ধানের হিসেবে গরমিল, বিতর্কে পণ্য নিগম
রকারি টাকায় ধান কিনে তছরুপ-বিতর্কে জড়াল অত্যাবশক পণ্য নিগম (ইসিএসসি)। তছরুপের তদন্তে নেমে নিগম-কর্তাদের অস্বস্তি বাড়ছে। নিগমের কাজে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ ছিলই। এই বিতর্ক সেই তালিকায় নবতম সংযোজন।
গত মরসুমে (২০১২-১৩ শস্য বর্ষে) পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির চাষিদের কাছ থেকে ২ কোটি টাকায় ৩৬ হাজার টন ধান কিনেছিল তারা। তার মধ্যে ২১ হাজার টনের বেশি কিছু ধান পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডাউকি গ্রামের একটি চালকলে। ঠিক ছিল, ধান ভাঙিয়ে ১৪,৯৬০ টন চাল খাদ্য দফতরকে দেবে ওই চালকলটি। রেশনে বিলি করতে লাগত ওই চাল। কিন্তু এ পর্যন্ত চালকলটি থেকে মাত্র ৮৭০ টন চাল উদ্ধার করা গিয়েছে। বাকি চাল ও ধানের হদিস পাচ্ছে না খাদ্য দফতর। সরকারি পাহারা থাকলেও চালকল থেকে ধান উধাও হল কী ভাবে? খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সিআইডি-কে গোটা ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে।”
ঘটনার জেরে ইতিমধ্যে বদলি করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামককে। গ্রেফতার হয়েছেন চালকলের মালিক। ওই ধান কেনার দায়িত্বে ইসিএসসির যে অফিসার ছিলেন তাঁকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু ধোঁয়াশা পুরোটা কাটেনি। কারণ, প্রাপ্য চালের খোঁজ করতে গিয়ে নিগম-কর্তারা দেখেন, নিগমেরই প্রতিনিধিরা গত ২৫ মার্চ, এক দিনে ১,৬৫৮ টন ধান কেনা হয়েছে বলে চেক কেটেছেন। ওই পরিমাণ ধান এক দিনে কেনা সম্ভব নয় বলে নিগম-কর্তাদের মত। এক নিগম কর্তা বলেন, “সন্দেহ করা হচ্ছে, চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার হিসেব যে ‘মাস্টার রোল’-এ রাখা হয়েছে সেটি ভুয়ো।” কিন্তু তার পরেও যে সব আধিকারিক চেক সই করে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথমে নিগম কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পরে এক এক জনকে সাসপেন্ড করে। অনেক দিন পরে কলকাতার নিউমার্কেট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে নিগম।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, স্থানীয় স্তরে যে সব চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে বলে নিগমের পক্ষে চেক কাটা হয়েছে, সেই সব চাষির খোঁজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কোন ব্যাঙ্ক থেকে সেই সব চাষিরা ধান কেনার টাকা ভাঙিয়েছেন, তা-ও খোঁজ করা হচ্ছে।
খাদ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোটা ঘটনাটা সামনে আসে কাঁথির ওই চালকল দীর্ঘ দিন সরকারের প্রাপ্য চাল না দেওয়ায়। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারের কাছ থেকে ধান পাওয়ার পরে তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে চাল দিয়ে দেওয়ার কথা। নিগমের নির্দেশে খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা গত ৫ জুন ওই চালকলে হানা দেন প্রাপ্য ধান-চাল উদ্ধারের জন্য। সরকারি ভাবে লিপিবদ্ধ হয়, ওই চালকলে ২১,৮২৬ টন ধান জমা রয়েছে। চালকল মালিক সেই ধান যাতে অন্যত্র সরাতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে ৫ জুন থেকেই সেখানে নিগম এবং খাদ্য দফতরের কর্মীদের পাহারায় বসানো হয়। পরে ওই চালকল থেকে মাত্র ৩৫০ টন ধান পাওয়া যায়। বাকি সাড়ে ২১ হাজার টন ধানের পাত্তা পাওয়া যায়নি। নিগমের কর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে তাঁদের আধিকারিকেরা কোনও চালকলে অভিযান চালালে মূলত কাগজপত্র দেখে সেখানে কত মজুত চাল-ধান রয়েছে তা ‘সিজার লিস্ট’-এ লেখেন। নিগমের এক কর্তার বক্তব্য, কাঁথির ওই চালকলের অভিযানের ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়ে ছিল। আদৌ সেখানে ২১,৮২৬ টন ধান ছিল কি না, তা মাপা হয়নি। তাই বাস্তবে সেখান থেকে অত ধান মেলেনি। ইতিমধ্যে ১৯ জুলাই জেলা খাদ্য নিয়ামকের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ অগস্ট গ্রেফতার হন ওই চালকল মালিক। তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে তদন্তে নিগমের যে সব আধিকারিকদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা মিলেছে, তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটেনি নিগম। কেন? নিগমের এক কর্তা বলেন, “ওই অধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাদ্য কমিশনারের নির্দেশ পাওয়ার পরেই প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.