যে কাজ করতে গিয়ে দ্বিধায় বিমান বসুর আলিমুদ্দিন, সেই পথেই এক কদম এগিয়ে যাচ্ছেন গৌতম দেব!
সরকার-বিরোধী আন্দোলনের ধার বাড়ানোর পাশাপাশি দলের অন্দরে ঝাড়াই-বাছাই নিয়ে এখন বিস্তর চর্চা সিপিএমে। দলে রদবদলের সেই প্রক্রিয়ার রূপরেখা অনেকটাই ছকে ফেলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। জেলার আওতায় বেশ কিছু জোনাল কমিটির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোচ্ছে তারা। সেই সূত্রেই রদবদল আসতে চলেছে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেও। এবং গৌতমবাবুর জেলা এই কাজ সেরে ফেলতে চাইছে যথাসম্ভব দ্রুত। তার জন্য পুজোর আগেই বসছে জেলা কমিটির বিশেষ বৈঠক।
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের পরিষ্কার যুক্তি, তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামতে গেলে নিজেদের বাহিনী আগে তৈরি থাকা দরকার। তার জন্য বয়সের ভারে সক্রিয়তা হারিয়ে-ফেলা নেতাদের অব্যাহতি দিয়ে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের তুলে আনতে হবে। এলাকায় যাঁদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে, মায়া কাটাতে হবে সেই সব নেতাদেরও। স্থানীয় মানুষের কাছে মূলত পরিচিত মুখ হয় জোনাল ও লোকাল স্তরের নেতাদেরই। সেই কথা মাথায় রেখেই জোনাল স্তরে মুখ বদলের উপরে এ বার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন গৌতমবাবুরা। চিরাচরিত ভাবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম গোষ্ঠী-লড়াইয়ে জর্জরিত। সেই রকম একটি জেলায় লোকসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক ঝাঁকুনি দেওয়ার ‘ঝুঁকি’ নিয়ে গৌতমবাবুর নেতৃত্বে উত্তর ২৪ পরগনা আসলে বর্ধমানের মতো অন্য কয়েকটি জেলার নেতৃত্বকেই বার্তা দিচ্ছে বলে সিপিএমের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। একই সঙ্গে বার্তা থাকছে বিমানবাবুদের জন্যও।
দলীয় সূত্রের খবর, দমদম, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর, দেগঙ্গা-শাসন, বনগাঁ এলাকার বেশ কিছু জোনাল নেতৃত্বে রদবদলের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই রদবদল নিয়ে দলের একাংশে প্রশ্ন এবং ক্ষোভও আছে। কিন্তু বাধার মুখে এ বার থমকে যেতে রাজি নন জেলা নেতৃত্ব। একই ভাবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেও পরিবর্তনের নকশা তৈরি হয়েছে। মূলত বয়সজনিত কারণ দেখিয়েই অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে তিন-চার জন সদস্যকে। পরিবর্তে সম্পাদকমণ্ডলীতে ঢোকার দৌড়ে এগিয়ে রাজারহাট, বাদুড়িয়া ও ভাটপাড়া এলাকার তিন নেতা। এঁরা সকলেই জেলা সিপিএমের অন্দরে এখন জেলা সম্পাদকের কাছের লোক বলেই পরিচিত। জেলা কমিটিতেও আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে কয়েক জনের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম আরও বেশি করে ‘টিম গৌতম’ হয়ে উঠতে পারে।
জেলা স্তরে ভবিষ্যতের কর্মসূচি এবং সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে অক্টোবরের গোড়াতেই বসছে বর্ধিত জেলা কমিটির দু’দিনের বৈঠক। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্যের পাশাপাশি সব জোনালের নেতা এবং কিছু লোকাল কমিটির সম্পাদকদেরও ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তার আগে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীরও দিনভর বৈঠকের কর্মসূচি রয়েছে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সচরাচর সম্মেলন ছাড়া সংগঠনে বড় কোনও রদবদল হয় না। কিন্তু এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু প্রক্রিয়া হাতে নিতে হয়েছে।”
দু’দিন আগেই মাতলা নদীর পাড়ে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়েছিলেন কুলতলির বাসিন্দা তপন পিয়াদা। স্রেফ লাঠি হাতে বাঘের আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরেছেন তিনি। তপনবাবুর একটিই তত্ত্ব: তিনি বুঝেছিলেন, মাটিতে পড়ে গেলে খেল খতম! তাই যে কোনও মূল্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। ওই কাহিনিই এখন ঘুরছে উত্তর ও দক্ষিণ, দুই ২৪ পরগনার সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের মুখে।
উত্তরের এক রসিক নেতার কথায়, “তৃণমূল নেত্রী নিজেকে বাঘের বাচ্চা বলেন। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে যদি ফিরে আসা যায়, বাঘের বাচ্চার সঙ্গে লড়া যাবে না কেন! তবে তার জন্য খাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে হবে! ধরাশায়ী হলে চলবে না। সেই শক্তিটাই অর্জন করা আগে দরকার!” সেই লক্ষ্যেই দাওয়াই এখন সংগঠনে ঝাঁকুনি। |