সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রাজ্য পুলিশের পরবর্তী ডিজি হতে চলেছেন জিএম প্রভু রাজাশেখর রেড্ডি। ১৯৮২ সালের এই আইপিএস অফিসার এখন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের (আইবি) ডিজি-র দায়িত্বে রয়েছেন। এ মাসেরই শেষ দিনে বর্তমান ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় অবসর নেবেন। তাঁর স্থলাষিভিক্ত হওয়ার কথা রেড্ডির।
নতুন ডিজি-র নাম চূড়ান্ত করতে সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রস্তুতি চলেছে মহাকরণে। বেশ কয়েক জন আইপিএসের নাম বিবেচনায় ছিল সরকারের। তাঁরা হলেন বিজয় কুমার, রবীন্দ্রজিৎ সিংহ নালোয়া, রাজ কানোজিয়া এবং প্রভুশেখর রেড্ডি। মহাকরণ সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠমহলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি এক জন সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ এবং প্রচারবিমুখ অফিসারকে ডিজি হিসেবে পেতে চান। যোগ্যতার নিরিখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে দু’দফায় ও রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রেড্ডিকে বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সমাজবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন রেড্ডি। বীরভূম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এসডিপিও থাকার পরে প্রথমে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পরে দার্জিলিঙে একই দায়িত্ব সামলান। ১৯৯০-এ তিনি সিবিআইয়ে চলে যান। ফেরেন ২০০০-এ। তার পরে ডিআইজি হিসেবে বর্ধমান রেঞ্জ এবং ইএফআর-এ ক’বছর থাকার পরে ২০০৫ সালে ফের চলে যান কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে। চেন্নাইয়ে দায়িত্ব নেনে রেলের মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার হিসেবে। ২০১১ সালে ফেরার পরে পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রথমে এডিজি (প্রশাসন) ও পরে এডিজি (আইবি)-র দায়িত্ব সামলান। চলতি বছরেই তিনি ডিজি-র মর্যাদা পান আইবিতেই। বাম জমানায় ডিজি হয়েছিলেন নপরাজিতবাবু। রাজ্যে শাসন ক্ষমতা বদলেরও পরে দীর্ঘ সময় ওই পদে ছিলেন তিনি। সাধারণ ভাবে এক সরকারের আমলে নিযুক্ত ডিজি নতুন শাসকের পছন্দের হন না। কিন্তু ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সব শীর্ষ কর্তাকে বদলের রাস্তায় হাঁটেননি। কারণ, তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই তাঁর কাছে বর্তমান ডিজি-র নিষ্ঠা ও সততা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝে নপরাজিতবাবুও দ্রুত পাঁচটি কমিশনারেট তৈরি ও পুলিশে কর্মী ও অফিসার নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
ডিজি-র চেয়ারে কে বসবেন, তা নিয়ে অনেকের নাম বিবেচনায় থাকলেও মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন ডিজি নিয়োগে যাতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বাম জমানায় ডিজি এবং প্রিন্সিপাল চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব ও বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছিল। তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সেই মামলার জেরে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বর্তমান সরকারকে। তাই বাড়তি সতর্ক থেকে ডিজি বাছাই করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।” |