খাদ্য সুরক্ষার গুরুভার চাপছে। অথচ চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে যথেষ্ট ধান কিনতে না-পারায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অধরা।
এই ব্যর্থতা ঢাকতে রাজ্য সরকার এখন লেভির অতিরিক্ত চাল দিতে বাধ্য করছে চালকল-মালিকদের। ফুঁসে উঠে চালকল-মালিকদের সংগঠন হুমকি দিচ্ছে, এমন হলে রাজ্যের এক হাজার চালকল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে তাদের মোট উৎপাদনের ৫০% লেভি দিতে হয় সরকারকে। এখন তার উপরে অতিরিক্ত চাল দিতে হলে চালকল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকবে না।
চালকল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির কথা জেনে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেছেন, “খাদ্য দফতরের চাহিদামতো লেভি না-দিলে চালকলগুলিতে অভিযান চালানো হবে। খাদ্য দফতরের প্রয়োজনমতো চাল দিতেই হবে মিলগুলিকে।” তাঁর বক্তব্য, অতিরিক্ত চাল লেভি হিসেবে দেওয়ার কথা বলেছেন কলমালিকেরাই। এখন তাঁদের পিছিয়ে আসার জায়গা নেই। |
মন্ত্রী এবং কলমালিকদের এই হুমকি, পাল্টা হুমকির জেরে রাজ্যে ধান-চালের সমস্যা আরও জটিল হবে বলে মনে করছে খাদ্য দফতরের একাংশ। কলমালিকদের কাছে খাদ্য দফতর অতিরিক্ত কত চাল চেয়েছে?
চালকল-মালিক সংগঠনের সভাপতি দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “অতিরিক্ত চার লক্ষ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের ফরমান দিয়েছে খাদ্য দফতর। এবং লেভির চালের মতো অতিরিক্ত চালও চাওয়া হয়েছে সরকার নির্ধারিত দামে।” তাঁর অভিযোগ, এখন খোলা বাজারে এক কুইন্টাল চালের দাম ২২৫০ টাকা। অথচ খাদ্য দফতরকে ১৮৫০ টাকা কুইন্টাল দরে চাল দিতে হয় মালিকদের। তিনি জানান, চালকলগুলি জুলাইয়ে সরবরাহ করা চালের দামই এখনও পায়নি। খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, “ওই টাকা বাকি ছিল ঠিকই। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বরেই সেই টাকা ছেড়ে দিয়েছে। চালকল-মালিকেরা শীঘ্রই টাকা পেয়ে যাবেন।”
কিন্তু সরকারের অতিরিক্ত চাল প্রয়োজন হচ্ছে কেন?
খাদ্য দফতরের কর্তারা জানান, গত শস্য-বছরে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল। তার প্রায় সবটুকুই সংগ্রহ করা গিয়েছিল। এ বার ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হলেও শস্য-বছরের শেষে সংগৃহীত হয়েছে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন।
চাল সংগ্রহে এই ব্যর্থতা কেন?
ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, খাদ্য দফতর এ বার চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার টাকা সময়মতো পাঠাতে পারেনি। অভাব ছিল গুদামেরও। রয়েছে আরও কয়েকটি সমস্যা। তা ছাড়া এ বছর সহায়ক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চাল রফতানির সুযোগ থাকায় অনেক চাষি সরকারকে ধান বিক্রি করেননি। এই অবস্থায় ঘাটতি পূরণ করার জন্যই চালকল থেকে বাকি চার লক্ষ মেট্রিক টন চাল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বছর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-হওয়ায় খাদ্য দফতরের কর্তাদের চিন্তা যে খুবই বেড়েছে, খাদ্য সুরক্ষার তাগিদ তার অন্যতম কারণ। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল অনুযায়ী গড়ে রাজ্যের ৬৭% মানুষকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করতে হলে রাজ্যে বছরে কমপক্ষে ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন চাল লাগবে। এতে ভবিষ্যতে সঙ্কট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। কর্তাদের হিসেব, এখন রাজ্যের রেশন গ্রাহকদের ৭০% এপিএল এবং ৩০% বিপিএল তালিকাভুক্ত। খাদ্য নিরাপত্তা বিল মানলে শহর ও গ্রামের ৬৭% মানুষই সস্তায় চাল-গম পাওয়ার অধিকারী হবেন। |