যাত্রী-সমুদ্র পাড়ি দিতে সরকারি বাস সামান্যই
ছেষট্টি হাজার বনাম বারোশো!
সরকারের হাতে রয়েছে সাকুল্যে ১২০০ বাস। তা-ই দিয়ে বেসরকারি ৬৬ হাজারের মোকাবিলা করতে নামছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র! চোখ কপালে উঠতেই পারে। কিন্তু এটাই সরকারি তথ্য।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিন বেসরকারি বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস। তাতে সামিল হচ্ছে মিনিবাস অপারেটরস কো-অর্ডিনেশন কমিটি। ধর্মঘটের মোকাবিলায় দু’টি দাওয়াইয়ের কথা ঘোষণা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী।
• যে-সব বেসরকারি বাস বেরোবে না, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
• যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকারি বাস রাস্তায় নামানো হবে বিপুল সংখ্যায়।
মদনবাবু বুধবার বলেন, “সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং বিকেলের ব্যস্ততার সময়ে সরকারি বাস থাকবে রাস্তায়। সেই সঙ্গেই বাইরে থেকে চার্টার্ড বাস নিয়ে চালাতে বলা হয়েছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলিকে।” তবে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, মন্ত্রী চার্টার্ড বাস নেওয়ার কথা বললেও এমন কোনও পরিকল্পনার কথা নিগমগুলির জানা নেই।
মন্ত্রীর ঘোষণায় রীতিমতো সংশয়ে রয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। কারণ, বিপুল সংখ্যক বেসরকারি বাসের তুলনায় সরকারি বাসের সংখ্যা সামান্যই। সরকারি তথ্য বলছে, গোটা রাজ্যে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৬৬ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৩০% বাস লোকসানের ঠেলা সামলাতে না পেরে ইতিমধ্যে বসে গিয়েছে। এর মোকাবিলায় সরকারি বাসের অবস্থাটা কী?
সরকারি হিসেব বলছে, রাজ্যে সরকারি পরিবহণ নিগম রয়েছে পাঁচটি। তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাস চালায় সিএসটিসি। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে সিএসটিসি-তে বাস ছিল ৭২৪টি। ২০১২-’১৩ সালে তা কমে হয়েছে ৩৮০। তার মধ্যে আবার অর্ধেকের বেশি বাস ভাঙাচোরা।
বাস কমেছে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)-এও। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে তাদের বাস ছিল ৪৬৪টি। পরের বছরে তা কমে হয়েছে ৪৪১। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একসঙ্গে চারশোর বেশি বাস নামানো যায় না। একই অবস্থা দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমেও। সেখানে বাসের সংখ্যা (৩৫৫) না-কমলেও বেশির ভাগ বাসই জরাজীর্ণ। অন্য দু’টি নিগম কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ (ডব্লিউবিএসটিসি)-এর বাসের সংখ্যা গত এক বছরে সামান্য বাড়লেও পাঁচটি নিগম মিলিয়ে চালানোর মতো বাসের সংখ্যা ১২০০। পরিবহণ-কর্তাদের মতে, এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এই সংখ্যা নিয়ে মন্ত্রী কী করে রাজ্য জুড়ে বাস ধর্মঘটের মোকাবিলা করার কথা বলছেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর দফতরে কর্তারাই। অচল বাস সারিয়ে সংখ্যাটা বাড়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন?
বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের কর্তাদের বক্তব্য, ডিজেল কিনতে প্রতিদিন যে-পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, তার পরে আর বাস মেরামত করার মতো টাকা হাতে থাকে না। তাই দিন-দিন বাসের সংখ্যা কমছে। ডিজেলের দাম যে-হারে বাড়ছে, তাতে আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারি বাসের সংখ্যা আরও কমবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “বেসরকারি বাস তবু ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট করতে পারে। সরকারি নিগমগুলির সেই উপায়ও নেই। তাই রাস্তা থেকে বাস-মিনিবাস উঠে গেলে সরকারি বাসের কঙ্কালসার চেহারাটা টের পাওয়া যায়।” উদাহরণ পাইকপাড়া ডিপো। সেখানে সরকারি বাসের রুট ১৪টি। তার জন্য বাস আছে সাকুল্যে ২০টি!
বেসরকারি বাস ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে না বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট। তাদের হাতে কয়েক হাজার বাস রয়েছে। ওই সংগঠনের নেতারা বলেন, “লোকসান হওয়ায় আমাদেরও অনেক বাস বসে গিয়েছে। বাকি যা আছে, ধর্মঘটের দু’দিন সেগুলোই চালানোর চেষ্টা হবে।” তাঁরাও অবশ্য ধর্মঘট সমর্থন করেন বলে জানান। তবু যে ধর্মঘটে যেতে পারছেন না, তার কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, “শাসক দলের এক নেতা সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকায় ধর্মঘটে সামিল হতে পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.