|
|
|
|
বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি উপনগরী |
কেএমডিএ-পুরসভা চাপানউতোরে
নিকাশি সমস্যায় জেরবার বাসিন্দারা
কৌশিক ঘোষ |
উপনগরীর হস্তান্তর সম্পূর্ণ হয়েছে তিন বছর আগেই। কিন্তু নিকাশি সমস্যার আজও সুরাহা হয়নি। ফলে নিকাশি সমস্যায় জেরবার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি উপনগরীর বাসিন্দারা।
তিন বছর আগে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি উপনগরী হস্তান্তর করে কলকাতা পুরসভাকে। সমস্যার সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে আধুনিক শক্তিসম্পন্ন দু’টি নতুন পাম্পও বসানো হয়। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার দায়িত্ব কার এ নিয়ে চাপানউতোর রয়েই গিয়েছে পুরসভা এবং কেএমডিএ’র মধ্যে।
পুরকর্তৃপক্ষের অভিযোগ, উপনগরী হস্তান্তরের সময়ে নিকাশি-সহ এলাকার পরিকাঠামোগত বহু সমস্যা ছিল। কথা ছিল, কেএমডিএ সেগুলি সারাবে। কিন্তু তা হয়নি। কিছু সংস্কার প্রকল্পের ক্ষেত্রে কথা ছিল কেএমডিএ পুরসভাকে অর্থ বরাদ্দ করবে। সেগুলির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরসভা প্রয়োজনের তুলনায় কম টাকা পেয়েছে। আবার পুরসভা পাম্পিং স্টেশনগুলি চালালেও সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেএমডিএ’র হাতেই রয়েছে।
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, পুরসভাকে এই উপনগরী হস্তান্তর করার পরে সমস্ত কিছু পুরসভারই দেখভাল করার কথা। কেএমডিএ’র কার্যত কোনও দায়িত্ব নেই। তা সত্ত্বেও, নিকাশি প্রকল্পের জন্য কেএমডিএ সম্প্রতি ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। হস্তান্তরের আগে যে সব পুর-সমস্যা ছিল তার বেশির ভাগেরই সুরাহা করা হয়েছে। এখন সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। |
|
টালিগঞ্জ-পঞ্চান্নগ্রাম খালে জমে রয়েছে ময়লা। —নিজস্ব চিত্র। |
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরবোর্ডের প্রায় শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে কেএমডিএ এই উপনগরী পুরসভাকে হস্তান্তর করেছিল। পরিকাঠামোগত অনেক কাজই বাকি ছিল। সেগুলি না হওয়ায় পরিষেবাগত সমস্যা থেকে গিয়েছে। সমস্যা মেটাতে আমরা বদ্ধপরিকর। নিকাশি ছাড়াও এই অঞ্চলের উন্নতিকল্পে কেএমডিএ-র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।”
উপনগরীতে নিকাশির সমস্যা কী?
এই উপনগরীতে নিকাশির দু’টি পদ্ধতি চালু রয়েছে। এলাকার দৈনন্দিন বর্জ্য নোংরা জল পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে খালে ফেলা হয়। অন্য দিকে বৃষ্টির জল পুকুরে জমা হয়। সেখান থেকে খালে গিয়ে পড়ে। পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রে খবর, নোংরা জল ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পাঠানো হয় যে পাম্পের মাধ্যমে সেই পাম্পগুলি পুরনো হওয়ায় তার কয়েকটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, এই এলাকার অনেক জায়গায় নিকাশির জল জমে যাচ্ছিল।
এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা পুরসভার কাছে অভিযোগও জানান। স্থানীয় বাসিন্দা সাধন নাগের অভিযোগ, “জল জমাটা এলাকার দৈনন্দিন ঘটনা। বৃষ্টির সময়ে তো কথাই নেই। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতেও ফের তার প্রমাণ মিলেছে।” |
|
পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “পুরসভা পুরনো পাম্প পরিবর্তন করে নতুন পাম্প বসানোয় এই সমস্যা কিছুটা কমেছে। কিন্তু খালধারের জমা পলির সমস্যা এলাকার জল-যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে। তবে সেচ দফতর পলি তোলার কাজ করছে।” পুরসভার নিকাশি দফতরের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার অমিত রায় বলেন, “পাটুলিতে বর্জ্য পদার্থ দ্রুত বার করতে তিনটি পুরনো পাম্প পাল্টানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল পুরসভা। পরিবর্তে সম্প্রতি দু’টি নতুন শক্তিশালী পাম্প বসানো হয়েছে। তবে, এখানে বৃষ্টির জল বেরনোর বিষয়টি খালের নাব্যতার উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। খালের অবস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের চন্দনা ঘোষদস্তিদার বলেন, “পলিতে খাল ভর্তি থাকায় বৃষ্টির জল যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে।
বর্জ্য নিকাশির সমস্যা থাকায় জল জমে যাচ্ছিল রাস্তায়। যাতে না জমে সে জন্য নতুন পাম্প বসানো হয়েছে।” সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই এলাকার বৃষ্টির জল টলিনালা এবং রানিয়ার মাধ্যমে যায়। খালে পলি জমে থাকায় জল যেতে অসুবিধা হচ্ছে। দু’টি খালেই জমা পলি সরানোর কাজ চলছে। আগামী বছরে উপকার পাওয়া যাবে।” |
|
|
|
|
|