নবীনবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপ) দু’টি গোষ্ঠী। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার কালনা কলেজে। ছাত্র সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৭ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের নাম জাহিরুল ইসলাম ও সৌভিক দেবনাথ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার নবীনবরণ উৎসব উপলক্ষ্যে কালনা কলেজ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কলেজে নিরাপত্তা ছিল কড়া। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পরেই ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। এই নিয়েই শুরু হয় প্রাথমিক গণ্ডগোল। পরিচয়পত্র না আনায় কয়েকজন পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এর জের ছড়ায় কলেজের ভিতরে। কলেজের নোটিশ বোর্ডের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে কালনা থানার ওসি বাহিনী নিয়ে কলেজে চলে আসেন। এরপর কলেজের ভিতর কয়েকজন ছাত্র পুলিশকে লক্ষ্য করে গালিগালাজ করতে থাকে। |
ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা বাড়তে শুরু করায় বন্ধ হয়ে যায় অনুষ্ঠান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাস থেকেই তিনজন ছাত্রকে আটক করে। ওসিকে মঞ্চে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করতে দেখা যায়। সাময়িক ভাবে অনুষ্ঠান শুরু হলেও ফের শুরু হয় গণ্ডগোল। কলেজ চত্বরে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠী। আহত অবস্থায় ৫ জন ছাত্রকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দু’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ পুলিশ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এ দিনের ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ রাজীব মুখোপাধ্যায়ের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কলেজের গর্ভনিং বডির সদস্য ও স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ওই কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একদা এসএফআইয়ের শক্ত ঘাঁটি হলেও বর্তমানে কালনা কলেজে এসএফআইয়ের কোনও সংগঠন নেই বললেই চলে। ছাত্র সংসদ টিএমসিপির দখলে। কিন্তু এরপরেও এই কলেজে ও কলেজের বাইরে প্রায়ই ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। কারণ, কালনা কলেজ টিএমসিপি ইউনিট কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। সম্প্রতি কালনা স্টেশন চত্বরেও কলেজ ইউনিটের দু’টি গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে দু’জন ছাত্র আহত হয়। জেলায় বিরোধীছাত্রসংগঠনের প্রভাব কমে যাওয়া সত্ত্বেওবারবার নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে পড়েছে বর্ধমান জেলা টিএমসিপি। সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “যা হয়েছে সেটা একদমই ঠিক হয়নি। জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে সংগঠনের কালনা ১ ব্লক সভাপতি মঙ্গল দাস, কালনা শহর সভাপতি সৌরভ হালদার ও কালনা মহকুমা সভাপতি সন্দীপ বসুকে শো কজ করে তিনদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে উচ্চ নেতৃত্বকে।” |