|
|
|
|
রতনবাবুর ঘাট |
অবহেলা স্পষ্ট, স্মৃতিসৌধ বেহাল শ্রীরামকৃষ্ণের
সঞ্জয় সিংহ |
চার দিকে ছড়িয়ে আর্বজনার স্তূপ। মূল প্রবেশপথের সামনের রাস্তায় রাখা কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ফেলার সারি সারি ঠেলাগাড়ি। সোজা পথে প্রবেশ কার্যত বন্ধ। সাতসকালেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন এমন ক’জন, যাঁরা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার অবস্থাতেই নেই। এখানেই রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিসৌধ। দর্শনার্থীদের সেখানে প্রবেশ করাই কার্যত দুঃসাধ্য।
বাংলার ১২৯৩ সালের ৩১ শ্রাবণ শ্রীরামকৃষ্ণের মহাসমাধির পরে রতনবাবুর ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য হয়েছিল। তার পরে এখানে গড়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ। এর বাঁ দিকে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (শ্রীম) ও শিশিরকুমার ভাদুড়ি, ডান দিকে স্বামী অভেদানন্দ, সামনে গৌরীমাতার স্মৃতিসৌধ। গঙ্গার তীর সংলগ্ন এই অঞ্চলটি উত্তর কলকাতার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সংলগ্ন রতনবাবু রোড বা চন্দ্রকুমার রায় লেনের অধিকাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, মনীষীদের স্মৃতিবিজড়িত এমন একটি স্থানের যে ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা থাকা উচিত, তা এখন নেই।
সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েন রতনবাবু ঘাট সংলগ্ন শ্রীরামকৃষ্ণ মহাশ্মশানে সৎকার করতে আসা মৃতের নিকটজনেরা। শববাহকদের অভিযোগ, এখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। শ্মশানের বাইরে পুরসভার একটি জলের কল আছে। কিন্তু শববাহক এবং বাসিন্দারা জানান, ওটা ‘টাইম-কল’। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া জল মেলে না। ফলে, সৎকার করতে আসা মানুষদের শ্মশানের আশপাশের দোকান থেকে জল কিনে খেতে হয়। শৌচাগার থাকলেও ব্যবহার করার অযোগ্য। সৎকারের পরে গঙ্গায় নেমে স্নান করার উপায় নেই। কারণ, এই ঘাটের পাশেই শহরের বড় নিকাশি পাইপ গঙ্গায় মিশেছে। ফলে, সৎকারের পর স্নান সারতে তাঁদের যেতে হয় দূরে বরাহনগরের দিকে কোনও ঘাটে। |
|
এমনই অবস্থা ঘাটের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। |
এলাকায় জলের অভাব নিয়ে সরব স্থানীয় একটি মন্দিরের সেবাইত পরিবারের অমল মুখোপাধ্যায়ও। তাঁদের পারিবারিক মন্দির অনেক দিনের পুরনো। কাশীপুর উদ্যান-বাটিতে থাকাকালীন রামকৃষ্ণ প্রায়ই এই মন্দিরে আসতেন বলে জানান অমলবাবু। এলাকার উন্নয়ন দরকার বলে তাঁর অভিযোগ, তাঁদের মন্দিরেও জলের ব্যবস্থা নেই। বাড়ি থেকে জল নিয়ে মন্দিরের কাজ চালাতে হয়। ওই মন্দির থেকে কয়েক পা এগোলেই রতনবাবু ঘাট। সেখানে আর্বজনার স্তূপ। পূতিগন্ধময় পরিবেশ। অধিকাংশ বাসিন্দার মতে, এলাকার এমন বেহাল অবস্থার কারণ এখানে প্রায় দু’বছর কোনও কাউন্সিলর নেই। এখানকার তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা দাম মারা গিয়েছেন। তার পর থেকে কাউন্সিলরহীন এই ওয়ার্ড। |
|
শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি সৌধ।—নিজস্ব চিত্র। |
আপাতত এলাকা দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা এক নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান তরুণ সাহার। রতনবাবু ঘাটের বেহাল অবস্থার কথা জানেন তিনিও। তবে এখানকার হাল ফেরানোর চেষ্টা পুরসভা করছে জানিয়ে তরুণবাবু বলেন, “রতনবাবু ঘাটের নতুন চেহারা দেওয়ার কাজ চলছে। সৌন্দর্যায়নের কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এখানে যাঁরা বেড়াতে আসবেন বা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব অথবা অন্য মনীষীদের যাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসবেন তাঁরা যেন মানসিক শান্তি পান।”
কবে এই কাজ শেষ হবে? তরুণবাবুর দাবি, আগামী মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা পুরসভা করছে। এমনকী, শ্মশানে যে জলের সমস্যা রয়েছে তা-ও মিটে যাবে। তাঁর বক্তব্য: “জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ এবং সিভিল ডিপার্টমেন্ট পুরসভার এই তিন বিভাগের মধ্যে যে সমন্বয় দরকার ছিল, তা চূড়ান্ত হয়েছে। পুজোর মধ্যেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’ |
|
|
|
|
|