নয়াচরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছাড়পত্র পেতে কেন্দ্রের কাছে জোরালো সওয়াল করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে আজ রাজ্য সরকার যুক্তি দিয়েছে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সহনে যথেষ্ট সক্ষম নয়াচর দ্বীপ। এই দ্বীপে কোনও বন্যার ইতিহাস নেই। পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাবও পড়বে না। তাই এই দ্বীপে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ যে কোনও শিল্প হতে পারে। পরিবেশ মন্ত্রকের কমিটির তরফে বলা হয়েছে, সোমবারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় পরিকাঠামো সংক্রান্ত যে সব প্রকল্পগুলিকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে নয়াচরের এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি অন্যতম। ছাড়পত্র পেলে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে এই প্রকল্পে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ইউনিভার্সাল সাকসেস গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়াচরের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে চুক্তি করে। কিন্তু পরিবেশের ছাড়পত্রের অভাবেই এত দিন প্রকল্পটি ঝুলে থাকছিল। গত বছর অগস্টে পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি এই প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তোলে। রাজ্য সরকার ও ইউনিভার্সাল সাকসেসকে ওই সব আপত্তির দিকগুলি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী আইআইটি-খড়গপুরের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি তৈরি করে দেন। সেই কমিটির রিপোর্ট পাঠানো হয় পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে। |
আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পোয়ন্নন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণা গুপ্ত সেই রিপোর্ট তুলে ধরে যুক্তি দেন, রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখে নয়াচরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষেই মত দিয়েছে। তাই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হোক। দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবে-ও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন ইউনিভার্সাল সাকসেসের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার সিইও পি কে মোদী ও অন্য কর্তারাও। রাজ্য সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, নয়াচরে এই প্রকল্প হলে রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে। প্রকল্প তৈরির সময় এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নতিও হবে। বৈঠক সেরে বেরোনো রাজ্য সরকারের কর্তারা অবশ্য কমিটির সদস্যদের মনোভাব থেকে মনে করছেন, তাঁদের সন্তুষ্ট করা গিয়েছে। কাজেই ছাড়পত্র মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা নিজেদের আপত্তির বিষয়গুলি আজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছেন। চেয়ারম্যান এ এস লাম্বা আজকের বৈঠকে না থাকায় কমিটির অন্যতম সদস্য সি আর বাবু আজকের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকই মূলত নয়াচর নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিতে রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সোমনাথ ঘোষ নিজেই বৈঠকে হাজির ছিলেন। অন্য তিন সদস্য টি বালসুব্রহ্মণ্যম, তুহিন ঘোষ ও রজত রায়চৌধুরীও ছিলেন বৈঠকে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে ছয় মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প সহনে সক্ষম নয়াচর দ্বীপ। এই দ্বীপে ভূমিক্ষয়ের সমস্যা নেই। বন্যায় এই দ্বীপ ডুবে যায় না। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা কম।
|