তোলা আদায়ে বাধা দেওয়ায় পাঞ্জাবের এক ট্রাক চালককে গুলি করে খুনের অভিযোগের উঠেছে একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ মালদহের মহদিপুর সীমান্তে বিএসএফ ক্যাম্প লাগোয়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম গুরমন সিংহ (৪৮)। অভিযোগ, ওই এলাকায় দুষ্কৃতীরা গাড়ি থামিয়ে জবরদস্তি টাকা আদায় করছিল। সে সময়ে এক ট্রাকচালক তা দিতে রাজি হননি। তাঁকে মারধর করা হয়। ওই সময়ে হরমনবাবু বাধা দিতে যান। তখনই তাঁকে গুলি, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীরা সংক্যা অন্তত ১২ জন ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ট্রাক চালকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সীমান্তে তোলা আদায় চললেও পুলিশ, বিএসএফ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে গুরমনকে প্রাণ হারাতে হল। ওই ঘটনার পরে শনিবার সকাল থেকে ক্ষুব্ধ ট্রাক চালকরা মহদিপুর বাণিজ্য কেন্দ্রের সামনে অবরোধ শুরু করেন। দু’দেশের মধ্যে পণ্য চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য পুলিশ, বিএসএফ সঙ্গে বৈঠক করে রফতানিকারক ও ট্রাক মালিকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার পর দুপুর ২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। মূলত, মহদিপুরের সুসতানির মোড় থেকে মহদিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য চলে বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মহদিপুরে তোলাবাজি রুখতে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, “যে কোনও মূল্যে তোলাবাজি বন্ধ করতে হবে। সীমান্তে কোনও অপরাধ বরদাস্ত করা হবে না।”
অভিযোগ, শুক্রবার রাতে তোলা দিতে অস্বীকার করায় বিহারের বাসিন্দা এক ট্রাক চালককে মারধর করে এলাকায় তোলাবাজি চালানো কয়েকজন দুষ্কৃতী। পেছনে থাকা ভূট্টা বোঝাই ট্রাকের চালক পাঞ্জাবের বাসিন্দা গুরমন সিংহ প্রতিবাদ করায় তোলাবাজদের রোষের মুখে পড়েন। তাঁকে লক্ষ করে দুটি গুলি চালানো হয়। একটি গুলি তার বুকে এবং অন্যটি নিম্নাঙ্গে লাগে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ট্রাক চালক হরিকিশোর রায় বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ ১০-১২ জনের তোলাবাজদের দল আমার কাছে টাকা চায়। আপত্তি করলে আমাকে মারধর করে ট্রাক থেকে নামিয়ে পকেট থেকে ১৩ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সে সময়ে পেছনের ট্রাক থেকে গুরুমন সিংহ আমাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে। তাঁকে লক্ষ করে গুলি ছোঁড়ে তোলাবাজরা।” গুরুমন সিংহের ট্রাকের খালাসি রেশম সিংহ বলেন, “ঘটনার সময় আমি চিৎকার করি, বিএসএফ জওয়ানদের সাহায্যও চাই। কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।”
বিএসএফের চৌকির অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট আইচ আর টামটা বলেন, “আমরা তো ক্যাম্প ছেড়ে বের হতে পারি না। তাই বাইরে কী হচ্ছে তা বলতে পারি না। তোলাবাজির বিষয়টি পুলিশ দেখবে।” মালদহ মার্চেন্ট চেম্বারর অফ কর্মাসের সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গ এক্সপোর্টার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেন, “জোর করে তোলা আদায় নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশের একাংশের সঙ্গে তোলাবাজদের যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” এই বিষয়ে এ দিন মহদিপুর সীমান্ত ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জীব ঘোষ বলেন, “দিনের পর দিন যে ভাবে তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে তাতে ভিন রাজ্যে কেউ মহদিপুর সীমান্তে পণ্য নিয়ে আসতে চাইছে না। |