বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী পরেশ অধিকারী। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মেখলিগঞ্জে ‘পরেশ-মিথ’ ভাঙতে না পারলেও ফরওয়ার্ড ব্লক তথা বামেদের অনেকটাই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। প্রচারে ভাল মতো জোর দিয়েছে তারা। চার জন মন্ত্রী এবং কলকাতা থেকে একাধিক প্রদেশ স্তরের নেতা তৃণমূলের হয়ে এখানে প্রচার করেছেন। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কৃষি মন্ত্রী বেচারাম মান্না, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনরা প্রচারে গিয়ে এলাকার অনুন্নয়নের পাশাপাশি পরেশবাবুর নামে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়াও তৃণমূলের দুই সাংসদ মুকুল রায় ও সুব্রত বক্সিও প্রচারে গিয়েছেন মেখলিগঞ্জে। তাঁরা কটাক্ষ করেছেন, পুরসভা হওয়া সত্ত্বেও মেখলিগঞ্জ এলাকা এতটা পিছিয়ে পড়েছে যে, খোদ পরেশবাবুই মেখলিগঞ্জ ছেড়ে জলপইগুড়িতে গিয়ে বাড়ি করে থাকছেন! |
তৃণমূলের অভিযোগ, কটাক্ষের প্রতিক্রিয়ায় পরেশবাবু অবশ্য উত্তেজিত নন। ‘ভিত্তিহীন কথাবার্তা’র জবাব হয় না বলে এড়িয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন পরেশবাবু। ঠিক গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ভাবে প্রচার করেছেন তিনি, সেই পথেই হেঁটেছেন প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী। পুরসভা নির্বাচনে পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পরেশবাবুর বাড়ি। সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। অন্য ওয়ার্ডগুলিতে মিটিং, মিছিলের পাশাপাশি স্থানীয় সব স্তরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। পরেশবাবুর অনুগামীরা দাবি করেন, মেখলিগঞ্জের মানুষের সঙ্গে একটা নিবিড় যোগাযোগ থাকার সুবাদেই পুরভোটে শেষ হাসি হাসবেন ‘পরেশদা’ই। তাঁদের যুক্তি, এখন রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হলেও এলাকার মানুষেরা বেশিরভাগই আপদে-বিপদে ছুটে যান সেই পরেশবাবুর কাছেই।
ঘটনা হল, পরিবর্তনের প্রবল হাওয়া রাজ্যের নানা এলাকায় থাকলেও মেখলিগঞ্জে কিন্তু পরেশবাবুর জনপ্রিয়তা অনেকটাই অটুট বলে তৃণমূল-কংগ্রেসের অনেক সমর্থকও আড়ালে-আবডালে স্বীকার করেন। ফলে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে এলাকার বিধায়কের দল। তা ছাড়া, মেখলিগঞ্জে বাম তথা ফব-র সংগঠন দুই ডানপন্থী দলের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। |
আরও একটা সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন বামেরা। তা হল, ডানপন্থী দুই দলের প্রার্থীরা সব আসনেই ময়দানে লড়ছেন। তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেস পুরসভার ৯টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। ৪ নম্বর আসনে মেখলিগঞ্জের কংগ্রেস নেতা মায়াশঙ্কর সিংহ কার্যত পাল্লা দিচ্ছেন তৃণমূলের সঙ্গে। তাই ভোট কাটাকুটির খেলায় শেষ অবধি বামেরাই বাড়তি সুবিধা পাবে বলে অনেকেই হিসেব কষছেন। কংগ্রেস নেতা মায়াশঙ্কর সিংহ বলেন, “বাম তথা পরেশবাবুর উপর এখানকার মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়েছে বলেই জানি। তৃণমূলের রাজ্য পরিচালনাও মানুষ মেনে নিতে পারছে না। এবারে অন্যরকম কিছু ঘটবে বলে আশা করছি।” |