...গন্ধ এসেছে

পটের বিবর্তন, লোকশিল্পে
গ্রামীণ জীবনের জলছবি

নানা রঙে বর্ণময় এই শহরটা কয়েক দিনের জন্য যেন আরও রঙিন। কোথাও দক্ষিণী মন্দির তো কোথাও গ্রামবাংলা এই সময়টায় গোটা কলকাতা যেন মেতে ওঠে ঝুলনের আনন্দে।
এ বছরও উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন মণ্ডপে নানা রূপে দেখা মিলবে দেবীর। যেমন, দমদমের মলপল্লি সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোগে এ বার মা বসবেন ফুলের সাজের মণ্ডপে। কংক্রিটের শহরে দেখা মিলবে কাশফুলের। তালপাতা, ভুট্টার পাতা দিয়ে তিন মাস ধরে তৈরি হয়েছে মণ্ডপসজ্জার নানা ধরনের ফুল। শিবলিঙ্গের আদলে তৈরি মণ্ডপে থাকবে সাড়ে বারো ফুট উচ্চতার মৃন্ময়ী প্রতিমা। রকমারি রঙের বিস্ফোরণে উৎসবের মেজাজ তৈরি হবে পুজো প্রাঙ্গণে।
রঙের বৈচিত্রে মাতবে বেহালার নস্করপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপও। চারপাশ সাজিয়ে তুলবে নয়ার ও শান্তিনিকেতন ঘরানার পটচিত্র। মাটির সরায় আঁকা পটের ব্যবহারে দেখানো হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পটের বিবর্তন। শক্তিরূপী প্রতিমা তৈরি হয়েছে থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
চিরাচরিত ভাবনা থেকে বেরিয়ে এ বার থিম পুজোর ভিড়ে সামিল হচ্ছে গড়িয়া নবদুর্গাও। মণ্ডপের ভিতরে প্রতি বারের মতো দেবীর ন’টি রূপ দেখানো হলেও প্রবেশপথ সাজছে একেবারে নতুন ভাবে। শিল্পী সেখানে আলো ও ধ্বনির ব্যবহারে দেখাবেন সাইক্লোনের ভিতর থেকে দেবীর আবির্ভাব। দেবী ও অসুরকে দিয়েই বোঝানো হবে জীবনের নানা সময়ে চলতে থাকা শুভ আর অশুভর দ্বন্দ্ব।
দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির মাঠ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এ বারের থিমে আবার যামিনী রায়ের শিল্প। সেখানে মায়ের মূর্তিতেও থাকবে শিল্পের নানা ভাবনার ছোঁয়া। উদ্যোক্তাদের মতে, যামিনী রায়ের বিভিন্ন কাজের প্রেরণা হিসেবে রয়েছে বাংলার নানা অঞ্চলের লোকশিল্প। সে সকল শিল্পের ছোঁয়াও তাই থাকবে এ বারের মণ্ডপসজ্জায়। আর তারই সঙ্গে পুজো প্রাঙ্গণে ফুটিয়ে তোলা হবে গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার নানা ছবি।
যামিনী রায়ের শিল্প থাকছে চারু অ্যাভিনিউয়ের নবপল্লি সঙ্ঘের ভাবনাতেও। সেখানকার থিম ‘দারুতে কারু’। এখানে মণ্ডপ তৈরি হবে কাঠ দিয়ে। সেই মণ্ডপের গায়ে কাঠের উপরে খোদাই করা হবে যামিনী রায়ের শিল্পশৈলী। ভিতর সাজানো হবে বিভিন্ন ধরনের কাঠের পুতুল দিয়ে। ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হয়েছে প্রতিমা।
থিমে ঢুকে পড়েছে নানা ধারার দর্শনও। যেমন, উল্টোডাঙার ইউনাটেড ক্লাবে এই বছরের থিম ‘মনপাখি’। শিল্পের মাধ্যমে খাঁচার পাখিদের বন্দিজীবনের সঙ্গে মানুষের বন্দি দশার তুলনা টানা হয়েছে মণ্ডপে। প্রবেশপথে রাখা হবে দশ ফুট উচ্চতার এক পাখি। তার পায়ে শিকল। মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হবে বিভিন্ন আকারের পাখির খাঁচা। প্রতিমা সাবেক ধাঁচের।
এক টুকরো গ্রামবাংলার দেখা মিলবে দর্জিপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজোমণ্ডপে। চারপাশ সাজবে কৃত্রিম ধানখেতে। ভিতরে লাল পাড় সাদা শাড়িতে গ্রাম্য মেয়ের বেশেই বসবেন দেবী। মণ্ডপ সাজবে লাল শালু, পটের ছবি আর বাঁশের উপরে নানা রং দিয়ে আঁকা ছবিতে। গ্রামবাংলার পরিবেশ তৈরি করতে পুজোমণ্ডপের সামনে সাজানো থাকবে একটা বড় গরুর গাড়ি। তৈরি হবে তুলসীমঞ্চও।
গ্রামবাংলার আর এক ছবি দেখা যাবে আহিরীটোলা যুবক বৃন্দের পুজো প্রাঙ্গণে। সেখানে মণ্ডপ চত্বর তৈরি হবে ধ্বংসপ্রাপ্ত এক প্রাচীন পল্লি নগরীর আদলে। চারদিকে ধ্বংসের মধ্যেও দেবীর আগমন কী ভাবে আনন্দের কারণ হতে পারে, তা-ই দেখানো হবে এই মণ্ডপে।
বাঙুর অ্যাভিনিউ প্রতিরোধ বাহিনীর পুজোয় আবার দেখা যাবে অস্ত্র ছাড়া দেবীমূর্তি। সেখানকার থিম ‘তুমিই অনন্ত তুমিই দিগন্ত’। দুর্গা এখানে সৃষ্টির দেবী। মণ্ডপ সাজবে সৃষ্টির বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে। বালি ঘড়ি, সূর্য ঘড়ির মতো নানা ধরনের ঘড়ির ব্যবহারে বোঝানো হবে সময়ের সৃষ্টির কাহিনি। প্রবেশপথে দেখানো হবে দেবীর দশ হাত কী ভাবে গোটা ব্রহ্মাণ্ডকে ধরে রেখেছে।
এ সব সৃষ্টি নিয়ে শরতের শহর হয়ে উঠবে আরও বর্ণময়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.