কন্ট্রোল রুমেই লেখা হল শো-কজ
খন বিকেল সাড়ে ৩টে। তৃণমূল ভবনে একতলার একটা ঘর থেকে বেরিয়ে হলঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। পাশেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ঘর। খোলা দরজা দিয়ে ডেকে মুকুলবাবু বললেন, “প্রেসটা সেরে আসি বক্সীদা। সব ঠিকই আছে মনে হচ্ছে।”
সব ঠিক? পুরভোটে সারাদিন গোলমালের নানা খবর ভেসে এসেছে। কখনও পানিহাটি, কখনও গুসকরা থেকে এসেছে কর্মীদের ফোন। টিভির পর্দাতেও সারাদিন গোলমাল, ভাঙচুর, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের খবর। ভোট বয়কট করছেন বিরোধীরা, সে খবরও শুনেছেন। তবু মুকুলবাবু মোটের উপর ছিলেন খোশমেজাজেই। ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে ভোটের হার জানতে চাইছিলেন নানা জেলা থেকে। আর বলছিলেন, “ভোট তো ঠিকই হচ্ছে। পার্সেন্টেজ ভালই।” সকালেই যন্ত্রপাতি নিয়ে তৃণমূল ভবনে হাজির ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। অন্য দিন হলে দেরি করে এলেও চলে। কিন্তু শনিবার সবাই সাত-সকালে হাজির। যন্ত্রপাতি বলতে মেটাল ডিটেক্টর। রাজ্যের ১২টি পুরসভার নির্বাচনের দিন তৃণমূল ভবনে সারাদিনই দলের কর্মীদের আনাগোনা, দুপুর থেকেই সাংবাদিকদের ভিড়। দলের নীতি তৈরি করেন যাঁরা, নির্বাচনের জন্য তাঁদের নিয়ে তৈরি হয় ‘বিশেষ টিম’। সেই দলে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা থেকে চিকিৎসক নেতা, আইনজীবী, সকলেই রয়েছেন। পুরসভা ধরে ধরে তাঁরা বিশ্লেষণ করছেন ভোটদানের নকশা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেই রিপোর্ট পৌঁছে যাচ্ছে মুকুল রায় এবং সুব্রত বক্সীর হাতে। দলনেত্রীর কাছেও খবর পৌঁছেছে।
দল ক্ষমতায় আসার আগে কন্ট্রোল রুম খোলা হত কালীঘাটে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের বাড়িতে। তিনিই নির্বাচন পরিচালনা করতেন। এখন সেই ভার মুকুল রায়ের হাতে। সকাল ৭টায় তৃণমূল ভবনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুকুলবাবু। ভোট হচ্ছে সেই ন’টি জেলার সভাপতিদের ফোন করেন তিনি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন আসেন। এরই ফাঁকে কয়েক বার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেন মুকুল রায় ও সুব্রত বক্সী। তবে কন্ট্রোল রুমে সকলকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ল্যাপটপ, আইপ্যাডে নিয়মিত খবর আদান-প্রদান করা হচ্ছে। জেলাস্তরের নেতাদের কাছে এসএমএস করে পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হচ্ছে। ১২টি পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে যাঁরা তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সকলকেই এ দিন তৃণমূল ভবন থেকে ফোন করা হয়েছে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, সমস্যা হলে তা কেমন। কোনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে কিনা। এমনকী ভোটে ওই প্রার্থীর জেতার সম্ভবনা কতটা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও। কন্ট্রোল রুমে সারাদিন তেমন কোনও উদ্বেগ ছিল না। বাইরে তেমন প্রকাশ না করলেও, মুকুলবাবু একান্তে স্বীকার করলেন, উত্তরবঙ্গ নিয়ে চিন্তা রয়েই গিয়েছে। “ওই চারটি পুরসভায় কংগ্রেসের একটু প্রভাব রয়েছে। আর ভোটার কম হলে ভোটের ফল বোঝাও কঠিন হয়,” বললেন তিনি। এত কাজের মধ্যেও সাংবাদিক সম্মেলনে যাওয়ার আগে একটা জরুরি কাজ সেরে নিতে ভুললেন না। তিন সাংসদ কুণাল ঘোষ, তাপস পাল ও শতাব্দী রায়কে দলবিরোধী কাজের জন্য ‘শো কজ’ চিঠির খসড়া তৈরি করিয়ে নিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং দলের অন্য কয়েক তরুণ নেতাদের দিয়ে। কী পদ্ধতিতে চিঠি পাঠানো হবে, কন্ট্রোল রুমেই তা-ও ঠিক হয়ে গেল। সাংবাদিক বৈঠকে বলার জন্য তথ্য-পরিসংখ্যানও নোট করে নিলেন। তারপর ঘর থেকে বেরোলেন প্রেস রুমের দিকে।

ভোট দিয়েও হাতে কালি লাগানো হয়নি, অভিযোগ
ভোট দিয়েছেন ভোটার। কিন্তু তাঁর হাতে কালি লাগানো হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের পানিহাটি, বর্ধমানের মতো একাধিক পুরসভায় এমন ঘটনায় ঘটেছে বলেছে অভিযোগ করেছেন ভোটারদের একাংশ। অনেক ভোটার ভোটকেন্দ্র ছাড়ার আগেই ব্যাপারটি খেয়াল করেছেন। অনেকে ভোটার ব্যাপারটি খেয়াল করেছেন ভোট দিয়ে বুথের বাইরে বেরিয়ে আসার পরে। তবে সব পক্ষেরই বক্তব্য, ভোটকেন্দ্রে বিষয়টি জানালে জবাব মিলেছে, “ভোট দিয়েছেন তো? ওটাই ঠিক আছে।” এ ছাড়া অন্য অভিযোগ রয়েছে অনেক ভোটারের। হাতে কালি লাগালেও শেষ পর্যন্ত শাসক দলের বাধায় ভোট-যন্ত্রের বোতাম টিপতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেছেন কিছু ভোটার। নির্বাচন কমিশনের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কালি লাগানো হয়নি এই মর্মে কোনও অভিযোগ তাদের কাছে জমা পড়েনি। এই রকম অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানিহাটি পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের হাতে কালি না লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। ভোটাররা জানিয়েছেন, এমনও হয়েছে হাতে কালি লাগিয়ে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার পরেই সেই কালি উঠে গিয়েছে। বর্ধমান পুর-এলাকার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের কেন্দ্রের ভোটার এক মহিলাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এ ভাবে ভোট করার কী দরকার?” কালি না লাগানোর ঘটনায় সিপিএম ও কংগ্রেসের অভিযোগের তির শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.