|
|
|
|
বাড়তি কড়ি গুনেও কয়লার ময়লা ধুতে বিপুল গচ্চা
প্রভাত ঘোষ • কলকাতা |
বেশি দাম দিয়ে কেনা যে সর্বোচ্চ মানের কয়লা ধুয়ে ব্যবহারের দরকার পড়ে না, সেই কয়লার ময়লা ধুতেই আচমকা কয়েকশো কোটি টাকার টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল)। পিডিসিএল কর্তাদের অভিযোগ, বাড়তি দাম দিয়ে কেনা সত্ত্বেও ওড়িশার মহানদী কোল্ডফিল্ডসের ওই কয়লায় মাটি ও পাথর থাকছে। যদিও কোল ইন্ডিয়া এই অভিযোগ উড়িয়ে পিডিসিএল-এর চিঠি দেখাচ্ছে যাতে কয়লার মান নিয়ে প্রশংসাই করা হয়েছে।
ইস্টার্ন কোলফিল্ডস (ইসিএল), ওড়িশার মহানদী কোলফিল্ডস (এমসিএল) এবং ভারত কোকিং কোল লিমিটেড (বিসিসিএল) কোল ইন্ডিয়ার এই তিনটি সংস্থা থেকে কয়লা কেনে নিগম। সারা বছরে নিগম যে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ টন কয়লা কেনে, তার ৬২ শতাংশ বা সাড়ে ৯১ লক্ষ টনই আসে এমসিএল থেকে। ইসিএল ও বিসিসিএল দেয় যথাক্রমে সাড়ে ৪১ লক্ষ ও ১৩ লক্ষ টন।
কয়লার মান অনুযায়ী তা কখনও ধোয়া হয়, কখনও হয় না। এ বারের বিতর্ক এমসিএল-এর বসুন্ধরা কোলফিল্ডের ‘ই’ গ্রেডের কয়লা নিয়ে। রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব মলয় দে এবং নিগমের সিএমডি বরুণ দে উভয়েই স্বীকার করেছেন, ওড়িশার বাকি খনিগুলির তুলনায় নিম্ন মানের কয়লার দাম যেখানে টনপ্রতি ৯৫৮ টাকা, সেখানে টনপ্রতি ১১৫০ টাকা দিয়ে কেনা এই ভাল কয়লা ধুয়ে ব্যবহার করার দরকার পড়ে না। তবু ওই বসুন্ধরা খনি থেকে আসা ‘ই’ গ্রেডের কয়লা ধুতে ওয়াশারিতে পৌঁছনোর জন্য ৪ সেপ্টেম্বর টেন্ডার ডেকেছে পিডিসিএল। ২৫ লক্ষ টন উচ্চমানের কয়লা বসুন্ধরা খনি থেকে ৩৫-৩৮ কিলোমিটার দূরে বলান্ডা এলাকার একটি বিশেষ ওয়াশারিতে পৌঁছে দেওয়া ও তার পর পিডিসিএল-এর প্ল্যান্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সংস্থার সূত্রটি জানান, উচ্চ মানের কয়লা অপ্রয়োজনীয় ভাবে ফের ধোয়ার নাম করে তার খরচ দিতে রাজ্য সরকারের অন্তত কয়েকশো কোটি টাকা যাবে।
এমসিএল-এর ডিরেক্টর (অপারেশনস) এ কে তিওয়ারি জানিয়েছেন, এই বসুন্ধরা খনির কয়লারই ঢালাও প্রশংসা করে কিছু দিন আগে চিঠি দিয়েছে পিডিসিএল। এ দিন ভুবনেশ্বর থেকে টেলিফোনে তিনি বলেন, “পিডিসিএল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস আগেই আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে আমরা যেন বসুন্ধরা খনির কয়লাই পাঠাই। কারণ ওই খনি থেকেই একমাত্র উচ্চ মানের ‘ই’ গ্রেডের কয়লা পাওয়া যায়, যা ধুয়ে নেওয়ার দরকার হয় না।”
পিডিসিএল-এর সিএমডি এর উত্তরে বলেন, “গত ২৬ অগস্ট আমরা এমসিএল-কে আর একটি চিঠিও পাঠিয়েছি। তাতে জানানো হয়েছে, বসুন্ধরার কয়লা কিছুটা ভাল হলেও বাকি খনিগুলি থেকে যে নিম্ন মানের কয়লা পাঠানো হচ্ছে, তার মান অত্যন্ত খারাপ। এমনকী বড় বড় পাথরের চাঁইও কয়লার রেক-এ ভরে দেওয়া হচ্ছে।” নিম্ন মানের কয়লার সঙ্গে পাথর আসছে বলে বসুন্ধরার উচ্চ মানের কয়লা ধোয়ার দরকার পড়ছে কেন এই প্রশ্নে বরুণবাবুর জবাব, “আমাদের অভিজ্ঞতা হল, উচ্চ মানের কয়লার জন্য বেশি দাম দিয়েও আমরা বার বার প্রতারিত হচ্ছি। কয়লার নামে পাথর, মাটি চলে আসছে। তাই ঝুঁকি না-নিয়ে সব কয়লাই ওয়াশারিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিদ্যুৎসচিব মলয়বাবুর কথায়, উচ্চ মানের কয়লার জন্য চড়া দাম দিয়েও তিনটি কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে নিম্ন মানের কয়লা নিতে বাধ্য হচ্ছে পিডিসিএল। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জুন মাসে জাতীয় কম্পিটিশন কমিশনের কাছে নালিশ জানাই আমরা। গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও ডিভিসি-ও এর আগে একই অভিযোগ করেছে।” সচিবের যুক্তি, বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রাখতেই গাঁটের বাড়তি কড়ি খরচ করে ময়লা ধোয়া ছাড়া উপায় নেই পিডিসিএল-এর। |
|
|
|
|
|