ভাষাতত্ত্ব অলিম্পিকে কলকাতার সাফল্য
এক অন্য অলিম্পিক। ভাষাতত্ত্বের অলিম্পিক।
সেই অলিম্পিকে হইচই ফেলে দিয়েছে ভারত। আর সেই দলে প্রথম সারিতে রয়েছেন কলকাতার ছাত্ররা।
২১ থেকে ২৭ জুলাই ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টার শহরে বসেছিল একাদশ আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের আসর। পাঁচ সদস্যের ভারতীয় দলে ছিলেন কলকাতার যশ সিংহ এবং প্রচেতস মিত্র। অন্য তিন জন সূচি অগ্রবাল, নিলাই সারদা এবং নারায়ণন সূর্য। দেশের হয়ে যশ জিতেছেন রুপো। নিলাই পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। ভিসা পাওয়ার সমস্যায় শেষ পর্যন্ত প্রচেতসের ম্যাঞ্চেস্টার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু খড়্গপুর আইআইটিতে বসেই ইন্টারনেটে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন তিনি। পেয়েছেন বিশেষ সম্মান।
একাদশ আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডে যশদের মূলত পাঁচটি বিদেশি ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ছিল ২০ নম্বর। সব মিলিয়ে ১০০ নম্বর। ইংরেজি ছাড়া বাকি চারটি ভাষার নামও অনেকে হয়তো শোনেননি। ভাষাগুলি হল ইদিনি, তুন্দ্রা উকাঘির, মুনা, পিরাহা। ২০০৬-এর জনগণনা অনুযায়ী উত্তর কুইন্সল্যান্ডের মাত্র ১৫০ জন কথা বলেন ইদিনি ভাষায়। আমাজনের তীরে এখন প্রায় সাড়ে তিনশো জন আদিবাসী কথা বলেন পিরাহা ভাষায়। রাশিয়ার কিছু লোক কথা বলেন তুন্দ্রা উকাঘির ভাষায়। ইন্দোনেশিয়ার মুনা ও বুটন দ্বীপের ভাষা মুনা। এই রকমই কঠিন কিছু ভাষার শব্দ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন যশরা।
রুপোজয়ী যশ জামশেদপুরের ছেলে। এখন কলকাতার বাসিন্দা। হেরিটেজ স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
কলকাতার যশ সিংহ।—নিজস্ব চিত্র।
টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “ছোটবেলা থেকে ভাষা শেখার অদম্য ইচ্ছাই এই প্রতিযোগিতায় আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। এর পর আমি ভাষাতত্ত্ব নিয়েই পড়ব।” উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু দিন পরেই যশ পাড়ি দেবেন মার্কিন মুলুকে। ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা নিলাই সারদা এখন আমেরিকারই বাসিন্দা।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনার আগ্রহ খুব বেশি চোখে পড়ে না। সেটা যশকে বেশ কষ্ট দেয়। কেন কমছে আগ্রহ?
ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, “এর জন্য স্কুলগুলির দোষ আছে অনেকটাই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভাষাতত্ত্ব বুঝবে এমন আশা করাটা ঠিক নয়। স্কুল স্তরে ভাল করে ব্যাকরণ শেখাতে পারলেই কলেজে ওঠার সময় ভাষাতত্ত্ব পড়বে ছাত্ররা। এই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে আমাদেরই।” তিনি আরও জানিয়েছেন, অন্য ভাষা শেখার ইচ্ছে অনেকেরই থাকে। কলকাতায় অনেক প্রতিষ্ঠানও আছে। যেমন, গোল পার্কের রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। কিন্তু যেটা মাথায় রাখতে হবে, সেটা হল, শহরে ভাষাতত্ত্ব পড়ার সুযোগ খুব কম। কলকাতার বাইরে দিল্লি এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। যশের সাফল্যের কথা শুনে স্বভাবতই খুশি পবিত্রবাবু। যশ ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক। এ কথা শুনে শুভেচ্ছাও জানালেন তিনি। এত দিন লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু যশদের সাফল্যের পরেই ঘটনাচক্রে এ বার ২০১৪ সালে বেজিংয়ে দ্বাদ্বশ আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে কলকাতার ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ। অর্থাৎ কলকাতার ছেলেমেয়েরা চাইলে এই শহরে বসেই অলিম্পিয়াডের বাছাই পর্বের পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরিষদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছর তাঁরা কলকাতায় বেশ কয়েকটি কর্মশালারও আয়োজন করবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.