অসহায় চোখে কাটোয়া হাসপাতালের মহিলা বিভাগে শুয়েছিলেন কালীদাসী বারুই। পাশে বসে তাঁর বৌদি মিলন বারুই বলছিলেন, “দেহে একদম রক্ত থাকে না। দু’সপ্তাহ অন্তর রক্ত দিতে হয়। ভেলোর যাওয়া হয়েছিল। কাজ হয়নি।” কালীদাসীদেবীর আয়ু অবশ্য শুক্রবার রাতেই ফুরিয়ে যাওয়ার কথা।
রবিন হালদার।
—নিজস্ব চিত্র।
|
উল্টো দিক থেকে দাঁড় টানতে টানতেই দৃশ্যটা প্রথম চোখে পড়ে মাঝি রবিন হালদারের। মাঝ ভাগীরথীতে হাবুডুবু খাচ্ছেন এক বৃদ্ধা। দেখা মাত্রই জলে ঝাঁপ দেন তিনি। শুক্রবার ঘড়িতে তখন রাত ৮ টা। কয়েক মিনিটের চেষ্টায় অনেকটা সাঁতরে বৃদ্ধার চুলের মুঠি ধরে নিজের কব্জায় আনেন রবিনবাবু। তারপর টানতে টানতে তোলেন নৌকায়।
কাটোয়ার ভাগীরথী ঘাটে আনার পর আসে কাটোয়া পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
তাঁরা বৃদ্ধাকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রশাসন সূত্রে খবর ওই মহিলা, কালীদাসী বারুই দীর্ঘদিন ধরেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। বিপিএল তালিকাভুক্ত এই বৃদ্ধা থাকেন কাটোয়ার একাইহাটে। অসুস্থতার জন্য মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ওই বৃদ্ধা আত্মহত্যা করতেই জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসক সিদ্ধেশ্বর গুপ্ত বলেন, “পরীক্ষার পর বৃদ্ধার রক্তে হিমোগ্লোবিন কম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।” কালীদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একাইঘাট শনিমন্দিরের কাছে ভাই কালীপদ বারুইয়ের কাছে থাকেন তিনি। আগে পরিচারিকার কাজ করলেও অসুস্থতার জন্য বর্তমানে কাজ করতে পারেন না। আপাতত, স্থানীয় খাজুরডিহি পঞ্চায়েত থেকে বার্ধক্য ভাতা পান তিনি। কালীপদবাবু চাষ করে সংসার চালান। মিলনদেবী বলেন, “আমাদের সংসারের অবস্থা বেশ খারাপ। তার মধ্যেও ননদকে ভেলোরে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে বৌদি যে মনে মনে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল, বুঝতে পারিনি। ভাগ্যিস ওই মাঝি ভগবানের দূত হয়ে এসেছিলেন।” তবে রবিনবাবুই প্রথম নন, পুরসভা পরিচালিত ওই ঘাটের ইজারাদার জানান, এর আগেও নৌকার মাঝিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের জীবন রক্ষা করেছেন।
কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ কালীদেবী বাড়ি থেকে বের হন। হাঁটতে হাঁটতে শহরের হরিসভা পাড়ায় আসেন তিনি। সেখান থেকে নদিয়ার বল্লভপাড়াগামী নৌকায় ওঠেন। নৌকা মাঝ ভাগীরথীতে যেতেই জলে ঝাঁপ দেন তিনি। তখনই বল্লভপাড়ার দিক থেকে আসছিল আরও একটি নৌকা। সেটির মাঝি রবিনবাবু। কালীদেবীকে ডুবতে দেখে তিনি জলে ঝাঁপ দেন।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক অচেনা বৃদ্ধাকে বাঁচিয়ে মাঝ বয়সী রবিনবাবু অবশ্য নির্বিকার। নদিয়ার কালীগঞ্জের বল্লভপাড়ার এই বাসিন্দা বলেন, “চোখের সামনে এক মহিলাকে মরতে দেখে বিবেকের ডাকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। এটা আমার কতর্ব্য।” |