পুস্তক পরিচয় ২...
এই সব লোক হচ্ছে প্রকৃত স্বপ্নের কারবারি
পার্টি বাইরে থেকে রাষ্ট্রের লাগাম কেড়ে নিয়েছে, ভিতর থেকে তার মন কাড়তে পারেনি। নাৎসী, ফ্যাশিস্ট ও বলশেবিক নিজ নিজ দেশের সমস্ত মানুষকে পার্টির সদস্য করতে সাহসী নয়, কারণ সেক্ষেত্রে ভোটের মর্যাদা আছে, ব্যক্তির মতামতের মূল্য আছে, যদি অধিকাংশের আনুকূল্য না পাওয়া যায় তবে পার্টির পলিসি পণ্ড হবে ও নেতৃত্ব পাত্রান্তরিত হবে।... রাষ্ট্র হবে জগন্নাথের রথ, জনসাধারণ তাকে টানবে, পার্টি হবে তার পাণ্ডা।’ ১৩৪২-এ পরিচয়-এ প্রকাশিত অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘ডিকটেটরশিপ’ নিবন্ধটি আজও প্রাসঙ্গিক বলেই পরিচয়-এ (সম্পা: বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্য) ফের প্রকাশ করা হল ‘ভাবনার কালান্তর’ বিভাগে, আছে এমন আরও ১১টি প্রবন্ধ। ‘আলোচকদের যে চিন্তাশীল মনের সন্ধান পাই, আজকের পরিবর্তিত যুগেও তা উপেক্ষণীয় নয়।’— জানানো হয়েছে পরিচয়-এর তরফে।
বহির্বিশ্বের সাহিত্যের মতো এ-দেশে কল্পবিজ্ঞানের সংস্কৃতি বা সাহিত্য তেমন ভাবে গড়ে না ওঠার কারণ হিসেবে অভিজিৎ গুপ্ত লিখছেন ‘স্বাধীনতা-পূর্ব স্বাধীনোত্তর যুগে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিজ্ঞান ভিত্তিক ও কলাভিত্তিক বিষয়গুলিতে বিশেষ আদান-প্রদানের পরিবেশ ছিল না।’ বিশ্বসাহিত্য-ই বিষয় পরিকথা-য় (সম্পা: দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়)। ‘যদি বিশ্বায়ন বিশ্বের বিশ্ব-ত্ব অপহরণ করে যেতে থাকে তবে তার উদ্ধারের দায়িত্ব নিতে পারে সাহিত্যও।’— অমিয় দেবের মন্তব্য তাঁর ‘কোন বিশ্বসাহিত্য? এক সংক্ষিপ্ত নিবেদন’-এ। এ ভাবে নানা দৃষ্টিকোণে বিশ্বসাহিত্যের আলোচনা— জাঁ বেসিয়ের, শুভা চক্রবর্তী দাশগুপ্ত, সৌরীন ভট্টাচার্য, ঈপ্সিতা চন্দ, তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রবাল দাশগুপ্ত, শ্যামলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা চক্রবর্তী, মীরাতুন নাহার, সুমনা দাস সুর প্রমুখ।
কারুকথা এইসময়-এর (সম্পা: সুদর্শন সেনশর্মা) ‘গণেশ পাইন সম্মাননা সংখ্যা’য় রামন শিব কুমার লিখেছেন ‘তাঁর শিল্পভাবনা লালিত হয়েছে বিষাদময়, অনুজ্জ্বল আঁধার আর আলোকিত খোশখেয়ালের যেন এক আশ্চর্য মিশ্রণে।’ অমিতাভ সেনগুপ্ত, মনোজ সরকার প্রমুখের রচনাও সঙ্গে। মৃণাল ঘোষের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শিল্পকলা, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি, আত্মজীবন, ছবি-বিক্রি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন গণেশ পাইন।
‘উনিশ শতকের চল্লিশের দশকেই পৃথিবীর সাহিত্যে তিনি নিয়ে এসেছেন নতুন ধরনের কবিতা। জীবনের ভিন্নতর এক রূপ, ভিন্ন এক বাস্তবতার তীব্রতা।’— শার্ল বোদলেয়ারকে নিয়ে কবিতীর্থ-এর (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাঁকে সামগ্রিক ভাবে উপস্থাপনার চেষ্টা, তাই সন্নিবেশিত তাঁর রচনার বেশ কিছু অনুবাদ। মূল থেকে অনূদিত হয়েছে বোদলেয়ারের অন্তরঙ্গ জার্নাল, নির্বাচিত কবিতা এবং চিঠিপত্র। রয়েছে ছোটগল্প, গদ্যরচনা, দুষ্প্রাপ্য কিছু আলোকচিত্র। সঙ্গে তাঁর মূল্যায়ন, দেশবিদেশের লেখায়।
‘এইসব লোক হচ্ছে প্রকৃত স্বপ্নের কারবারী। মাথার মধ্যে উদ্ভট, অবাস্তব সব পরিকল্পনা— তবে প্রত্যেকটার মধ্যেই সুপ্ত আছে দুঃসাহস। এই সব মানুষ সাধারণ, নিরীহ জীবন-যাপন করতে পারবে না কোনোদিন, কিছুদিন শান্ত থাকলেই মাথার মধ্যে পোকা কিলবিল করে ওঠে— নিজের হাতে তৈরি করা নিরাপত্তা নিজেই ভেঙে দেয়।’— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৯৭৫-এর রচনা কৃত্তিবাস-এ (সম্পা: স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়)। ষাট পূর্ণ হল পত্রটির— ‘সে সমুদ্রের ওপর উড়ে যাওয়া এক সিন্ধুসারস। তার ডানায় বিশ্রাম নেই।’ স্বাতী লিখেছেন ‘সম্পাদকের কলমে’।
বঙ্কিমচন্দ্রের ১৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে গৌতম নিয়োগীর নিবন্ধ ‘প্রাচ্য পাশ্চাত্য সংঘাত ও চিন্তক বঙ্কিমচন্দ্র: প্রসঙ্গ ইতিহাস’। সন্ধিৎসা-য় (সম্পা: রমাপ্রসাদ দে) চৈতালী দত্ত তাঁর রচনা ‘অনন্য উপেন্দ্রকিশোর: সৃষ্টিসুখের উল্লাসে’তে উপেন্দ্রকিশোর সম্পর্কে লীলা মজুমদারের মন্তব্য খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন: ‘যাঁরা ছোটো ছেলেদের শিক্ষার কথা ভাবতেন, তাঁরা শিশুসাহিত্য নিয়েও মাথা ঘামাতেন।’ ‘বিহারের উৎসব ও মেলা’ নিয়ে পারুল বন্দ্যোপাধ্যায়, রমাপদ চৌধুরীর ‘লজ্জা’ উপন্যাস নিয়ে উমা চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। ‘শ্রীঅরবিন্দ’কে নিয়ে সুরঞ্জন চক্রবর্তীর রচনার পুনর্মুদ্রণ।
পুরবৈয়াঁ-য় (সম্পা: বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য পূর্বাণী ঘোষ) কবিতার অনুবাদ নিয়ে পুষ্কর দাশগুপ্তের দীর্ঘ রচনা মনস্ক বাঙালিকে ভাবাবে। ‘দুর্গার চরিত্রসৃষ্টিতে তিনি যেমন অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন, তেমনি দুর্গাকে মেরে ফেলে ঔপন্যাসিক হিসেবে বিভূতিভূষণ নিজের অক্ষমতাও প্রকট করে তুলেছেন।’— ‘দুর্গার মৃত্যু’ নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ তর্ক-তোলা নিবন্ধ রমানাথ রায়ের। হেমন্তর রবীন্দ্রসঙ্গীত, বা বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতি নিয়ে আলোচনা। গুরুত্বপূর্ণ রচনা জাহিরুল হাসানের ‘ভারত, আমার ভারত’, এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেলের সাক্ষাৎকার।
সমীর রায়চৌধুরী সম্পাদিত হাওয়া ৪৯-এর হাংরি আন্দোলন ২ সংখ্যায় সম্পাদকের নিজের নিবন্ধসহ মলয় রায়চৌধুরীর একগুচ্ছ নিবন্ধ ও তাঁর সঙ্গে আলাপ ও চিঠি। সঙ্গে হাংরি আন্দোলনের সালতামামি। আন্তর্জাতিক পাঠশালা-য় (প্রধান সম্পাদক: অমিত রায়) চিন্তাউদ্রেককারী প্রবন্ধাদি ছড়ানো রয়েছে ‘বিশেষ ক্রোড়পত্র: পায়ের তলায় সর্ষে’য়, এবং ‘পরিভাষা পরিচয়’, ‘সাহিত্য চর্চা’, ‘ভূবিদ্যা চর্চা’, ‘নানা পথ নানা ধারা’, ‘ব্যক্তিত্ব’, ‘সমসাময়িক’-এ। নজরুল ইসলামের লেখা নাটক বিষয়ক নিবন্ধ ও তাঁর রচনার নাট্যরূপ দিয়ে অতিথি সম্পাদক প্রজেশ সেনগুপ্ত অসময়ের নাট্যভাবনা (সম্পা: রঙ্গন দত্তগুপ্ত) সাজিয়েছেন— ‘নজরুল নাট্যকথা’।
পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধিজীবীর অভাব নেই। তাঁদের আলোচনাও অন্তহীন। কিন্তু সেই বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আলোচনা? তাঁদের ভূত-ভবিষ্যৎ, সুযোগ-সংকট নিয়েই একটা গোটা সংখ্যা প্রকাশ করল ‘অনুষ্টুপ’। বুদ্ধিজীবী কে, কেন, আলোচনা করেছেন অনিকেত চৌধুরী। শাহবাগ-এর সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমকে কেন্দ্র করে লিখেছেন বিশ্বজিৎ রায়। কয়েকটি লেখা চরিত্রে বিশ্লেষণী, ধারালো। আবার, মেকি বুদ্ধিজীবীসুলভ সস্তায় বাজিমাত করতে চাওয়া লেখাও উপস্থিত। তবে, তুল্যমূল্য বিচারে প্রথম গোত্রের পাল্লাই ভারী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.