ছাপোষা চেহারা। কাঁচাপাকা চুল, মুখভর্তি দাড়ি। ঘরবাড়ি নেই, থাকেন উদ্বাস্তু শিবিরে। দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ৪২০০০ ডলার-ভর্তি ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে এলেন আগন্তুক। শপিং মলের কর্মীদের জানালেন, মালিক-হীন ব্যাগটি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। ফিরিয়ে দিতে চান। সাহায্য চাই।
ব্যাগের মালিককে তাঁর জিনিস ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন ভবঘুরে গ্লেন জেমস। কিন্তু এখানেই গল্পের শেষ নয়। গ্লেনের কথা শুনে, কাগজে তাঁর ছবি দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন ২৭ বছরের তরুণ ইথেন হুইটিংটন। গ্লেনকে সাহায্য করতে অন-লাইনে একটি তহবিল তৈরি করে ফেলেন ইথেন। আর চার দিনের মধ্যেই তাতে জমা হয়েছে ১০৫০০০ ডলার। গল্প হলেও সত্যি!
অনেকটা সেই সৎ কাঠুরের গল্প। তাঁর লোহার কুঠার জলে পড়ে গিয়েছিল। জলদেবতা যখন তাঁকে রুপোর কুঠার দিলেন, তিনি বললেন ওটা তাঁর নয়। পুরস্কারসরূপ তাঁর নিজের কুঠারের সঙ্গে মিলল একটি সোনার কুঠার। এ ক্ষেত্রেও অনেকটা সে রকম। গত আট বছর ধরে নিরাশ্রয় গ্লেন শহরের একটা উদ্বাস্তু শিবিরে থাকেন। কিন্তু পকেটে কানাকড়ি না থাকলেও কখনও অন্যের জিনিস ছুঁয়েও দেখেননি। পুলিশকে জানিয়েছেন, আজ অবধি পথ থেকে একটা পেনি-ও তুলে দেখেননি। |
শনিবার সন্ধ্যায় সাউথ বে মলে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন গ্লেন। এ বারে তিনি তুলে দেখেন ব্যাগটি। মনে হয়, জিনিস হারিয়ে নিশ্চয় বিপদে পড়েছেন কেউ। নিয়ে যান শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। ব্যাগের মধ্যে ছিল ২৪০০ ডলার, ৪০ হাজার ডলারের চেক ও একটি চিনা পাসপোর্ট। পুলিশই ব্যাগটি তুলে দেন মালিকের হাতে। এমন সততার জন্য বস্টন পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ডেভিস পুরস্কৃতও করেন গ্লেন জেমসকে।
এ হেন মানুষটির জন্য কিছু করতে পেরে দারুণ খুশি ইথেন। সোমবার তহবিলটি খোলার পরেও তর সইছিল না তরুণের। কখন একটু কথা বলার সুযোগ হবে। অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি ক্ষণ। মঙ্গলবারই গ্লেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। ইথেন বলেন, “চিনি না-জানি না এমন কারও জন্য কিছু করার আনন্দই আলাদা। শেষমেশ কথা বলার সুযোগটাও হয়ে গেল।”
চার দিনের মধ্যেই চার হাজার মানুষ সাহায্য করেছে। উঠেছে ১০৫০০০ ডলার। ইথেন ভেবেছিলেন, যদি হাজার পঞ্চাশেক ডলার ওঠে, তা হলেই প্রৌঢ়ের বসবাসের কিছু ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু মিলেছে দ্বিগুণেরও বেশি। শুধু কি তাই! ইথেনের মতে,এ ভাবে চললে ডলারের অঙ্ক ছুঁয়ে যেতে পারে আড়াই লক্ষ। |