অর্থনীতি আছে অর্থনীতিতেই। দায়িত্বে যিনিই আসুন, ভারতের বর্তমান আর্থিক সমস্যার মোকাবিলায় প্রায় একই নীতি অনুসরণ করা ছাড়া গতি নেই বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সেটাই দেখা গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর রঘুরাম রাজনের প্রথম ঋণনীতির পর্যালোচলায়। মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে প্রাক্তন গভর্নর সুব্বারাওয়ের রাস্তাতেই অনেকটা হাঁটলেন রাজন। রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করলেন ৭.৫০%।
তবে সুব্বারাওয়ের থেকে তিনি যে-আলাদা, তার প্রমাণও বাকি দু’টি পদক্ষেপে রেখেছেন রাজন। যেমন, ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে রাজন মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটির (এমএসএফ) সুদ কমিয়েছেন। এই খাতে ঋণ নিলে এত দিন ব্যাঙ্ককে সুদ গুনতে হত ১০.২৫%। রাজন তা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করেছেন ৯.৫০%। এই খাতে বিশেষ প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ পেয়ে থাকে। রেপো খাতে ধার নেওয়ার পরে যদি আরও টাকা লাগে, তখনই এমএসএফ খাতে ঋণ মেলে।
পাশাপাশি, নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর না-কমিয়েও ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন নতুন গভর্নর। এত দিন ব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিদিন নগদ জমার অনুপাত খাতে যা রাখার কথা, তার ৯৯%-ই রাখতে হত। এখন থেকে ৯৫% রাখলেই চলবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যাঙ্কের নগদ জমার হার ৪%। নতুন ব্যবস্থায় ব্যাঙ্কের হাতে নগদ বেশি থাকবে। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় আর্যের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “এর ফলে বাজার থেকে কল মানি-সহ বিভিন্ন স্বল্পকালীন ঋণে ব্যাঙ্কগুলিকে আগের থেকে কম সুদ গুনতে হবে। ফলে তহবিল সংগ্রহের খরচ অল্প কমতে পারে।”
তবে তাতে কি সুদের হার কমবে? সে আশায় এ দিনই জল ঢেলে দিয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। শুক্রবার ঋণনীতি ঘোষণার পরেই প্রতীপবাবু আমানত এবং ঋণে সুদ বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “উৎসবের মরসুমে ঋণের চাহিদা বাড়বে। ফলে ব্যাঙ্কগুলিকে আমানত বাড়াতে জমায় সুদের হার বাড়াতে হবে। যার জেরে বাড়াতে হবে ঋণে সুদের হারও।” একই কথা বলেছেন ইউকো-র এগ্ডিকিউটিভ ডিরেক্টর এস চন্দ্রশেখরন। তিনি বলেন, “রেপো রেট বাড়বে, এটা আদৌ আশা করিনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-সব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে স্বল্পমেয়াদে তহবিল সংগ্রহের খরচ কিছুটা কমবে। তবে ঋণ দিতে হয় দীর্ঘমেয়াদে। তাই এখনই তার উপর সুদ কমানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।” উল্লেখ্য, স্টেট ব্যাঙ্ক গত কালই ঋণ, আমানতে সুদ বাড়িয়েছে।
বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে অবশ্য, রাজন প্রথম রাউন্ডেই স্বকীয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। কী ভাবে? ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত বলেন, “যে ৩টি পদক্ষেপ তিনি করেছেন, তার গুরুত্ব অনেক। এগুলির দু’টি প্রতিফলন দেখা যাবে। একটি দীর্ঘমেয়াদি, অপরটি স্বল্পমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদে ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি নগদের ব্যবস্থা করা ছাড়াও রাজন কমাতে চান তহবিল সংগ্রহের খরচ। দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য, মূল্যবৃদ্ধিতে স্থিতি এনে সরাসরি সুদ কমানোর রাস্তা খোলা।”
তবে শেয়ার ও বিদেশি মুদ্রার বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল বিরূপ। সেনসেক্স পড়েছে ৩৮৩ পয়েন্ট, টাকা ৪৬ পয়সা। সূচক থেমেছে ২০,২৬৩.৭১ অঙ্কে। আর প্রতি ডলার ৬২.২৩ টাকায়। দিনের এক সময়ে সেনসেক্স পড়ে যায় ৫৯৫ পয়েন্ট। তবে ক্যালকাটা স্টক এক্সেচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, “বাজারের আশা ছিল সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটবেন রাজন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। আমার আশঙ্কা, বাজার আরও পড়তে পারে।”
|