বিয়ের আয়োজন তখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। নিমন্ত্রিতরাও আসতে শুরু করেছেন। ব্যস্ত কাজি। নিমন্ত্রিতদের জন্য রান্নাবান্নাও চলছে জোরকদমে। কনে সাজা দেখতে নিকাহ ঘরে ভিড়। বর আসার অপেক্ষায় সবাই। ঠিক সেই সময় ছন্দপতনে কেটে গেল তাল। একদল লোক হন্তদন্ত হয়ে বিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। তাঁদের ঠিক পিছনে পিস্তল ও রাইফেল নিয়ে কয়েক জন পুলিশকর্মী। ডাক পড়ল কনের বাবা-মার। শুক্রবার দুপুরে এমনই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এদিন পেশায় চাষি সালিউর রহমানের ১৭ বছরের মেয়ে স্থানীয় বাহারাইল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির সালেমা খাতুনের সঙ্গে ইসলামপুরের বেলতলি এলাকার বাসিন্দা পেশায় চাষি জয়নাল আবেদিন নামে বছর চব্বিশের এক যুবকের বিয়ের কথা ছিল। স্থানীয় সূত্রে ওই খবর জানতে পেরে জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির সদস্যরা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য ও পুলিশ কর্মীদের নিয়ে সালিউরের বাড়িতে পৌঁছে তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ে আটকে দেন। এর পরে শিশু কল্যাণ কমিটির তরফে কাউন্সেলিংয়ের জন্য সালেমা ও তাঁর পবিবারের লোকজনকে রায়গঞ্জের সূর্যোদয়ে হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
সালিউরের অভাবের সংসার। ৩ বিঘা জমিতে চাষ করে তাঁদের সংসার চলে। তিন মেয়ের মধ্যে সালেমাই সবচাইতে বড়। ঘটকের মাধ্যমে বিনা পণে জয়নালের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন সালিউর। জয়নালেরও অভাবের সংসার। বাবা তমিজুদ্দিন মহম্মদ পেশায় দিনমজুর। এ দিন মেয়ের বিয়েতে আত্মীয় ও প্রতিবেশি মিলিয়ে ১৮০ জনকে নিমন্ত্রণ করেন সালিউর। বিয়ের খরচ জোগাতে কয়েকজন প্রতিবেশির কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছিলেন তিনি।
শিশুকল্যাণ কমিটির তরফে সালেমাকে উদ্ধার করে হোমে নিয়ে যাওয়ার পরে বাবা সালিউর ও মা জাহেদাকেও সেখানে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানেই ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া কেনও আইন বিরুদ্ধ তা বোঝানো হয়। এর পর সালিউর কমিটির কাছে মুচলেকা জমা দিয়ে জানান তাঁরা ভুল করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন। সালিউরবাবু বলেন, “সামান্য জমিতে চাষবাস করে তিন মেয়ের পড়াশুনা ও সংসার চালাতে পারি না। তাই বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি যে ভুল করেছি।” সালেমা জানায়, তিনি পড়াশুনা করতে চান। তবে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে বিয়েতে অমত করেননি। |