|
|
|
|
দাবি মেনে সল্টলেকে রাস্তা সারাই শুরু পুরসভার
কাজল গুপ্ত |
কথা রাখল সল্টলেক পুরসভা। বর্ষা কমে আসতেই শুরু হল রাস্তা মেরামতির কাজ। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, পুজোর আগে প্রায় সব ক’টি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মেরামতির কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য ব্লকগুলির ভিতরে ও মূল বড় রাস্তা মিলিয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বর্ষায় সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, যে ভাবে চক্রবৎ আকারে বছরভর রাস্তা মেরামতির কাজ হচ্ছে তা বর্ষায় ফের খারাপ হবে। স্থায়ী সমাধান করছে না প্রশাসন। সেই বেহাল দশার চিত্র প্রকাশ পেতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। যদিও তাদের দাবি, এ বার আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রাক-বর্ষা মরসুম থেকেই সল্টলেকের একাধিক রাস্তা ভেঙে যায়। বিশেষত পিএনবি মোড় থেকে বৈশাখী আইল্যান্ড, সিএ আইল্যান্ড থেকে লালকুঠি, করুণাময়ী থেকে চার দিকের রাস্তা, বনবিতান থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস, ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল সংলগ্ন একাধিক রাস্তার পাশাপাশি ২ নম্বর সেক্টরের অনেক রাস্তারও কার্যত একই হাল হয়। কিছু রাস্তায় প্যাচওয়ার্কও করা হয়। কিন্তু বর্ষায় পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় বিপজ্জনক গর্ত তৈরি হয়ে যায়। পুরসভার দাবি, বাসিন্দারা বেহাল রাস্তা নিয়ে সরব হওয়ার সময় থেকেই অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রাস্তা মেরামতির প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
পুরপ্রশাসনের দাবি, বিগত বছরগুলির অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধু প্যাচওয়ার্ক করে আপৎকালীন সমস্যা হয়তো মেটে, আখেরে লাভ হয় না। ফের রাস্তা খারাপ হয়। এর জেরে আর্থিক দিক থেকেও ক্ষতি হয়। পথচলতি মানুষজন সমস্যায় পড়েন। পুরসভা সূত্রের খবর, কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড কমিটিগুলির কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার তালিকা প্রস্তুত করে টেন্ডার করে রাখা ছিল। বর্ষা কমতেই দ্রুত সেই মেরামতির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। |
|
পুজোর আগেই শুরু হয়েছে রাস্তা মেরামতির কাজ। ছবি: শৌভিক দে। |
সল্টলেক পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “আপৎকালীন মেরামতিতে লাভ হয় না। তাই ৩ বছরের চুক্তিতে সল্টলেকের অধিকাংশ রাস্তা মেরামতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী বর্ষার মরসুমের মাঝেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছিল। তাই বর্ষা কমতে দ্রুত কাজ শুরু করা গেল। পুজোর আগেই সল্টলেকের ব্লক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির মেরামতির কাজ শেষ করা হবে।”
ইতিমধ্যে করুণাময়ী, বিএফ-সিএফ ব্লক সমেত চারটি রাস্তায় মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, স্রেফ যে ক’টি জায়গায় রাস্তা ভেঙেচুরে গিয়েছে সেখানেই নয়, গোটা রাস্তাতেই মেরামতির কাজ করা হচ্ছে। সল্টলেকে কর্মসূত্রে সারা বছর যাতায়াত করেন গড়িয়ার বাসিন্দা প্রকাশ ঘোষ। তিনি বললেন, “বাইপাস-সহ কয়েকটি জায়গায় স্রেফ গর্ত বোজানো ছাড়া এখনও কিছু হয়নি। সল্টলেকে অবশ্য পুরো রাস্তা জুড়েই মেরামতির কাজ হচ্ছে।” তবে সল্টলেকের বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে সল্টলেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। রাস্তা সহজেই ভেঙে যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ। সে কথা বিবেচনায় রেখে উন্নত মানের রাস্তা তৈরি করা হোক।
ঠিকাদারদের একাংশের দাবি, রাস্তার কাজ করার পরে একটি নির্দিষ্ট সময় রাস্তা বন্ধ রাখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু গাড়ির চাপ যে ভাবে বেড়েছে তাতে রাস্তা বন্ধ রাখাও যাচ্ছে না। ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তার মেয়াদও বেশি দিন থাকে। সব মিলিয়ে সল্টলেকের রাস্তা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের হলে সকলেরই সুবিধা হবে।
বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুরসভা কথা রেখেছে। তবে যে ভাবে গাড়ির চাপ বাড়ছে তাতে উন্নত মানের রাস্তা না করলে ফের একই সমস্যা দেখা দেবে।” বাসিন্দাদের দাবি প্রসঙ্গে অনুপমবাবু বলেন, “পুরসভার আর্থিক দিকটিও বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের করতে হলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, পুরসভার একার পক্ষে তা করা মুশকিল। তবে রাজ্য সরকার সর্বদাই আমাদের পাশে রয়েছে। তাই সেই বিষয়েও আমরা চিন্তাভাবনা করছি।” |
|
|
|
|
|