|
|
|
|
|
খুঁটি বসানোই সার,
আঁধার ঘোচেনি পশ্চিমে
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
|
পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অনেক। কিন্তু সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ এখনও দূর অস্ত। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের এক চতুর্থাংশ বাড়িতে এখনও আঁধার। তাদের ভরসা হ্যারিকেন-লণ্ঠন!
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতেই সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু আদৌ কী তা সম্ভব হবে? এই প্রশ্ন ওঠার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। ২০১২ সালের অগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ড’ (বিআরজিএফ) থেকে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘সর্ব গৃহে দীপ’ প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু এখনও ওই প্রকল্পে কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখা যায়নি। কাজ বলতে, সমীক্ষা শেষ হয়েছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছে। কোথাও কোথাও তারও টানা হয়েছে। তবে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে আলো জ্বালানো গিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এক বছরের মধ্যে কী সমস্ত বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব? বিদ্যুৎ দফতর অবশ্য আশাবাদী, সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেলে ২০১৪ সালে পুজোর আগেই প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছবে। প্রশাসনও তৎপর। তাতে বিদ্যুৎ চুরি কমবে উল্টে তা থেকে মাসুল আয় করা যাবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতেই সংযোগ দিতে পদক্ষেপ করছি। আশা করি, সাধারণ মানুষও সহযোগিতা করবেন।” ‘সর্ব গৃহে দীপ’ প্রকল্পে বিপিএল তালিকাভুক্ত প্রত্যেকে নিখরচায় বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন। সরকারি সাহায্যে বাড়িতে একটি আলো জ্বালানোরও সুযোগ পাবেন। একাধিক আলো জ্বালাতে চাইলে গ্রাহককেই খরচ দিতে হবে। এপিএল তালিকায় থাকা লোকেদের বিদ্যুৎ দফতরের নিয়ম মেনে টাকা দিতে হবে। তবে তার জন্য কোনও ঝামেলা পোয়াতে হবে না। বিদ্যুৎ দফতরের নিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থার কর্মীরা প্রতিটি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার আবেদনপত্র। বাড়িতে বসেই তা পূরণ করে দেবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। সেই ব্যক্তির বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে খরচ কত হবে তা হিসাব করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবেন তাঁরাই। কেবলমাত্র সেই টাকাটি জমা দিতে বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে যেতে হবে। আর বাড়ি ওয়্যারিং করে, আলোও কিনে রাখতে হবে। বিদ্যুৎ দফতর গিয়ে মিটার লাগিয়ে সংযোগ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেখিয়ে দেবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ নেওয়ার নিয়মের সরলীকরণ করতে চাইছে দফতর। আগে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আবেদন করতে যেতে হত। |
পরিবার |
বিদ্যুৎহীন |
৫,০৯,৪৯৬ (বিপিএল) |
৭৮,০৫০ |
৬,৭৩,০০০ (এপিএল) |
২,১১,১৫৫ |
|
খরচের হিসাব করে টাকা জমা দিতে অনেক ঝক্কি পোয়াতে হত গ্রাহককে। এমনকী টাকা জমা দেওয়ার পরেও কবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে তা ঠিক ছিল না। বারেবারে দফতরে গিয়ে তোষামোদ করতে হত, অভিযোগ জলপানিরও খরচ দিতে হত। এখন শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে রাজি হলেই হল। বাকী সবই করবে সরকার। এক্ষেত্রে যাতে এলাকার মানুষ একই সঙ্গে সংযোগ নেন তার জন্য পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগিতা চেয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। এক আধিকারিকের কথায়, “দেখা গেল একটি গ্রামে ২৬ জনের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তার মধ্যে ১২ জন সংযোগ নিতে রাজি। বাকিরা পরে নেবেন বলে জানালেন। সে ক্ষেত্রে তো কর্মীরা একটি গ্রামে দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। তখন ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বাড়িতে সংযোগ দিয়েই তাঁদের ফের অন্য জায়গায় যেতে হবে। তাই এক সঙ্গে সবাই বিদ্যুৎ সংযোগ নিলে কর্মীরা একেবারে কাজ শেষ করে আসতে পারবেন।”
২০০৪ সালের গণনা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জনবসতি রয়েছে এমন গ্রামের সংখ্যা ৮৭০৫টি। তার মধ্যে ৭৩৭০টি গ্রামেই কোনও না কোনও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিদ্যুৎহীন পরিবারগুলিতে বিদ্যুৎ পোঁছে দিতে প্রয়োজন ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২১০টি বাতিস্তম্ভ। যার মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৪৬টি বাতিস্তম্ভ প্রয়োজনীয় জায়গার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৯৯০টি গ্রামে ২৫ হাজার ৩১টি বাতিস্তম্ভ পোঁতার কাজও হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য পরিকঠামো তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ৫৮৩টি গ্রামে। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে মাত্র ১৯৮৭টি বাড়িতে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। যদিও আরও ২৯৯১টি বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই সেখানে আলো জ্বালানো সম্ভব হবে। কিছু কারণে তা আটকে রয়েছে। ২০১২ সালের অগস্ট থেকে কাজ শুরু হওয়ার পর কাজের অগ্রগতি বলতে এটুকুই। তবে বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থা এই কাজের জন্য প্রায় এক হাজার কর্মী নিয়োগ করেছে। ফলে এবার দ্রুত গতিতে কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সাহায্য করতে হবে। নতুবা সময়ে প্রকল্প শেষ করা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনেরও। |
|
|
|
|
|