসা মোম্বাসা।
কেনিয়ায় জঙ্গি হামলা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৮ সালে আফ্রিকার তিনটি দেশে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় আল-কায়দা। তার মধ্যে ছিল নাইরোবির দূতাবাসও। ২০০২ সালে ফের মোম্বাসায় ইজরায়েলিদের নিশানা করে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ বারে যে শপিং মলটিকে নিশানা করেছে জঙ্গিরা, তার আংশিক মালিকানা এক ইজরায়েলি সংস্থার। কেনিয়া প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, সে জন্যই ইজরায়েলি বাহিনী ও বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
বস্তুত, ওয়েস্টগেট বা ওই এলাকার কোনও মল, বাড়ি বা অন্য কিছু যে জঙ্গিদের নিশানা হতে পারে, সে ব্যাপারে কেনিয়া সরকারকে বেশ কয়েক বার সতর্ক করেছিল আমেরিকা-সহ বিভিন্ন পশ্চিমী দেশ। সেটাই সত্যি হয়েছে এ বার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.