চড়া রোদ উপেক্ষা করে ভিড় উপচে পড়ল উত্তরবঙ্গের ৫টি পুরসভার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শনিবার দিনের সব কটি পুরসভায় গড়ে ৮২ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। বড় মাপের গোলমাল না হলে, ভোটারদের ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া সহ নানা অভিযোগে কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। কিন্তু, পুলিশ সক্রিয় থাকায় দ্রুত পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে।
বালুরঘাট পুরভোটে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে আরএসপির এক প্রাক্তন কাউন্সিলরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম অরিজিৎ মোহান্ত। তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা দেবী ১ নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপির প্রার্থী। বালুরঘাটে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগে তৃণমূলের খোকন কর্মকার নামে এক সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোট শুরু হতেই ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে আরএসপির এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তৃণমূলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ” অরিজিৎবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি কাউকে ভয় দেখাননি। তাঁর বক্তব্য, “সকাল থেকে দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে বসেছিলাম। বিনা কারণে আমায় পুলিশ গ্রেফতার করে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বালুরঘাটে ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। গতবার ভোটের হার ছিল ৮২ শতাংশ। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ পুরসভায় ভোট পড়েছে ৮৮ শতাংশ। গত পুর নির্বাচনে মেখলিগঞ্জে ভোট পড়েছিল ৯২ শতাংশ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, বামেরা ছাপ্পা ভোট দিতে পারেনি বলে ৪ শতাংশ ভোট কমেছে। মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক পরেশ অধিকারীর দাবি, মেখলিগঞ্জের বহু মানুষ কাজের জন্য কেরল, রাজস্থান সহ ভিনরাজ্যে থাকায় ভোট কম পড়েছে। কংগ্রেস নেতা মেখলিগঞ্জ ৪ নম্বর ওয়ার্ড প্রার্থী মায়াশঙ্কর সিংহ বলেন, “বামেদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ভোটার ভোট দেননি মনে হচ্ছে।”
উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা ভোট পড়েছে ৮৬ শতাংশ। প্রসঙ্গত, একদা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হলেও গত পঞ্চায়েত ভোটে উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদ দখল করতে পারেনি কংগ্রেস। তৃণমূলও পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে। এবার ডালখোলা পুরভোটেও সেই ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না তা নিয়েই দিনভর ভোটারদের মধ্যে আলোচনা চলেছে।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যের মধ্যে যে কটি জায়গায় বামেরা বিপর্যস্ত হননি, তার মধ্যে রয়েছে মেখলিগঞ্জ। সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ততা প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী পরেশ অধিকারী ফের জেতেন। পরেশবাবুরা বিধানসভা ভোটের মতো পুরসভায় ভাল ফলের আশা করছেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অভিযোগও করেছেন, ফরওয়ার্ড ব্লক বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে গোলমালের ছক কষেছিল।
কোচবিহারের হলদিবাড়ি পুরসভা দুদশক ধরে কংগ্রেসের দখলে। সেখানে ভোট পড়েছে ৯১ শতাংশ। কংগ্রেসের আশা, আগের ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যাবে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসকে যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলা যাবে বলে আশা করছে। বাম নেতারা সারাদিন ভোটা পরিচালনার ফাঁকে কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট কাটাকুটিতে কটি আসনে সুবিধা মিলতে পারে সেই হিসেব কষেছেন।
আলিপুরদুয়ার পুরসভা এলাকায় ভোটগ্রহণ পর্ব একেবারেই নিরুত্তাপ ছিল। তবে এই দিন প্রায় প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের আলোচনায় যে প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে তা হল, পুরভোটের পরে আলিপুরদুয়ার জেলা হিসেবে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হবে তো? ২০টি আসনের আলিপুরদুয়ার পুরসভা দীর্ঘ দিন কংগ্রেসের হাতে। এ বার তা দখল করার জন্য তৃণমূল মরিয়া। |